লেবানন-গাজায় ইসরাইলি হামলায় শতাধিক নিহত
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
# লেবাননে আবাসিক ভবনে হামলা
# গাজায় ৪৮ ঘণ্টায় ১২০ জন নিহত
# ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুতে সিরিজ হামলা হিজবুল্লাহর
দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় লেবানন ও গাজা উপত্যকাজুড়ে আরো শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল শনিবার ভয়াবহ হামলা চালিয়ে বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে একটি আটতলা আবাসিক ভবন পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে দখলদার ইসরাইল। এতে ১১ জন নিহত ও ২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। অন্য দিকে দেশটির ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি (এনএনএ) জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননের নাবাতিহ গভর্নরেটের রুমেনে গ্রামে ইসরাইলি হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে। খবর আলজাজিরা ও এএফপি।
এদিকে গাজায় দখলদার বাহিনীর হামলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় আরো ১২০ ফিলিস্তিনি নিহত ও ২০৫ জন আহত হয়েছে বলে উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এ নিয়ে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে মোট মৃতের সংখ্যা ৪৪,১৭৬ এ পৌঁছেছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অন্য দিকে আহত হয়েছে আরো ১০৪,৪৭৩ জন।
লেবাননের জাতীয় বার্তা সংস্থা এনএনএ জানিয়েছে, রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ বাস্তা জেলার আটতলা ভবনটিতে কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরাইলি বাহিনী। স্থানীয় সময় শনিবার ভোর ৪টার দিকে এই হামলা হয়। হামলার পরপর পুরো শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এটি এই সপ্তাহে কেন্দ্রীয় বৈরুতে চতুর্থ হামলা। এ ছাড়া বৈরুতের দক্ষিণবর্তী হাদাত এবং চৌইফাত এলাকায়ও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল।
লেবাননের টাইর শহরের সৈকতে ইসরাইলি ড্রোন হামলা চালিয়ে দুই জেলেকে হত্যা করা হয়েছে। ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে চলমান সংঘাতের জেরে পরিচালিত পূর্ববর্তী হামলাগুলোতে বেশ কয়েকজন শীর্ষ হিজবুল্লাহ সদস্য নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে সংগঠনটির নেতা হাসান নাসরাল্লাহও রয়েছেন। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী হিজবুল্লাহর বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েই যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাস থেকে তাদের অভিযান তীব্রতর হয়েছে। লেবাননে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৩,৬৪৫ জন নিহত এবং ১৫,৩৫৫ জন আহত হয়েছে। ১০ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
অন্য দিকে গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের ভাষ্য অনুযায়ী গতকাল রাতভর ইসরাইলি বিমান হামলা এবং ট্যাঙ্কের গোলায় শিশুসহ ১৯ জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়েছে। বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের একজন মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপি বার্তা সংস্থাকে বলেছেন যে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় আরো ৪০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছে।
হিজবুল্লাহ হামলার দাবি : লেবাননের প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা উত্তর ইসরাইলের আভিভিম বসতিতে রকেট নিক্ষেপ করেছে। তা ছাড়া হিজবুল্লাহ রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে দক্ষিণ লেবাননের শহর দেইর মিমাস এবং খিয়ামে ইসরাইলি সেনাদের ওপর তিনটি পৃথক হামলা চালিয়েছে। হিজবুল্লাহ আরো জানিয়েছে যে তারা উত্তর ইসরাইলের হানিতা বসতিতে দখলদার সেনাদের একটি দলকে লক্ষ্য করে রকেট নিক্ষেপ করেছে। এ ছাড়া দক্ষিণ লেবাননের আল-বায়দা শহরে ইসরাইলি বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ হয়েছে হিজবুল্লাহর। সেখানে কয়েকজন সেনা হত্যা ও আহত করেছে বলে দাবি করেছে তারা।
লেবাননে ২২৬ স্বাস্থ্যকর্মী নিহত : এদিকে ইসরাইলের হামলায় লেবাননে ২২৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এ ছাড়াও ইসরাইলি হামলায় আহত হয়েছেন আরো ১৯৯ জন। গত শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ কথা জানিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, গত ১৩ মাসেরও বেশি সময়ে লেবাননের স্বাস্থ্যসেবার ওপর ১৮৭টি হামলা হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৮ নভেম্বরের মধ্যে এসব হামলা হয়।
পরিচালকসহ ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত : অন্যদিকে লেবাননের বালবেক-হারমেল প্রদেশের বৃহত্তম হাসপাতাল দার আল-আমাল হাসপাতালের কাছে ইসরাইলের বিমান হামলায় হাসপাতালের পরিচালক ডা: আলি আল্লাম এবং তার ছয় সহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হাসপাতাল যেটি ইসরাইলের অব্যাহত হামলার মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করে আসছিল। লেবাননে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টার মধ্যে এই হামলা চালাল ইসরাইল।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কাপুরুষোচিত ইসরাইলি হামলায় হাসপাতালের পরিচালক ডা: আলি আল্লাম এবং তার ছয় সহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এতে বলা হয়, চিকিৎসা কর্মী এবং স্বাস্থ্যসেবার বিরুদ্ধে এটি ক্রমাগত ইসরাইলি আগ্রাসন। লেবাননের গণমাধ্যম জানিয়েছে, কোনো সতর্কতা ছাড়াই এই হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। মন্ত্রণালয় আল্লামের মৃত্যুকে একটি মহা ক্ষতি বলে বর্ণনা করেছে এবং প্রাদেশিক গভর্নর বাছির খোদর এক্স পোস্টে বলেছেন, আল্লাম ছিলেন বালবেকের শ্রেষ্ঠ নাগরিকদের একজন।