২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক রূপ নিতে যাচ্ছে : পুতিন

ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক রূপ নিতে যাচ্ছে : পুতিন -

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনের সাথে চলমান যুদ্ধটি এখন ‘বৈশ্বিক’ যুদ্ধে রূপ নিচ্ছে। এ অবস্থায় পশ্চিমা দেশগুলোতে হামলা করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে নতুন প্রজন্মের একটি মধ্যম-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পরীক্ষামূলক হামলার পর এই মন্তব্য করেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
নতুন ক্ষেপণাস্ত্রটি পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন পুতিন। এটি পরীক্ষার পর পশ্চিমা দেশগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, পশ্চিমারা যদি তাদের সরবরাহ করা অস্ত্র ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার ভূখণ্ডে আঘাত হানতে ব্যবহার করে, তবে রাশিয়া পাল্টা হামলা চালাবে। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, যেসব দেশ আমাদের স্থাপনাগুলোর ওপর আঘাত হানতে তাদের অস্ত্র ব্যবহার করতে দেয়, তাদের বিরুদ্ধেও আমরা আমাদের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারি।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সম্প্রতি রাশিয়ার গভীরে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এতে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া না গেলেও বিষয়টিকে ‘গুরুতর উসকানি’ বলে উল্লেখ করেছে ক্রেমলিন। এমন প্রেক্ষাপটে রাশিয়াকে যুদ্ধের উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউছের মুখপাত্র কারিন জিন-পিয়েরে বলেছেন, রাশিয়া যেখানেই সুযোগ পাচ্ছে, সেখানেই উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, রাশিয়া অন্য দেশের সহায়তা নিচ্ছে, যার মধ্যে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী রাশিয়াকে ইউক্রেনের আক্রমণ প্রতিহত করতে সহায়তা করছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার দূত আন্দ্রেই কেলিন যুক্তরাজ্যকে ‘যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারী’ বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ তারা ইউক্রেনকে স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছিল। রুশ সরকার দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের আরো কিছু গ্রাম দখল করেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই সঙ্ঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বিভিন্ন শহর-গ্রাম নিজেদের দখলে নিয়েছে রুশ বাহিনী। সম্প্রতি পূর্ব ইউক্রেনীয় একটি গ্রাম দখলে নেয়ার দাবি করেছে রুশ বাহিনী। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
এই যুদ্ধ নতুন করে আরো একটি গ্রাম দখল রাশিয়ার জন্য একটি অগ্রগতি। ডালনে নামের গ্রামটির অবস্থান দোনেৎস্ক অঞ্চলে। গ্রামটি রাশিয়ার দখলে যাওয়ার বিষয়টি অবশ্য স্বীকার করেননি ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ। তবে এ ঘটনা নিয়ে কোনো পক্ষের দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বলে জানায় রয়টার্স। অবশ্য ইউক্রেনের জনপ্রিয় ‘ডিপস্টেট’ নামের সামরিক ব্লগে বলা হয়েছে, রাশিয়ার কাছে গ্রামটির পতন ঘটেছে। ডিপস্টেট ব্লগে বলা হয়, ইতোমধ্যে গ্রামটিতে রাশিয়ার পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। শত্রুরা (রুশ বাহিনী) গ্রামটির সব অংশে অবস্থান নিয়েছে।
একদিন আগে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় নিপ্রো শহরে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় রাশিয়া। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়া আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) দিয়ে এ হামলা চালিয়েছে। তবে পরবর্তী সময় মস্কোর পক্ষ থেকে বলা হয়, নতুন প্রজন্মের ‘ইন্টারমিডিয়েট’ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক হামলা চালিয়েছে তারা। এই পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সাধারণত পাঁচ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
ইউক্রেনকে সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রুশ ভূখণ্ডের ভেতরের লক্ষ্যবস্তুতে হামলায় ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা। ইতোমধ্যে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এর জেরে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দেন পুতিন।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যেসব দেশ তাদের অস্ত্র আমাদের স্থাপনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করার অনুমতি দেয়, আমরা নিজেদের সেসব দেশের সামরিক স্থাপনার বিরুদ্ধে আমাদের অস্ত্র ব্যবহার করার অধিকারী মনে করি।’ পুতিন আরো বলেন, ইউক্রেনের ছোড়া মার্কিন আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (এটিএসিএমএস) ও ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে রুশ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। শত্রুপক্ষ লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
জাতির উদ্দেশে টিভিতে প্রচারিত আকস্মিক এক ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘২১ নভেম্বরে (বৃহস্পতিবার) রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের আমেরিকান ও ব্রিটিশ অস্ত্র হামলার জবাবে রাশিয়ার সশস্ত্রবাহিনী মধ্যবর্তী-পাল্লার এক নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনে আঘাত হেনেছে।’
ইউক্রেনের মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স স্থলগুলোতে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানান পুতিন। তিনি বলেন, এই হামলার মধ্য দিয়ে রাশিয়ার সর্বাধুনিক মধ্যবর্তী-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার পরীক্ষাও সম্পন্ন হলো। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ছিল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের অ-পারমাণবিক হাইপারসনিক সংস্করণ।
ক্ষেপণাস্ত্রটির পরীক্ষা সফল হয়েছে এবং এটি লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে বলে জানান পুতিন। সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, যেসব দেশ ইউক্রেনকে রাশিয়ার গভীরে তাদের অস্ত্র হামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছে সেসব দেশেও এই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে মস্কো।
সেক্ষেত্রে রাশিয়া হামলা চালানোর আগেই সতর্কবার্তা দেবে যাতে দেশগুলো তাদের নাগরিকদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে পারবে না বলেও পুতিন সতর্ক করে দিয়েছেন। ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্থাপনাগুলোতে যেসব দেশ তাদের অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেবে, সেসব দেশের সামরিক স্থাপনাগুলোতে আমাদের অস্ত্র দিয়ে হামলার অধিকার আমাদের আছে।’
‘আমরা যেকোনো পরিস্থিতির জন্যই প্রস্তুত। কেউ তা নিয়ে সন্দেহ করলে সেটি করা তাদের উচিত হবে না। পাল্টা একটি জবাব সবসময়ই থাকবে’, বলেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement