জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে গাজায় নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস
- ডয়চে ভেলে
- ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ফিলিস্তিনের গাজায় নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ। ইউএনআরডব্লিউএর সমর্থনেও আলাদা প্রস্তাব পাস হয়েছে। ইসরাইল আইন করে এই সংগঠনকে তাদের দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। গত বুধবার সাধারণ পরিষদে পাস হওয়া ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজা ভূখণ্ডে অবিলম্বে নিঃশর্তে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে হবে। কর্মকর্তাদের মতে, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধের ফলে গাজায় ৪৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
বুধবার এই ভোটাভুটিতে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১৫৮টি দেশ। বিপক্ষে ভোট পড়ে ৯টি। আর ১৩টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত ছিল। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অবিলম্বে নিঃশর্তে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে হবে। বন্দীদের নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে।
এ দিন সাধারণ পরিষদে আরেকটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। সেখানে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের নিয়ে জাতিসঙ্ঘের সংগঠন ইউএনআরডব্লিউএ নিয়ে এই প্রস্তাবের পক্ষে ১৫৯টি দেশ ভোট দেয়, ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্রসহ সাতটি দেশ এর বিরুদ্ধে ভোট দেয়। ১১টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। এই প্রস্তাবে ইউএনআরডব্লিউএ নিয়ে ইসরাইলের আইনের নিন্দা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইসরাইল যেন ইউএনআরডব্লিউএ-কে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয় এবং তাদের কাজে যেন কোনো বাধা না দেয়।
এই প্রস্তাব পাস করার আগে জাতিসঙ্ঘের সদস্য দেশগুলোর অনেকেই তাদের ভাষণে ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানায়। জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনের দূত রিয়াদ মানসুর বলেন, ‘গাজা এখন মানব পরিবারের যন্ত্রণার ক্ষতচিহ্ন হয়ে আছে’। সোভেনিয়ার দূত বলেছেন, ‘গাজা আর নেই। তা ধ্বংস করা হয়েছে’। আলজেরিয়ার ডেপুটি অ্যাম্বাসেডার বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনের দুরবস্থা নিয়ে চুপ করে থাকার জন্য বড় মূল্য দিতে হবে।’
অবশ্য এই প্রস্তাবকে প্রতীকী মনোভাব বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র তা খরিজ করে দিয়েছে। আর এই প্রস্তাব মানার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতাও ইসরাইলের ওপর নেই। তবে রাজনৈতিক দিক থেকে দেখতে গেলে এর একটা চাপ আছে। কারণ, এতগুলো দেশ যখন কোনো প্রস্তাবে সায় দেয়, তখন তাকে গ্লোবাল ওপিনিয়নের প্রকাশ বলে মনে করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য ছিল, গাজায় পণবন্দীদের মুক্ত করার শর্তে যুদ্ধবিরতি হতে পারে। না হলে হামাস ওই বন্দীদের মুক্তি দেবে না। আমেরিকার ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর রবার্ট উড বলেছেন, ‘প্রস্তাবের ভাষা ভুল ও লজ্জাজনক।’
আরো ৩৫ ফিলিস্তিনি নিহত
গাজা ভূখণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরাইলে বোমা হামলায় অন্তত ৩৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ডব্লিউএএফএ জানায়, গাজা সিটির আল-জালা সড়কের একটি আবাসিক ভবনে বিমান থেকে ফেলা বোমায় নারী ও শিশুসহ সাতজন নিহত হন।
গাজা ভূখণ্ডের মধ্যাঞ্চলে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের পশ্চিমে বাস্তুচ্যুত লোকজন আশ্রয় নেয়া আরেকটি বাড়িতে বোমা হামলায় আরো ১৫ জন নিহত হন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা শহরের পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় ত্রাণ বিতরণকারী লোকজনের ওপর চালানো আরেকটি বোমা হামলায় ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত ও আরো বেশ কয়েকজন আহত হন।
চিকিৎসা কর্মীরা জানান, এর আগে রাফায় চালানো আরেকটি হামলায় অন্তত ৩০ জন আহত হন, এদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা সঙ্কটজনক। তারা আরো জানান, রাফার নিকটবর্তী শহর খান ইউনিসে ত্রাণ সরবরাহের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আরেকদল লোকের ওপর পৃথক ইসরাইলি বিমান হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হন। রয়টাই জানিয়েছে, এসব সংবাদের বিষয়ে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
গাজার ক্ষুধার্ত বাসিন্দাদের জন্য পাঠানো ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে প্রবেশের কিছুক্ষণের মধ্যেই সশস্ত্র অপরাধী দলগুলো সেগুলো ছিনতাই করে নিচ্ছে, তাদের ঠেকাতে হামাস একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে। হামাসের সূত্রগুলো ও চিকিৎসা কর্মীরা রয়টাইকে জানান, গত কয়েক মাসে হামাসের নেতৃত্বাধীন এই বাহিনী এসব অপরাধী দলের দুই ডজনেরও বেশি সদস্যকে হত্যা করেছে। হামাস জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ত্রাণ ট্রাকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত অন্তত ৭০০ পুলিশ ইসরাইলি সামরিক হামলায় নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ছিটমহলটিতে ইসরাইলের অবিরাম হামলায় এ পর্যন্ত ৪৪ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা