১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪ মাঘ ১৪৩১, ১৭ রজব ১৪৪৬
`

কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি সই করতে মস্কোয় পেজেশকিয়ান

ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানকে রাশিয়ার বিমানবন্দরে স্বাগত জানান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা : ইন্টারনেট -

ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সমস্যা ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি সই করার জন্য রাশিয়ায় পৌঁছেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। মস্কোর আলেকজান্ডার গার্ডেনের ক্রেমলিন প্রাচীরে অজানা সৈনিকের সমাধিতে ফুল দেয়ার পর পেজেশকিয়ান রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে বৈঠক করবেন। গত বছরের জুলাইয়ে পেজেশকিয়ানের নির্বাচনের পর এটি তাদের তৃতীয় বৈঠক।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, বাণিজ্য ও সামরিক সহযোগিতা থেকে শুরু করে বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ সব ক্ষেত্রে দুই নেতা ‘সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি’ করবেন। ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের আগে এই চুক্তি সই হচ্ছে। তিনি ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
দিমিত্রি পেসকভ ট্রাম্পের অভিষেকের সঙ্গে চুক্তির কোনো ধরনের যোগসূত্র নাকচ করে দিয়ে বলেন, এই চুক্তি সইয়ের পরিকল্পনা অনেক আগেই করা হয়েছিল। গত বছর ইরান উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর ব্রিকস ব্লকে যোগ দেয়। পেজেশকিয়ান কাজানে রাশিয়া আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। অতীতে সম্পর্কের টানাপড়েন থাকা রাশিয়া ও ইরান ১৯৯১ সালে সোভিয়েত পতনের পর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে।
মস্কো তেহরানের জন্য প্রধান বাণিজ্য অংশীদার এবং অস্ত্র ও প্রযুক্তি সরবরাহকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়। এর পর থেকে ইরান যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছে। রাশিয়া ইরানে প্রথম পরমাণুকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। ২০১৩ সালে এটি চালু হয় এবং সেখানে আরো দু’টি পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণ চলছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুতিন ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর পর ইরানের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো বলে আসছে, তেহরান রাশিয়াকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য শত শত বিস্ফোরক ড্রোন সরবরাহ করেছে। যদিও মস্কো ও তেহরান এটি অস্বীকার করেছে।
এর আগে, গত ১৪ জানুয়ারি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছিলেন, ইরান ও রাশিয়া একটি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি সই করতে যাচ্ছে। উত্তর কোরিয়ার সাথে রাশিয়ার সাম্প্রতিক চুক্তির মতো ইরানের সাথে আসন্ন এই চুক্তিতেও কোনো দেশের ক্ষতি হবে না। বরং এটি দুই দেশের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে। তিনি বলেন, আসন্ন চুক্তির লক্ষ্য হচ্ছে অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ও রাশিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা ত্বরান্বিত করা। এই বিস্তৃত চুক্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সামাজিক সমস্যাগুলোও মোকাবেলা করা হবে।
চুক্তির খসড়া তৈরির সময় রাশিয়ায় ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি বলেছিলেন, ইরানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতা সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। চুক্তিতে ‘একটি ভূমিকা এবং ৪৭টি অনুচ্ছেদ’ রয়েছে। সম্প্রতি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছিলেন, এই চুক্তি দুই দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রসহ আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার জন্য আমাদের পক্ষগুলোর প্রতিশ্রুতির রূপরেখা প্রকাশ করবে।
উল্লেখ্য, গত জুনে পিয়ংইয়ংয়ে এক শীর্ষ সম্মেলন শেষে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক কৌশলগত চুক্তি সই করেন। চুক্তিতে সশস্ত্র আক্রমণের ক্ষেত্রে এক দেশ অপর দেশকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement