তুরস্কের লক্ষ্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা : এরদোগান
- আনাদোলু এজেন্সি
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। বিশেষত সিরিয়ার ক্ষেত্রে। গতকাল বুধবার আঙ্কারায় জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে পার্টি) এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
এরদোগান বলেন, ‘যখনই আমরা (সিরিয়ার) আলেপ্পো, দামেস্ক, হামা, হোমস, দারা এবং মানবিজে স্বাধীন সিরিয়ার পতাকা আমাদের অর্ধচন্দ্র ও তারকা খচিত পতাকার পাশে দেখি, আমরা আনন্দিত হই।’
সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসী সংগঠন পিকেকেকে (চকক) নির্মূল করব। যারা আমাদের ও আমাদের কুর্দি ভাইবোনদের মধ্যে রক্তের দেয়াল গড়ার চেষ্টা করছে, তাদের আমরা ভেঙে ফেলব।’
পিকেকে গোষ্ঠীটি মূলত সিরিয়া ও ইরাকে সক্রিয়। দীর্ঘদিন ধরে তুরস্কের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি। এদের আক্রমণে গত কয়েক দশকে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। তুরস্ক এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নির্মূল করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলেও উল্লেখ করেন এরদোগান। তুর্কি প্রেসিডেন্ট সেই সাথে জোর দিয়ে বলেন, ‘তুরস্ক তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং তাদের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করতে বদ্ধপরিকর।’
তুরস্কের এই উদ্যোগ সিরিয়ার রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে হায়াত তাহরির আল-শাম এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে নতুন প্রশাসনিক পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সঙ্ঘাত এড়াতে শারার চুক্তি
সিরিয়ায় হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে পতন হয়েছে ৫৪ বছরের আসাদ শাসনামালের। এবার দেশটিতে গঠন হচ্ছে নতুন সরকার। নিজেদের বিদ্রোহী অতীতকে সরিয়ে রেখে সিরিয়ার কার্যত নেতা আহমদ আল-শারা সরকার গঠনে সমর্থন চাচ্ছেন সব বিদ্রোহী গোষ্ঠীর। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার গোষ্ঠীগুলোর নেতাদের সাথে একটি চুক্তি করেছেন তিনি। এদের মধ্যে সঙ্ঘাত এড়াতে শারার এই উদ্যোগ।
বুধবার রয়টার্সের এক খবরে জানা যায়, এ চুক্তি অনুযায়ী সব গোষ্ঠী ভেঙে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একত্রিত করা হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মুরহাফ আবু কাসরাকে। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-বাশির বলেছিলেন, সাবেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং বাশার আল-আসাদের সেনাবাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া কর্মকর্তাদের নিয়ে মন্ত্রণালয়কে পুনর্গঠন করা হবে। এর আগে গত রোববার শারা জানান, রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোনো অস্ত্র থাকতে দেয়া হবে না।
সিরিয়ার ঐতিহাসিক জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে রয়েছে মুসলিম কুর্দি ও শিয়া সম্প্রদায়, যারা গৃহযুদ্ধ চলাকালে আশঙ্কা করেছিল, ভবিষ্যতে কোনো সুন্নি ইসলামী শাসন তাদের জীবনযাত্রার ওপর হুমকি হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়াও রয়েছে - সিরিয়াক, গ্রিক ও আর্মেনীয় অর্থোডক্স খ্রিষ্টান ও দ্রুজ সম্প্রদায়।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা থেকে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, শারার সাথে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রধানরা বসে আছেন। তবে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার কুর্দি বাহিনীর কোনো প্রতিনিধি সেখানে ছিলেন না।
যদিও শারা জানান, কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। এর আগে গত সপ্তাহে হায়াত তাহরির আল-শামের সামরিক প্রধান এএফপিকে বলেন, কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোকে নতুন নেতৃত্বের অধীনে একীভূত করা হবে এবং ‘সিরিয়াকে বিভক্ত করা হবে না’। পশ্চিমা কর্মকর্তাদের সাথে আলাপকালে শারা জানান, তার নেতৃত্বাধীন ইসলামী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) তাদের প্রাক্তন শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে না বা কোনো ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে দমন করবে না। তিনি পশ্চিমা কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করেন, তার প্রধান লক্ষ্য হলো পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করা এবং তিনি কোনো নতুন সঙ্ঘাতে জড়াতে আগ্রহী নন।
একসময় এইচটিএস সহিংসতা এবং শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা আরো বাস্তবধর্মী ও নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। এইচটিএস এখনো জাতিসঙ্ঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের কাছে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত। তবে দেশগুলোর সাথে ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক সম্পর্ক বলে দিচ্ছে শিগগিরই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে। গত শুক্রবার বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয়া এইচটিএস নেতা আহমদ আল-শারার মাথার দাম হিসেবে এক কোটি ডলারের পুরস্কারের ঘোষণাটি বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ৮ ডিসেম্বর দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেয় সিরীয় বিদ্রোহীরা। তারপরই ১৩ বছরের শাসনামল ফেলে দেশত্যাগ করে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন বাশার আল-আসাদ।
তুরস্ক থেকে ফিরেছে ২৫ হাজারের বেশি সিরীয়
এইচটিএস বিদ্রোহীরা বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করার পর থেকে ২৫ হাজারের বেশি সিরীয় নাগরিক তুরস্ক থেকে দেশে ফিরেছে মঙ্গলবার তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়ারলিকায়া এ কথা জানিয়েছেন। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে প্রায় ত্রিশ লাখ সিরীয় নাগরিক পালিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নেয়। এ শরণার্থীরা প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সরকারের জন্য একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আলী ইয়ারলিকায়া সরকারি বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে বলেন, গত ১৫ দিনে সিরিয়ায় ফিরে আসা মানুষের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সিরিয়ার নতুন নেতাদের সাথে আঙ্কারার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তুরস্ক এখন সিরিয়ার শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের দিকে মনোনিবেশ করছে।