১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজায় হাসপাতাল-স্কুলে ইসরাইলের হামলা

গাজার অস্থিরোগের একমাত্র চিকিৎসককে হত্যা
নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের ধ্বংসস্তূপের ওপর এক ফিলিস্তিনি শিশু : ইন্টারনেট -


গাজা উপত্যকার স্কুল ও হাসপাতালে এখনো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। এতে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছে। গত শুক্রবার নসাইরাত শিবিরে হামলা চালিয়ে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে হত্যার পর দিন শনিবার ভোরে এসব হামলা করে ইসরাইল। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হামলায় জাবালিয়ায় নিজ বাড়িতে সাদুল্লাহ পরিবারের চারজন সদস্য নিহত হন।
এ ছাড়া গাজা শহরের উত্তর-পূর্বে একটি স্কুলে দুইজন এবং খান ইউনুসের দক্ষিণে গৃহহীনদের তাঁবুতে আশ্রয় নেয়া একজনকে হত্যা করেছে ইসরাইল সেনাবাহিনী। অন্য দিকে সামরিক বাহিনী গাজা শহরের উত্তর-পশ্চিমে জালা জংশনে একদল বেসামরিক নাগরিককে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালালে একজন মহিলা নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা এসব তথ্য জানিয়েছে।

অবিরাম আক্রমণ
ইসরাইলের হামলায় নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে আল-শেখ আলী পরিবারের কমপক্ষে ৩৬ জনকে হত্যা করার ঠিক একদিন পরে এসব হামলার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে। উত্তর গাজা গত দুই মাস ধরে আরো কঠোর ইসরাইলি অবরোধের মধ্যে রয়েছে। ওয়াফা অনুসারে, কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অভিযানের সময় ইসরাইলি বাহিনী ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে এবং বেইত লাহিয়া ও তার আশপাশের কয়েক ডজন বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।
এর আগে দেইর আল-বালাহ থেকে আলজাজিরার রিপোর্টার তারেক আবু আজউম বেইত লাহিয়ার কাছে কামাল আদওয়ান হাসপাতালে আক্রমণের কথা উল্লেখ করেছেন। ইসরাইলি হামলায় সেখানকার মেডিক্যাল কর্মীরা আহত হওয়ার পাশাপাশি একটি অ্যাম্বুলেন্সেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, অ্যাম্বুলেন্সগুলো দিয়ে যেন উদ্ধার কাজ না করতে পারে তাই ইসরাইল ক্রমাগতভাবে হামলা চালাচ্ছে। ‘একই সাথে যারা এখনও কামাল আদওয়ান হাসপাতালে আটকে আছে সেই মেডিক্যাল টিমের উপর আরও চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছে। গত মাসে ড্রোন হামলায় এই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের পরিচালক নিহত হন।

চিকিৎসক নিহত
ফিলিস্তিনের গাজার উত্তরাঞ্চলে অস্থিরোগের একমাত্র চিকিৎসক সাইদ জোউদেহ গত বৃহস্পতিবার ইসরাইলের ট্যাংকের গোলার আঘাতে নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের সরকারি কর্মকর্তারা চিকিৎসক সায়েদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হামলার সময় তিনি কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছিলেন। গাজার উত্তরাঞ্চলের কামাল আদওয়ান ও আল-আওদা হাসপাতালে শল্যচিকিৎসক হিসেবে কাজ করতেন তিনি।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলছে, তারা এই ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানে না। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। চিকিৎসক সায়েদ অবসরে ছিলেন। গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর তিনি মানুষের সেবায় নতুন করে কাজে নামেন। গত মাসে কামাল আদওয়ান হাসপাতালে প্ল্যাকার্ড হাতে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তিনি। তাতে লেখা ছিল, ‘আমাদের বাঁচান’। হাসপাতালটির পরিচালক হুসাম আবু সাফিয়া বলেন, ‘রোগী দেখে আল-আওদা হাসপাতালে যাওয়ার পথে ইসরাইলি ট্যাংক থেকে তার (সায়েদ) দিকে সরাসরি গোলাবর্ষণ করা হয়।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি ঘটনাস্থলে নিহত হন।’ তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন বলেছেন, চিকিৎসক সায়েদকে একটি ড্রোন থেকে গুলি করা হয়েছিল। মাস দুয়েক ধরে গাজার উত্তরাঞ্চলে জোরালো হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইলি বাহিনী। ওই অঞ্চলে বোমাবর্ষণ এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরাইলের দাবি, গাজার উত্তরাঞ্চলে হামাসের যোদ্ধারা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
তাই ওই অঞ্চলে হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হচ্ছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামলা চালায় হামাস। ওই দিনই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা নির্বিচার হামলায় নারী-শিশুসহ প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement