০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১, ৫ রজব ১৪৪৬
`

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতারে ব্যর্থ তদন্তকারীরা

কয়েক ঘণ্টার নাটকীয়তা
-

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে গ্রেফতারে ব্যর্থ হয়েছেন দেশটির তদন্তকারীরা। গত মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারির ব্যর্থ প্রচেষ্টার ঘটনায় গতকাল শুক্রবার সকালে ইউনকে গ্রেফতার করতে প্রেসিডেন্টের বাসভবন কমপ্লেক্সে যান দেশটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি তদন্ত কার্যালয়ের (সিআইও) কর্মকর্তারা। তাদের সাথে ছিল পুলিশ।
ইউনকে গ্রেফতারে বাধা দেয় প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনী (প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস-পিএসএস)। এ ছাড়া সেনাসদস্যরাও বাধা হয়ে দাঁড়ান। অন্য দিকে ইউনের গ্রেফতার ঠেকাতে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের বাইরে অবস্থান নেন তার শত শত সমর্থক। ইউনকে গ্রেফতারের প্রচেষ্টা ঘিরে নাটকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে অচলাবস্থা চলে। পরে তদন্তকারীরা গ্রেফতার প্রচেষ্টা থেকে সরে আসেন। তারা প্রেসিডেন্টের বাসভবন কমপ্লেক্স ত্যাগ করেন। তদন্তকারীরা চলে গেলে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের বাইরে অবস্থান নেয়া ইউনের সমর্থকেরা উল্লাস করেন। তারা স্লোগানে স্লোগানে বলেন, ‘আমরা জয়ী হয়েছি।’
তদন্তকারীরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, অচল পরিস্থিতির কারণে গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করাটা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনি প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যানের মনোভাব দেখতে পেয়েছে তারা, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। গত ৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করেছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন। কিন্তু তীব্র প্রতিবাদের মুখে ছয় ঘণ্টার মাথায় তা প্রত্যাহারে বাধ্য হন তিনি। সামরিক আইন জারির জেরে প্রেসিডেন্ট ইউন গত ১৪ ডিসেম্বর পার্লামেন্টে অভিশংসিত হন। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দেশটির সাংবিধানিক আদালত যদি ইউনের অভিশংসন বহাল রাখেন, তাহলে তাকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে অপসারণ করা যাবে। তদন্তকারীরা ইউনের সামরিক আইন জারির বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিদ্রোহ উসকে দেয়ার অভিযোগে তদন্তকারীদের সামনে হাজির হতে তিনি একাধিকবার অস্বীকৃতি জানান। এরপর গত ৩১ ডিসেম্বর ইউনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন দেশটির একটি আদালত। ইউনের আইনি দল এই গ্রেফতারি পরোয়ানাকে ‘বেআইনি’ বলে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, গ্রেফতারি পরোয়ানাকে চ্যালেঞ্জ করা হবে। গ্রেফতারি পরোয়ানার মেয়াদ আছে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। ইউনকে গ্রেফতারে তদন্তকারীরা ব্যর্থ হওয়ার পর ঠিক কী হবে, তা স্পষ্ট নয়। তবে পরোয়ানার মেয়াদের মধ্যে তদন্তকারীরা ইউনকে গ্রেফতারে আবার চেষ্টা করতে পারেন। এই মেয়াদকালের মধ্যে তাকে গ্রেফতার করা না গেলে তারা নতুন করে পরোয়ানা জারির আবেদন জানাতে পারেন।
সামরিক আইন জারির ঘটনায় সেনাপ্রধানসহ ২ কমান্ডার অভিযুক্ত
এ দিকে বিবিসি জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারির ঘটনায় দেশটির দুই সামরিক কমান্ডারকে অভিযুক্ত করেছেন প্রসিকিউটররা। অভিযুক্ত দুই উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা হলেন সেনাপ্রধান পার্ক আন-সু ও সেনাবাহিনীর বিশেষ ইউনিটের কমান্ডার কেয়াক জং-জিউন। বিদ্রোহ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে এই দুই সামরিক কমান্ডারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা কারাগারে আছেন। কারাগারেই তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
গত ৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করেছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। কিন্তু জনগণের তীব্র প্রতিবাদের মুখে ৬ ঘণ্টার মাথায় তা প্রত্যাহারে বাধ্য হন তিনি। সামরিক আইন জারির পর সামরিক আইন কমান্ডার (মার্শাল ল কমান্ডার) হিসেবে সেনাপ্রধান পার্ক আন-সুর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। অন্য দিকে কেয়াক জং-জিউনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার অধীন বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের পার্লামেন্ট ভবনে পাঠিয়েছিলেন।
সামরিক আইন জারির জেরে প্রেসিডেন্ট ইউন গত ১৪ ডিসেম্বর পার্লামেন্টে অভিশংসিত হন। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দেশটির সাংবিধানিক আদালত যদি ইউনের অভিশংসন বহাল রাখেন, তাহলে তাকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে অপসারণ করা যাবে। তদন্তকারীরা ইউনের সামরিক আইন জারির বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন।


আরো সংবাদ



premium cement