২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

এশিয়ায় সঙ্কট তৈরিতে তাইওয়ানকে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র : রাশিয়া

তাইওয়ান নিয়ে চীনের অবস্থানের প্রতি মস্কোর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত
-

এশিয়ায় একটি গুরুতর সঙ্কট উস্কে দিতে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে ব্যবহার করছে। গতকাল রোববার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেছেন দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই রুডেনকো। এ সময় তাইওয়ান নিয়ে চীনের অবস্থানের প্রতি মস্কোর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থাটিকে রুডেনকো বলেছেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, ওয়াশিংটন, ‘এক চীন’ নীতি লঙ্ঘন করে যা এর স্বীকৃতি দেয় যে, ‘স্থিতিশীলতা’ বজায় রাখার স্লোগানের অধীনেই তারা তাইপের সাথে সামরিক-রাজনৈতিক যোগাযোগ জোরদার করছে এবং অস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধি করছে।’
‘এই অঞ্চলে মার্কিন হস্তক্ষেপের লক্ষ্য হলো পিপলস রিপাবলিক অব চায়না (পিআরসি)-কে উস্কে দেয়া এবং নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এশিয়ায় সঙ্কট তৈরি করা।’ ওই সাক্ষাৎকারে নির্দিষ্ট কোনো সূত্র বা তথ্য-উপাত্তের উল্লেখ করা হয়নি যেটির ভিত্তিতে রুডেনকো এই কথাগুলো উল্লেখ করছিলেন। সায়ত্ত্বশাসিত তাইওয়ানকে নিজস্ব ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করে চীন। তবে তাইওয়ানের সরকার বেইজিংয়ের এমন দাবি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে।
এদিকে, আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি না থাকা সত্ত্বেও তাইওয়ানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সমর্থনকারী ও অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। অফিস সময়ের বাইরে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে রুডেনকোরে এই মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাইওয়ানের জন্য ৫৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারের সামরিক সহায়তার অনুমোদন দেন।
তখন মার্কিন প্রভাব বাড়াতে ও তাইওয়ানের আশপাশের পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের এমন ‘ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা’র সমালোচনা করে রাশিয়া। দেশটি জানিয়েছিল, এশিয়ার ইস্যুতে চীনের পাশে রয়েছে মস্কো। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা শুরু করার কিছুদিন আগে, বেইজিং সফর করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভলাদিমির পুতিন। তখন ‘সীমাহীন’ অংশীদারিত্ব ঘোষণা করেছিল চীন ও রাশিয়া।
এর কিছুদিন পরই ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে মারাত্মক স্থল যুদ্ধের সূত্রপাত করে। চলতি বছরের মে মাসে পুতিন ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই প্রতিদ্বদ্বীর মধ্যে অংশীদারিত্বের একটি ‘নতুন যুগ’ এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
সিনিয়র কমান্ডারকে অপসারণ
এদিকে যুদ্ধের অগ্রগতি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ইউক্রেন থেকে একজন সিনিয়র রুশ জেনারেলকে সরিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভ এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি দুর্বল কমান্ডারদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরানোর চেষ্টা করছেন। রাশিয়ার সমর্থক যুদ্ধ ব্লগার ও রুশ সংবাদমাধ্যমের বরাতে রোববার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর থেকে সেখানে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হয়েছে রুশ বাহিনী। তবে কিছু এলাকায় অগ্রগতি যদিও অনেক ধীর ছিল, বিশেষ করে ডোনেস্কের পূর্বাঞ্চলের সিভার্সকের আশপাশে।
রুশ সংবাদমাধ্যমগুলো অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, সাউদার্ন গ্রুপিংয়ের কমান্ডার কর্নেল জেনারেল গেনাডি আনাশকিনকে পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি। রাশিয়ার যুদ্ধ ব্লগাররা দীর্ঘদিন ধরে সিভস্ক্রের চারপাশে অভিযানের কমান্ড নিয়ে অভিযোগ করে আসছেন। তারা বলেছিলেন, দুর্বল রুশ ইউনিটগুলো সামান্য কৌশলগত লাভের জন্য মারাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে রাইবার নামের একজন জনপ্রিয় রুশপন্থী ব্লগার বলেছেন, ‘শুধু অলস ব্যক্তিই সেখানকার সমস্যাগুলো সম্পর্কে কিছু জানায়নি: সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি বুঝে সঠিক প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রায় দুই মাস সময় লেগেছে।’
‘আনাশকিনকে সেভারস্কের পরিস্থিতি নিয়ে বিভান্তিকর প্রতিবেদনের জন্য দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছিল।’ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের একজন যুদ্ধ সংবাদদাতাও বলেছেন, আনাশকিনকে তার কমান্ড থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে মন্তব্যের অনুরোধ করে কোনো জবাব পায়নি রয়টার্স। প্রতিবেদনগুলো স্বাধীনভাবে যাচাইও করতে পারেনি সংস্থাটি। রাশিয়ার অভ্যন্তরে নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে মন্তব্যের জন্য আনাশকিনের সাথেও যোগাযোগ করতে পারেনি।


আরো সংবাদ



premium cement