১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪ মাঘ ১৪৩১, ১৭ রজব ১৪৪৬
`

বিদায়ী ভাষণে ধনিকগোষ্ঠীর প্রভাব নিয়ে হুঁশিয়ারি বাইডেনের

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির কৃতিত্ব দাবি
বিদায়ী ভাষণে ধনিকগোষ্ঠীর প্রভাব নিয়ে হুঁশিয়ারি বাইডেনের -

জো বাইডেন কয়েক দশকের রাজনৈতিক জীবনের ইতি টানার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেয়া শেষ ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রে ‘বিপজ্জনক’ ধনিকগোষ্ঠী প্রভাব বাড়াচ্ছে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। বুধবার দেয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘আমেরিকায় আজ চরম ধনী, ক্ষমতাশালী ও প্রভাব বিস্তারকারীদের একটি অলিগার্কি বা গোষ্ঠীতন্ত্র আকার নিচ্ছে যেটা আমাদের সমগ্র গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার ওপর সত্যিকারের হুমকি সৃষ্টি করছে’।
খবর অনুসারে, এই ভাষণের মাধ্যমে ৮২ বছর বয়সী বাইডেন মূলত অতি ধনী ‘টেক-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সকে এক হাত নিয়েছেন, যারা মার্কিন নাগরিকদের ওপর অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতার প্রয়োগ করতে পারে বলে তার আশঙ্কা। হোয়াইট হাউজ থেকে টেলিভিশনে দেয়া এই শেষ ভাষণে বাইডেন জলবায়ু পরিবর্তন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়া নিয়েও সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ওভাল অফিস থেকে দেয়া ভাষণে বিদায়ী এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার এক মেয়াদে নতুন চাকরি সৃষ্টি, অবকাঠামো ব্যয়, স্বাস্থ্যসেবা, যুক্তরাষ্ট্রকে মহামারী থেকে বের করে আনা ও দেশকে আগের তুলনায় আরো নিরাপদ করে তোলাসহ যা যা তার প্রশাসন করেছে সেগুলোর গুণগান করেন। এ ডেমোক্রেট নেতা বলেছেন, ‘আমরা সবাই মিলে যা করেছি তার পুরো প্রভাব অনুভূত হতে সময় লাগবে, কিন্তু বীজ বপন করা হয়ে গেছে, এবার সেগুলো বিকশিত হবে এবং আসছে দশকগুলোতে এগুলো প্রস্ফূটিত হবে’।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরবর্তী প্রশাসনের জন্য শুভকামনা জানালেও পরে একাধিক সতর্কবার্তাও দিয়েছেন তিনি, বলেছেন, ‘অনেক কিছুই এখন ঝুঁকির মুখে রয়েছে।’ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘ক্ষমতা ও মুনাফাসংক্রান্ত স্বার্থ হাসিলে প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো তাদের অনিয়ন্ত্রিত প্রভাব খাটিয়ে জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় আমরা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি সেগুলো নির্মূল করতে চায়।’
বাইডেন বলেছেন, ‘ভুলতথ্য ও অপতথ্যের বরফখণ্ডের নিচে চাপা পড়ছে আমেরিকানরা, যা ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে’। মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট মেটার মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোর কঠোর সমালোচনাও করেছেন। তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফ্যাক্ট-চেকিং বা তথ্যের সত্যতা নিশ্চিতের দায়িত্ব থেকে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে। এতে ক্ষমতা এবং মুনাফার জন্য বলা মিথ্যাগুলো সত্যকে চাপা দিতে পারবে’।
অতি-ধনী ‘টেক-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের’ প্রতি তার এ আক্রমণ মূলত ইলন মাস্কের মতো সিলিকন ভ্যালির প্রধান নির্বাহীদের প্রতি আক্রমণ বলেই মনে করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের শীর্ষ ধনী মাস্কের সাথে ট্রাম্পের সখ্যতা রয়েছে; রিপাবলিকান এ প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে অঢেল অর্থও ঢেলেছেন মাস্ক। জেফ বেজোস ও মার্ক জাকারবার্গের মতো প্রযুক্তি জগতের অন্য কর্ণধাররাও হোয়াইট হাউসে ফেরার আগেই ট্রাম্পের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভাষণের শেষ পর্যায়ে বাইডেন আমেরিকানদের নিজ দেশের ‘অতন্দ্র প্রহরী’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দিন কয়েক পরই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার ভাষণ শুরুই করেছিলেন ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে হওয়া ‘যুদ্ধবিরতি’ চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে। বুধবার ভাষণের আগেই এই চুক্তির ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। বাইডেন এই চুক্তির আলোচনাকে তার ক্যারিয়ারের অন্যতম কঠিন কাজ বলে উল্লেখ করেছেন, মেয়াদ শেষের আগেই চুক্তি সম্পন্ন করতে পারার কৃতিত্বও দাবি করেছেন তিনি।
চুক্তি অনুসারে ১৯ জানুয়ারি থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, এর একদিন পরই হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব নেবেন ট্রাম্প। নবনির্বাচিত এই প্রেসিডেন্টও অবশ্য চুক্তির কৃতিত্ব নিতে ছাড়েননি। বলেছেন, নভেম্বরের নির্বাচনে তিনি জিতেছেন বলেই এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement