ট্রাম্প নিজেই গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় নেতৃত্ব দেবেন
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হাতে আটক ইসরাইলি বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করতে আলোচনায় নেতৃত্ব দিতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বোঝাতে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্যর্থ হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপরই এখন আশার আলো দেখছেন বন্দীদের পরিবার এবং চুক্তির পক্ষে থাকা ইসরাইলি কর্মকর্তারা।
ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণে এখনো প্রায় দুই মাস বাকি। এখন এমন কোনো পরিস্থিতি নেই, যা থেকে অনুমান করা যেতে পারে যে, শিগগির গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। বরং এ সঙ্কট এবং হামাসের হাতে বন্দী সাত মার্কিনির মুক্তির দায়িত্ব সম্ভবত ট্রাম্পকেই নিতে হবে। এদের মধ্যে এখনো চারজন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্প মনোনীত হোয়াইট হাউজের পরবর্তী প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট এক্সিওসকে জানান, ট্রাম্প ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করবেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন এবং ইসরাইলের প্রতি সমর্থন জোরদার করবেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকার পক্ষ থেকে (গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা) প্রধান আলোচক হিসেবে কাজ করবেন এবং নিরীহ বন্দীদের ঘরে ফেরানোর চেষ্টা করবেন।’
ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ নির্বাচনে জয়লাভের জন্য ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানাতে ফোন করেছিলেন। তিনি তাকে বলেন, ‘১০১ জন বন্দীকে মুক্ত করা জরুরি।’ এই ফোন কলের বিষয়ে অবগত তিন ব্যক্তি জানিয়েছেন, হেরজগ ট্রাম্পকে বলেছেন, ‘আপনাকে বন্দীদের জান বাঁচানোর দায়িত্ব নিতে হবে।’ জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘প্রায় সব বন্দীই সম্ভবত মারা গেছেন।’
এর জবাবে হেরজগ বলেন, ‘ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিশ্বাস করে যে, অর্ধেক বন্দী এখনো জীবিত।’ এই বিষয়ে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র বলেছে, ‘এ কথা শুনে ট্রাম্প অবাক হন এবং বলেন তিনি এটি জানতেন না।’ অপর দু’টি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি মনে করতেন অধিকাংশ বন্দী মারা গেছেন।
এ দিকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় গত ১১ নভেম্বর হোয়াইট হাউজে বাইডেনের সাথে সাক্ষাৎকালে হেরজগ বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেন, বাইডেন যেন ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের আগে পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পের সাথে কাজ করেন। এর দুই দিন পর বাইডেন ট্রাম্পের সাথে দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন এবং বন্দীদের প্রসঙ্গ তুলে একটি চুক্তির প্রস্তাব দেন। বাইডেন পরে আমেরিকান বন্দীদের পরিবারের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, ‘ট্রাম্প পুরো কৃতিত্ব পেলেও আমার আপত্তি নেই, যতক্ষণ না তারা বাড়ি ফিরছেন।’
এর আগে ১৯৮১ সালে দায়িত্ব গ্রহণের আগে একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। তার পূর্বসূরি জিমি কার্টার ১৯ জানুয়ারি ইরানের সাথে বন্দিমুক্তির চুক্তি স্বাক্ষর করেন। পরদিন রিগ্যানের অভিষেকের পর ৪৪৪ দিন আটক থাকা ৫২ আমেরিকানকে মুক্তি দেয় ইরান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ওমর নিউট্রায়ের বাবা-মা মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত একটি খোলা চিঠিতে ট্রাম্পকে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তিনি চাইলে রিগ্যানের মতোই একটি ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ তৈরি করতে পারেন। তারা উল্লেখ করেন, হামাসের ওপর প্রভাবশালী ইরান ও কাতার ট্রাম্পের বিজয়ের পর তাদের কার্যক্রম পুনর্বিবেচনা করছে। তারা লেখেন, ‘ট্রাম্প, সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ওমরকে বাড়ি ফেরানোর জন্য আপনার নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করছি।’
তিন মাসেরও বেশি ধরে বন্দিমুক্তি ও যুদ্ধবিরতির আলোচনা স্থবির হয়ে আছে। সাম্প্রতিক এক বৈঠকে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও শিন বেতের প্রধানরা নেতানিয়াহুকে জানান, হামাস ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার এবং যুদ্ধ বন্ধ ছাড়া তাদের শর্ত শিথিল করবে না। তারা ইসরাইলি সরকারের অবস্থান নরম করার পরামর্শ দেন। কিন্তু নেতানিয়াহু যুদ্ধ বন্ধে সম্মত হননি। তিনি বলেন, ‘এটি হামাসকে টিকে থাকার সুযোগ দেবে এবং এটি ইসরাইলের পরাজয় হিসেবে বিবেচিত হবে।’ এ দিকে ইসরাইলি কর্মকর্তারা বলছেন, লেবাননে যুদ্ধবিরতি হলে হামাসের ওপর চাপ বাড়বে এবং গাজায় আটক বন্দীদের মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা আরো সক্রিয় হবে। বাইডেনের তুলনায় ট্রাম্পের নেতানিয়াহুর ওপর বেশি প্রভাব থাকার সম্ভাবনা নিয়ে অনেকেই আশাবাদী। বাইডেন বারবার নেতানিয়াহুকে অবস্থান নরম করার অনুরোধ করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
এ বিষয়ে মার্কিন থিংকট্যাংক ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসির সিইও মার্ক ডুবোভিৎজ বলেছেন, ‘ট্রাম্পের এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচিত অবিলম্বে সব বন্দীর মুক্তির জন্য সুস্পষ্ট দাবি জানানো এবং তার কর্মকর্তাদের কাজ শুরু করতে বলা।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা