ইউক্রেনে উ. কোরিয়ার ২ সেনা আটক
- রয়টার্স ও বিবিসি
- ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
রাশিয়ার কুরস্ক ওব্লাস্ট অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনারা যুদ্ধবন্দী হিসেবে উত্তর কোরিয়ার দুই আহত সেনাকে আটক করেছে বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ওই দুইজনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তারা কিয়েভে ইউক্রেনের সুরক্ষা পরিষেবা (এসবিইউ) গোয়েন্দা সংস্থার হেফাজতে রয়েছেন। জেলেনস্কি বলেন, উত্তর কোরিয়ানদের আটক করার জন্য তিনি ইউক্রেনীয় প্যারাট্রুপার এবং স্পেশাল অপারেশন ফোর্সের সৈন্যদের প্রতি ‘কৃতজ্ঞ’। এ কাজ সহজ ছিল না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ না রাখতে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সেনারা সাধারণত আহত উত্তর কোরিয়ানদের মেরে ফেলে।’ ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, ৯ জানুয়ারি ওই বন্দীদের আটক করা হয়। এরপর পরই ‘জেনেভা কনভেনশন’ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেয়া হয় এবং কিয়েভে নিয়ে যাওয়া হয়। ‘আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী তাদের যথাযথ অবস্থায় রাখা হয়েছে।’ গোয়েন্দা সংস্থাটি বলছে, ওই বন্দীরা ইউক্রেনীয়, ইংরেজি বা রুশ ভাষায় কথা বলতে পারে না। ‘তাই দক্ষিণ কোরিয়ার এনআইএসের (ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস) সহযোগিতায় কোরীয় দোভাষীর মাধ্যমে তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।’
টেলিগ্রাম ও এক্স-এ পোস্ট করা বিবৃতিতে জেলেনস্কি বলেছেন, ওই সেনাদের সাথে এসবিইউ তদন্তকারীদের কথা হয়েছে। আটক কোরিয়ানদের সাথে সাংবাদিকদের কথা বলার সুযোগ দিতে এসবিইউকে নির্দেশ দেয়ার কথাও বলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘যা ঘটছে, সে বিষয়ে সত্য জানা দরকার বিশ্বের।’ জেলেনস্কি তার বিবৃতির পোস্টে চারটি ছবি জুড়ে দিয়েছেন। দু’টিতে আহত ব্যক্তিদের দেখা যাচ্ছে। একটি ছবিতে রয়েছে রুশ সামরিক বাহিনীর লাল রঙের আইডি কার্ড। ওই নথিতে জন্মস্থান হিসেবে তুভা প্রজাতন্ত্রের তুরানকে দেখানো হয়েছে, যা মঙ্গোলিয়ার পাশে।
ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, বন্দীদের ধরার সময় এক সেনার কাছে তুভা প্রজাতন্ত্রে নিবন্ধিত এক ব্যক্তির নামে রাশিয়ার সামরিক পরিচয়পত্র ছিল। অন্য জনের কাছে কোনো কাগজপত্র ছিল না। আইডি কার্ডধারী ওই সেনা জিজ্ঞাসাবাদের সময় বলেছেন, ২০২৪ সালের শরতে রাশিয়ায় ওই কার্ড ইস্যু করা হয়েছিল তার জন্য। ওই সময় উত্তর কোরিয়ার কয়েকটি কমব্যাট ইউনিটের এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণ ছিল। গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, ওই বন্দী ২০০৫ সালে জন্ম নেন এবং ২০২১ সাল থেকে রাইফেলম্যান হিসেবে উত্তর কোরিয়ায় কর্মরত ছিলেন।
এসবিইউর ভাষ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় বন্দী তার চোয়ালে আঘাত লাগার কারণে লিখিতভাবে কিছু উত্তর দিয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থাটি বলেছে, তাদের ধারণা- এ বন্দীর জন্ম ১৯৯৯ সালে, যিনি ২০১৬ সাল থেকে স্কাউট স্নাইপার হিসেবে উত্তর কোরিয়ায় কর্মরত ছিলেন। জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, বন্দীরা বোঝে এমন ভাষায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ পরিচালিত হওয়া উচিত। সেইসাথে বন্দীদের অবশ্যই উৎসুক জনতা থেকে রক্ষা করতে হবে।
জেলেনস্কির কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘তারা যে উত্তর কোরিয়ার সেনা, এ বিষয়টি আড়ালের চেষ্টা হিসেবে রাশিয়ানরা তাদেরকে তুবা মস্কোর নিয়ন্ত্রণাধীন অন্যান্য অঞ্চলের জন্মগ্রহণকারী বলে নথিতে দেখিয়েছে। কিন্তু এ ব্যক্তিরা আসলে কোরিয়ান, তারা উত্তর কোরিয়ার।’ ২০১৪ সালে ইউক্রেনে অভিযানের সময় রুশ বাহিনীকে ইউনিফর্মে শনাক্ত চিহ্ন না দিয়েই পাঠানো হয়েছিল। যদিও ক্রেমলিন এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
গত বছর রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উত্তর কোরীয় সেনাদের ব্যবহার করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা অস্বীকার করেননি। তার ভাষ্য, এটা রাশিয়ার ‘সার্বভৌম সিদ্ধান্ত’। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা গেল ডিসেম্বরে দাবি করেছিল, উত্তর কোরিয়ার এক সেনা ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে জীবিত অবস্থায় ধরা পড়ার পর মারা গেছেন। হোয়াইট হাউস দাবি করেছে, রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেন যুদ্ধে নেমে উত্তর কোরিয়ার বাহিনী ব্যাপকভাবে হতাহতের মুখে পড়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা