১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধপদ্ধতি গণহত্যার শামিল : জাতিসঙ্ঘ

১ মাসে ২০ ত্রাণকর্মীকে হত্যা
উত্তর গাজায় বেইত হানুনের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়ায় ফিলিস্তিনি শিশুরা নতুন আশ্রয়ের জন্য মালামাল নিয়ে গাধার গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে : ইন্টারনেট -

অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি কার্যক্রম তদন্তে জাতিসঙ্ঘের বিশেষ কমিটি বলেছে, গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের পদ্ধতি ‘গণহত্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ’। যার মধ্যে ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা রয়েছে। ওই কমিটি মনে করে, গাজায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী কর্তৃক বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও জীবনসঙ্কট সৃষ্টির পরিস্থিতি ‘ইচ্ছাকৃতভাবে চাপানো’ হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি জানায়, যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরাইলি কর্মকর্তারা এমন নীতির প্রকাশ্য সমর্থন করেছেন, যা ফিলিস্তিনিদের জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানি এবং জ্বালানি থেকে বঞ্চিত করেছে। জাতিসঙ্ঘের বিশেষ কমিটি আরো জানায়, এই বিবৃতি এবং মানবিক সাহায্যে নিয়মিত ও অবৈধ হস্তক্ষেপ স্পষ্ট করে যে, ইসরাইল গাজায় জীবন-রক্ষাকারী সরবরাহকে রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে।
প্রতিবেদনে গাজার জন্য সাহায্য সরবরাহে ইসরাইলি প্রতিরোধ, যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ক্ষুধাকে ব্যবহারের মতো কার্যকলাপ এবং বেসামরিক হতাহতের ক্ষেত্রে অসতর্কতার মতো আচরণের উল্লেখ করা হয়েছে। যা অন্যান্য জাতিসঙ্ঘ ও মানবিক সংস্থার নিন্দার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তবে ইসরাইলের জন্য গাজা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘের সাথে যুক্ত কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে ‘গণহত্যা’ শব্দটি প্রায়ই ব্যবহার করা হয় না।
মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গত মাসে কমপক্ষে ২০ জন সহায়তা কর্মী নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে চারজন ওয়াক্সফামের কর্মী ছিলেন। যারা একটি পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত গাড়িতে ভ্রমণ করছিলেন।
তাছাড়া এএফপি জানায়, এবার ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযান চালানোর অভিযোগ তুলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)। গতকাল বৃহস্পতিবার এক রিপোর্টে মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, গাজার বাসিন্দাদের ইসরাইলের ধারাবাহিক স্থানান্তরের নির্দেশগুলো ‘জোরপূর্বক স্থানান্তরের যুদ্ধাপরাধ’ এবং নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে ‘জাতিগত নির্মূল’ কার্যক্রমের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে।
রিপোর্টটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইসরাইলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক স্থানান্তরের যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। এ ছাড়াও যেসব অঞ্চলে ফিলিস্তিনিরা আর ফিরে যেতে পারবে না, সেসব এলাকার ক্ষেত্রে ইসরাইলের পদক্ষেপগুলো জাতিগত নির্মূলের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে। এইচআরডাব্লিউ গবেষক নাদিয়া হার্ডম্যান জানান, ১৭২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের এই অনুসন্ধানগুলো বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের সাক্ষাৎকার, স্যাটেলাইট ইমেজ এবং ২০২৪-এর আগস্ট পর্যন্ত জনসাধারণের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে।
যদিও ইসরাইল সরকার দাবি করে যে, বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা ও সামরিক নিরাপত্তার প্রয়োজনেই এই স্থানান্তর ঘটানো হচ্ছে। তবে হার্ডম্যান বলেন, ইসরাইল স্রেফ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতিকে সাধারণ মানুষের স্থানান্তরের যৌক্তিকতা হিসেবে ব্যবহার করতে পারে না। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন তো সম্পূর্ণরূপে মেনে চলার জন্যই। তাই এর প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তাদের প্রমাণ করতে হবে যে, বেসামরিক জনগণের স্থানান্তরই একমাত্র বিকল্প ছিল। জাতিসঙ্ঘের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ইসরাইলি সামরিক অভিযানে গাজায় ১৯ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর আগে এই অঞ্চলের জনসংখ্যা ছিল ২৪ লাখ। অন্যদিকে, এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজায় এ পর্যন্ত ৪৩,৭৩০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১০৩,২৫৮ জন। যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এ বিষয়ে এইচআরডাব্লিউর মধ্যপ্রাচ্য বিভাগের মুখপাত্র আহমেদ বেনচেমসি বলেন, বিস্তৃতভাবে গাজার বড় অংশকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলা, কিছু ক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে জাতিগত নির্মূলের সমতুল্য। বিশেষ করে প্রতিবেদনে মিসর সীমান্ত বরাবর ফিলাডেলফি এবং পূর্ব-পশ্চিমে নেটজারিম করিডোরগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দ্বারা সুরক্ষা অঞ্চলে রূপান্তর করা হয়েছে।
গাজায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে
এ দিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলের হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ৪৩,৭৩৬ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১০৩,৩৭০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ২৪ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১১২ জন আহত হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় যোগ করেছে।
২০ ত্রাণকর্মীকে হত্যা
অন্য দিকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন শরণার্থী শিবিরে কাজ করা সাহায্য কর্মীরা। এসব অঞ্চলে কর্মরত দাতব্য সংস্থাগুলোর মতে, গত এক মাসে গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ২০ জন সাহায্য কর্মী নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার আলজাজিরা দাতব্য সংস্থাগুলোর বরাতে জানায়, চলতি বছরের গত ১০ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২০ সাহায্যকর্মী নিহত হয়েছে।
তারা বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে সাহায্য করার সময় ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন। অনেক সাহায্যকর্মীই অনেকেই তাদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় হারিয়েছেন। এর মধ্যে অক্সফামের অংশীদার এক প্রতিষ্ঠানের চার প্রকৌশলী রয়েছেন। তারা ১৯ অক্টোবর খান ইউনিসের পূর্বে খুজায় পানির অবকাঠামো মেরামত করতে যাওয়ার সময় নিহত হযেছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের সাথে পূর্বের সমন্বয় সত্ত্বেও তারা তাদের চিহ্নিত গাড়িতে হামলা করেছে। এ নিয়ে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় ৩০০ জনেরও বেশি ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছে। এটি বিশ্বের কোনো একক সঙ্কটে রেকর্ড করা সর্বোচ্চ সংখ্যা।


আরো সংবাদ



premium cement
অনুশোচনা নেই আওয়ামী লীগে, যে অপেক্ষায় তারা রাতে মাঠে নামছে চিরচেনা ব্রাজিল, ভোরে বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনা কাঁঠালিয়ায় মোটরসাইকেলচাপায় গৃহবধূ নিহত, আহত ২ ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এখনো শেষ হয়নি : মাহমুদুর রহমান সাবেক এমপি টিপুকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করল জনতা বিএলআরআইয়ের ভূমিকা হওয়া উচিত দেশীয় জাত সংরক্ষণ : ফরিদা আখতার কেউ যাতে দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারে : আসিফ নজরুল প্রশাসক নিয়োগ করে পোশাক কারখানায় সমস্যা সমাধান সম্ভব? খুলনায় পাটের বস্তার গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট ৯টি ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি গঠন তিন দিনের মধ্যে এনআইডিকে ক্যাটাগরি করার নির্দেশ ইসির

সকল