২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সূর্যের সবচেয়ে কাছে পৌঁছানোর চেষ্টায় নাসার মহাকাশযান

-


যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তৈরি একটি মহাকাশযান সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে ইতিহাস গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। ‘পার্কার সোলার প্রোব’ নামের এই মহাকাশযান সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে চলেছে। এ মুহূর্তে তীব্র তাপমাত্রা এবং বিকিরণ সহ্য করছে যানটি। জ্বলন্ত আর উত্তপ্ত সূর্যের কাছ ঘেঁষে যাওয়ার এই সময়ে মহাকাশযানটি কয়েকদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে। আর বিজ্ঞানীরা একটি সঙ্কেতের অপেক্ষায় থাকবেন।
২৮ ডিসেম্বর গ্রিনিচ মান সময় ০৫:০০টায় পাওয়া যেতে পারে এ সঙ্কেত। সেটি এলেই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারবেন মহাকাশযানটি সূর্যের কাছাকাছি গিয়ে টিকে থাকতে পেরেছে কি না। সূর্য কিভাবে কাজ করে তা আরো ভালোভাবে বুঝতে এ অভিযান সহায়ক হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। নাসার বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. নিকোলা ফক্স বিবিসি-কে বলেন, “শত শত বছর ধরে মানুষ সূর্য নিয়ে গবেষণা করে আসছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে ভ্রমণ না করা পর্যন্ত একটি জায়গার পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব না। সেকারণে আমরা সূর্যের বায়ুমণ্ডল ঘুরে না আসা পর্যন্ত সে সম্পর্কে ধারণা করতে পারব না।’

‘পার্কার সোলার প্রোব’ ২০১৮ সালে সৌরজগতের কেন্দ্রভাগ অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। যানটি ইতোমধ্যে ২১ বার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে এর আরো কাছাকাছি পৌঁছেছে। তবে এবার মহাকাশযানটি সূর্যের সবচেয়ে কাছে যাওয়ার নতুন রেকর্ড গড়ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। খবর অনুসারে, মহাকাশযানটি সূর্য পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩৮ লাখ (৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন) মাইল দূরে রয়েছে। এই দূরত্ব সূর্যের খুব বেশি কাছের না হলেও নাসার বিজ্ঞানী নিকোলা ফক্স বিষয়টিকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন।

তিনি বলেন, ‘পৃথিবী থেকে সূর্য তিন কোটি ৯০০ (৯৩ মিলিয়ন) মাইল দূরে। যদি সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্ব এক মিটার ধরা হয়, তবে মহাকাশযান ‘পার্কার সোলার প্রোব’ সূর্য থেকে মাত্র চার সেন্টিমিটার দূরে রয়েছে।’ মহাকাশযানটিকে ১৪,০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং বিকিরণ সহ্য করতে হচ্ছে। তবে এই তাপমাত্রায় যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রে ত্রুটি দেখা দিতে পারে। তবে মহাকাশযানটি ৪ দশমিক ৫ ইঞ্চি পুরু কার্বন-যৌগিক আবরণ দিয়ে সুরক্ষিত। আর মহাকাশযানটির বৈশিষ্ট্য হল দ্রুত ঢুকে আবার বের হয়ে যাওয়া।

প্রকৃতপক্ষে, এটি মানুষের তৈরি যেকোনো বস্তর চেয়ে দ্রুতগতিতে চলবে। প্রতি ঘণ্টায় মহাকাশযানটি চার লাখ ৩০ হাজার মাইল পথ পাড়ি দিচ্ছে। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, লন্ডন থেকে নিউ ইয়র্ক পর্যন্ত পৌঁছতে এটির ৩০ সেকেন্ডেরও কম সময় লাগবে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, মহাকাশ যানটি সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল ‘করোনা’ অতিক্রম করার সময় দীর্ঘ দিনের রহস্য সমাধান করতে পারবে। ওয়েলসের ফিফথ স্টার ল্যাবসের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. জেনিফার মিলার্ড বলেন, ‘বায়ুমণ্ডল আসলেই প্রচণ্ড গরম। কিন্তু কেন, সে সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই।’
সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৬,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারো বেশি। কিন্তু সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডলে থাকা করোনার এমনও কিছু অংশ রয়েছে, যেখানের তাপমাত্রা মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই রহস্যের সমাধানও জানতে চান বিজ্ঞানীরা। তা ছাড়া এই মিশনটি বিজ্ঞানীদের সৌর বায়ুকে আরো ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করবে। করোনার মধ্য থেকে বের হওয়া চার্জযুক্ত কণার প্রবাহ পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে আকাশে ঝলমলে অরোরা সৃষ্টি করে।

তবে মহাকাশের এই আবহাওয়া পাওয়ার গ্রিড, ইলেকট্রনিক্স এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। ড. মিলার্ড বলেন, “পৃথিবীতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য সূর্য, এর কার্যকলাপ, মহাকাশের আবহাওয়া, সৌর বায়ু বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” চারপাশের সবাই যখন বড়দিন উদযাপন করবে তখন নাসার বিজ্ঞানীরা মহাশযানটি নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকবেন। বিজ্ঞানী নিকোলা ফক্স বলেছেন, মহাকাশযানটি সঙ্কেত পাঠালে এই মিশনের সদস্যরা তাকে একটি সবুজ হৃদয়ের ইমোজি পাঠিয়ে প্রোবটির অবস্থান জানান দেবেন।
ফক্স স্বীকার করেছেন, এই দুঃসাহসী অভিযান নিয়ে তিনি যথেষ্ট চিন্তিত। তবে দলের উপর তার বিশ্বাস রয়েছে। তিনি আরো বলেন, “আমি মহাকাশযান নিয়ে চিন্তা করছি ঠিকই। তবে আমরা সত্যিই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো করেই সব ব্যবস্থা করেছি। এটি অত্যন্ত শক্তিশালী একটি মহাকাশযান।” খবর অনুসারে, এবারের মত মহাকাশযানটি যদি বেঁচে যায় তবে এটি ভবিষ্যতে সূর্যের চারপাশে মিশন চালিয়ে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement