মণিপুরে আসাম রাইফেলসের ক্যাম্পে জনতার হামলা

স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে হেনস্তার অভিযোগে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আধাসামরিক বাহিনী আসাম রাইফেলসের একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে ভাঙচুরের পর সেটি জ্বালিয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। শনিবার দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যের কামজং জেলার কাসোম খুললেন মহকুমার হংবেই এলাকায় ঘটেছে এ ঘটনা। কামজং জেলাটি নাগা উপজাতি অধ্যুষিত।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, শনিবার হংবেই এলাকায় বাড়ি তৈরির জন্য কাঠ কেটে নিয়ে যাচ্ছিলেন স্থানীয় কয়েকজন লোক। তাদের কাঠবোঝাই গাড়িটি আটক করেন অসম রাইফেলসের জওয়ানরা।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে অল্প সময়ের মধ্যে কয়েক শ’ মানুষ হংবেইয়ে আসাম রাইফেলসের অস্থায়ী হামলা চালায় এবং ভাঙচুর-লুটপাট শেষে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়। একের পর এক টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে আসাম রাইফেলসের সদস্যরা একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দিতে সক্ষম হন। হামলায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানা গেছে।
এ দিকে একই দিন মণিপুরের কাংপোকপি জেলার গেলজাং মহকুমার একাংশে কারফিউ জারি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না-আসা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে। তবে কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত, তা অবশ্য খোলসা করা হয়নি। কেবল বলা হয়েছে, জীবন এবং সম্পত্তির নিরাপত্তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। প্রসঙ্গত, কাংপোকপির পাহাড়ি এলাকা থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকে সরানোর দাবি তুলে আসছে কুকি জনজাতির মানুষরা।
বিভিন্ন জাতি ও জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত রাজ্য মণিপুরে দাঙ্গা-সঙ্ঘাতের শুরু ২০২৩ সালের মে মাস থেকে। দীর্ঘ সময় রাজ্যের দুই বৃহত্তর জাতিগোষ্ঠী হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী কুকিদের মধ্যে থাকলেও বর্তমানে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীও জড়িয়ে পড়ছে এই দাঙ্গায়। ২০২৩ সালের ৬ মে রাজ্যের সংখ্যাগুরু মেইতেই জাতিগোষ্ঠীকে ‘তফসিলি’ জাতি হিসেবে ঘোষণা করে মণিপুর হাইকোর্ট। সেই সাথে ভারতের সংবিধান অনুসারে সরকারি চাকরি এবং ভারতের জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মেইতেইদের জন্য কোটা ব্যবস্থা চালুর নির্দেশও দেন আদালত।
আদালতের এই আদেশে ক্ষুব্ধ হয় রাজ্যটির সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী কুকি এবং সেই দিন থেকেই প্রতিবাদ শুরু হয় রাজধানী ইম্ফলসহ বিভিন্ন এলাকায়। সেই প্রতিবাদ অল্পসময়ের মধ্যেই জাতিগত সঙ্ঘাতে রূপ নেয় মণিপুরজুড়ে। দাঙ্গা-সঙ্ঘাতের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মণিপুরে নিহত হয়েছেন আড়াই শতাধিক। সেই সাথে বাড়িঘর হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরো কয়েক হাজার মানুষ।