২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ইসরাইলের নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্য নন নেতানিয়াহু : সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী

-

টানা ১৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। বর্বর সেই আগ্রাসনে নিহত হয়েছেন ৪৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। তবে এরপরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে পরাজিত করতে পারেনি দেশটি। এমন অবস্থায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা করেছেন দেশটির সাবেক এক প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
গতকাল শুক্রবার সাবেক ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ বলেছেন, ইসরাইলের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য নেতানিয়াহু “যোগ্য ব্যক্তি নন”। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু “ইহুদি জনগণের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য সঠিক ব্যক্তি নন” বলে মন্তব্য করেছেন তিনি ।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, “নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী আছেন ঠিকই, কিন্তু তিনি ইসরাইলি সমাজের মতো একটি সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য উপযুক্ত নন। ইসরাইল রাষ্ট্র এবং ইসরাইলি সমাজ একটি ভিন্ন নেতৃত্ব পাওয়ার যোগ্য।”
গাজায় ইসরাইলি বন্দীদের মুক্ত করার জন্য বন্দী বিনিময় চুক্তিতে আলোচনা করতে অস্বীকার করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের জন্য নেতানিয়াহু তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন। গত কয়েক মাস ধরে গাজায় আটক ইসরাইলি বন্দীদের পরিবার একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য নেতানিয়াহুর সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। এমনকি বিরোধী নেতারা এবং বন্দীদের পরিবার নেতানিয়াহুকে ক্ষমতায় নিজের অবস্থান বজায় রাখার জন্য চুক্তিতে বাধা দেয়ার অভিযোগও তুলেছে। অন্য দিকে জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচসহ বেশ কিছু উগ্র ডানপন্থী মন্ত্রী যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে কোনো চুক্তিতে সম্মত হলে জোট থেকে সরে যাওয়ার এবং সরকারের পতন ঘটানোর হুমকি দিয়েছেন।
এ ছাড়া নেতানিয়াহু ঘুষ গ্রহণের পাশাপাশি বিশ্বাসভঙ্গের সাথে যুক্ত তিনটি হাই-প্রোফাইল মামলায় দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখিও হয়েছেন। এই মামলাগুলোতে নেতানিয়াহুর বিচার ২০২০ সালে শুরু হয়েছিল এবং এখনো চলমান রয়েছে। যদিও নেতানিয়াহু এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন, তাকে পদ থেকে অপসারণের লক্ষ্যে এটি একটি রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো লক্ষাধিক মানুষ। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। ইসরাইল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
পদত্যাগ করতে পারেন ইসরাইলের সেনাপ্রধান
গত বছর হামাসের নজিরবিহীন হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার বিষয়েও আছে ক্ষোভ, আলোচনা-সমালোচনা। এমন অবস্থায় আগামী ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ পদত্যাগ করতে পারেন ইসরাইলের সেনাবাহিনী প্রধান হারজি হালেভি। ইসরাইলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এমন খবরই সামনে এনেছে। গতকাল শুক্রবার স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি সেনাবানীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ হারজি হালেভি ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ তার পদ থেকে সরে যেতে পারেন।
ইসরাইলি সংবাদপত্র মারিভ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইসরাইলি রাজনৈতিক নেতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, “৭ অক্টোবরের হামলার সেই ঘটনার তদন্ত শেষ হওয়ার এক মাস পর হার্জি হালেভি ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ তার পদ থেকে অবসর নেবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।”
হামাস গাজা উপত্যকার আশপাশের অঞ্চলগুলোতে যে নজিরবিহীন আক্রমণ করেছিল সেগুলোর তদন্ত অবশ্যই জানুয়ারির শেষের মধ্যে শেষ করতে হবে। কাটজ ইসরাইলি চিফ অব স্টাফকে জানিয়েছিলেন, তদন্তের ফলাফলগুলো সরবরাহ না হওয়া পর্যন্ত কোনো নতুন জেনারেল নিয়োগ করা হবে না। কাটজের নির্দেশনার আলোকে সংবাদপত্র মারিভ ইঙ্গিত দিয়েছে, এই সময়সীমা হালেভির পদত্যাগ ত্বরান্বিত করতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement