শিগগিরই ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরাবেন ট্রাম্প
- রয়টার্স
- ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনেই যাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে সই করতে পারেন, সেই প্রস্তুতি চলার খবর দিয়েছেন একজন স্বাস্থ্য আইন বিশেষজ্ঞ। ওয়াশিংটনের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল হেলথের অধ্যাপক এবং ডাব্লিউএইচও কলাবোরেটিং সেন্টারের পরিচালক লরেন্স গোস্টিন বলেছেন, “উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই আমি খবরটা পেয়েছি। তিনি (যুক্তরাষ্ট্রকে) প্রত্যাহার করার পরিকল্পনা করছেন, সম্ভবত দায়িত্বের প্রথম দিন বা একেবারে শুরুর দিকেই।”
এর আগে ফিনান্সিয়াল টাইমস দুইজন বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে ট্রাম্পের ওই পরিকল্পনার খবর দিয়েছিল। ট্রাম্পের ট্রানজিশন দল এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমালোচনা করে আসছেন দীর্ঘ দিন ধরেই। জাতিসঙ্ঘের এ সংস্থা থেকে সরে আসার পরিকল্পনা তিনি বাস্তবায়ন করলে তা হবে মার্কিন বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নীতিতে একটি বড় পরিবর্তন। মহামারীর মতো দুর্যোগ মোকাবেলার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা থেকে ওয়াশিংটনকে তা আরো বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর শীর্ষপদে ট্রাম্প যাদের মনোনীত করেছেন, তাদের কয়েকজন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কড়া সমালোচক। ট্রাম্পের স্বাস্থ্যমন্ত্রী যিনি হচ্ছেন, সেই রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র ভ্যাকসিনবিরোধী হিসেবে পরিচিতি। সিডিসি ও এফডিএসহ যুক্তরাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ন্ত্রণ তার মন্ত্রণালয়ের হাতেই থাকবে। আগের মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ই ২০২০ সালে ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু তার উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছয় মাসের মাথায় সেই সিদ্ধান্ত উল্টে দেন।
ট্রাম্পের অভিযোগ, কোভিড-১৯ এর প্রাথমিক বিস্তারের জন্য চীনকে অভিযুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তিনি বারবার এ বিশ্ব সংস্থাকে ‘বেইজিংয়ের পুতুল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং নিজের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রাম্পের সম্ভাব্য এই পদক্ষেপ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি ডব্লিউএইচওর মুখপাত্র। তবে তিনি এ বিষয়ে গত ১০ ডিসেম্বর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রেয়াসুসের মন্তব্যের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
ওই ব্রিফিংয়ে মহাপরিচালককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ট্রাম্প প্রশাসন যে ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিতে চায়, সে বিষয়ে তিনি উদ্বিগ্ন কি না। তেদ্রোস সে সময় বলেছিলেন, ওই ‘ট্রানজিশনের’ জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সময় দিতে হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। যুক্তরাষ্ট্র ২০২৫ সালের মে মাসের মধ্যে মহামারী চুক্তি চূড়ান্ত করতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করা হলে তা বিশ্বব্যাপী রোগ বিস্তারের ওপর নজরদারি এবং জরুরি সাড়াদানের ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেবে।
গোস্টিন বলেন, “সে রকম হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র তার প্রভাব হারাবে। সেই শূন্যতা পূরণ করবে চীন। আমি শক্তিশালী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ছাড়া একটি বিশ্ব কল্পনা করতে পারি না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার ডব্লিউএইচওকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করে দেবে।”