২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ইউক্রেনকে রাশিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুমতি

ইউক্রেনকে রাশিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুমতি -

- কয়েক মাস ধরেই এর অনুমতি চাইছিলেন জেলেনস্কি
- ‘বিশ্ব যুদ্ধ বেধে যেতে পারে’ বলে হুমকি রাশিয়ার

যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা চালাতে ইউক্রেনকে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন নীতির বড় পরিবর্তনের এ তথ্য সংবাদমাধ্যম সিবিএসকে জানিয়েছেন দেশটির এক কর্মকর্তা। বিবিসির খবরে বলা হয়, কয়েক মাস ধরেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এটিএসিএমএস নিজের দেশের বাইরে ব্যবহারের অনুমতি চাইছিলেন।
নতুন সিদ্ধান্তের খবরে রোববার তিনি বলেছেন, ‘এ ধরনের বিষয় ঘোষণা করা হয় না, ক্ষেপণাস্ত্রই নিজেদের কথা বলে।’ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এর আগে পশ্চিমা দেশগুলোকে এ ধরনের পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে কিয়েভ হামলা চালালে তা যুদ্ধে ন্যাটো সামরিক জোটের ‘সরাসরি অংশগ্রহণের’ শামিল হবে।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবশেষ সিদ্ধান্তের বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। তবে ক্রেমলিনের অন্য সিনিয়র রাজনীতিকরা ওই সিদ্ধান্তকে গুরুতর উত্তেজনা বৃদ্ধির উপাদান হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এটিএসিএমএস নিয়ে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্ত ছিল, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে ইউক্রেনীয় বাহিনী, যেখানে কিইভ গত আগস্টে আকস্মিক আক্রমণ শুরু করে।
বিবিসি লিখেছে, বাইডেন প্রশাসন কার্যত ইউক্রেনকে বলছে যে ভবিষ্যতে যে কোনো সম্ভাব্য আলোচনার জন্য একটি শক্তিশালী দর কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে বর্তমানে দখল করা রাশিয়ার ভূখণ্ডের ক্ষুদ্র অংশটিই কাজে দেবে। কিয়েভভিত্তিক ইউক্রেনিয়ান সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন সেন্টারের চেয়ারম্যান সেরহি কুজান বিবিসিকে বলেন, জো বাইডেনের সিদ্ধান্ত দেশের জন্য ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’।

‘এটি এমন কিছু নয়, যা যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করবে; তবে আমি মনে করি, এটি আমাদের বাহিনীকে আরো সমকক্ষ করবে।’ এটিএসিএমএস ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের নিশানায় আঘাত হানতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তারা নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের ইউক্রেনে যুদ্ধ করার যে অনুমতি রাশিয়া দিয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন এটিএসিএমএস ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছেন।
কুজান বলেন, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে সরাতে রুশ ও কোরীয় সেনারা কয়েক দিনের মধ্যে আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। ওই হামলার আগেই রোববার ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন বাইডেন। এর আগে ইউক্রেন দাবি করেছিল, কুরস্কে উত্তর কোরিয়ার ১১ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে। বিবিসি লিখেছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নতুন সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের যৌথভাবে বানানো দূরপাল্লার ‘স্টর্ম শ্যাডো’ ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার ভেতরে ব্যবহারের অনুমতি পাবে ইউক্রেইন।

অবশ্য বাইডেনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে যুক্তরাজ্য বা ফ্রান্স কেউ এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। গত মাসে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে প্রথমবারের মতো দূরপাল্লার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। পূর্ব দনেস্ক অঞ্চলে ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়া রুশ সেনাদের হটাতে কয়েক মাস ধরেই ইউক্রেন লড়াই করছে। রুশ বাহিনী ওই অঞ্চলের মূল শহর পোকরোভস্কের দিকে আগাতে চাইছে, যে শহর ইউক্রেনীয় বাহিনীর একটি প্রধান সরবরাহ কেন্দ্র।

বিশ্ব যুদ্ধের হুমকি
এ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানতে কিয়েভকে ওয়াশিংটনের অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্তে ইউক্রেনের যুদ্ধ আরো তীব্র হবে আর তা তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন একজন উচ্চপদস্থ রুশ আইনপ্রণেতা। রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে ওয়াশিংটনের বড় ধরনের নীতি পরিবর্তনের এ বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন দুইজন মার্কিন কর্মকর্তা ও একটি সূত্র যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা রোববার প্রকাশ করেছেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলের সিনিয়র সদস্য আন্দ্রি ক্লিশাস টেলিগ্রাম অ্যাপে বলেছেন, ‘পশ্চিমা সঙ্ঘাত এমন মাত্রার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তা সকালের মধ্যে ইউক্রেইন রাষ্ট্রকে সম্পূর্ণ ধ্বংসাবশেষে পরিণত করার মধ্য দিয়ে শেষ হতে পারে।’ রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির প্রথম উপপ্রধান ভলাদিমির জবারফ বলেছেন, মস্কোর প্রতিক্রিয়া হবে তাৎক্ষণিক।

‘তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরুর দিকে নিয়ে যাওয়ার মতো অত্যন্ত বড় পদক্ষেপ এটি,’ রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা তাসের দেয়া উদ্ধৃতিতে জবারফ এমনটি বলেছেন। তা ছাড়া ইউক্রেনে ড্রোন হামলাও ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে মস্কো। ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফের হিসেবে, অক্টোবরে দুই হাজারের বেশি এ ধরনের হামলা হয়েছে, যা এ যুদ্ধে সর্বোচ্চ। রাশিয়া কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমন্বিত হামলা চালায় শনিবার রাতে, যাতে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে। জেলেনস্কি বলেছেন, প্রায় ১২০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ৯০টি ড্রোন ব্যবজার হয়েছে ওই হামলায়।


আরো সংবাদ



premium cement