০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
আর বাকী ৬ দিন

দোদুল্যমান রাজ্যে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও সহিংসতা মোকাবেলার প্রস্তুতি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৪
-

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আর মাত্র দিন কয়েক বাকি। এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে নির্বাচনী কর্মকর্তারা বিভ্রান্তিকর তথ্য, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, হুমকি ও সম্ভাব্য সঙ্ঘাত মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফিলাডেলফিয়া, ডেট্রয়েট এবং আটলান্টায় ২০২০ সালের নির্বাচন-পরবর্তী বিশৃঙ্খলার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে হুমকি মোকাবেলা অভিযান জোরদার করা হচ্ছে। কারণ গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর মধ্যে ডেমোক্র্যাটদের প্রধান ভোটকেন্দ্র ওই তিন নগরীই সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভোট কারচুপির মিথ্যা অভিযোগের প্রধান লক্ষ্যবস্তু।
ফিলাডেলফিয়ার ব্যালট গণনা কেন্দ্র কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। ডেট্রয়েট ও আটলান্টার নির্বাচন কার্যালয়গুলো সুরক্ষিত করা হয়েছে বুলেটপ্রুফ কাচ দিয়ে। উইসকনসিনে নির্বাচনকর্মীদের ‘উত্তেজনা প্রশমনের’ কৌশল শেখানো হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলো পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের সামনে থেকে নিরাপদে সরে যেতে পারেন। অ্যারিজোনা ২০২০ সালে ছিল ভোট কারচুপির মিথ্যা অভিযোগের কেন্দ্রে। রিপাবলিকানরা সেখানে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন।
এবার অ্যারিজোনার নির্বাহী কর্মকর্তা আদ্রিয়ান ফন্টেস সেখানে বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা তথ্য এবং ভুয়া ছবি ও ভিডিও মোকাবেলায় স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে মিলে কাজ করছেন। ফিলাডেলফিয়ার সিটি কমিশনার এবং দুই দলেরই অন্য আরো ৩০ জন নির্বাচন কর্মকর্তা বলেছেন, তারা ২০২০ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তির জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। ওই সময়ে ট্রাম্প ও তার আইনজীবীরা গভীর রাতের ভোটে কারচুপির মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিলেন। আর এই অভিযোগের কারণে ওই কাউন্টির ক্লাকরা ট্রাম্প সমর্থকদের কাছ থেকে হুমকি পাওয়া এবং হয়রানির শিকার হয়েছিল।
এবারের নির্বাচনের ফলকেও চ্যালেঞ্জ জানানোর পরিকল্পনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্পের প্রচারশিবির কোনো উত্তর দেয়নি। এক বিবৃতিতে ট্রাম্পশিবির এবং রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির ঊর্ধ্বতন এক উপদেষ্টা কেবল বলেছেন, নির্বাচনের ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা’ নিশ্চিত করতে দল দুই লাখ ৩০ হাজার ভোট পর্যবেক্ষক, কর্মী এবং আইন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করেছে। তিনি বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা নির্বাচনকে দুর্বল করতে কোনো চেষ্টা বাদ রাখবে না। তাই আমরা সুষ্ঠু এবং নিরাপদ একটি ভোট প্রক্রিয়ার জন্য লড়াই করছি, যাতে প্রতিটি বৈধ ভোট ঠিকমতো গণনা হয়।
নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, সবচেয়ে বড় যেসব ভয় আছে তার অন্যতম হলো নির্বাচনের ফল অত্যন্ত কাছাকাছি হওয়া। দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান খুবই সামান্য হলে অল্পসংখ্যক ব্যালট নিয়ে বিতর্ক তখন গড়াবে আদালতের লড়াইয়ে। রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি এরই মধ্যে ভোটিং প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিককে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তাদেরকে একাধিক মামলায় জড়ানোর টার্গেট নিয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা একে রিপাবলিকানদের নির্বাচনী ফল নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির পূর্বাভাস হিসেবেই দেখছে।
গণতন্ত্র নিয়ে শঙ্কা : এ দিকে মার্কিন নির্বাচনকে ঘিরে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক এই দেশটিতে এবার নির্বাচনের আগেই ব্যাপক সহিংসতা, ফলাফল পাল্টানোর চেষ্টা, ভোট পোড়ানোসহ রাজনৈতিক সঙ্ঘাতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন দেশটির সাধারণ ভোটাররা। এমনকি দেশের গণতন্ত্র নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা। দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ-এর একটি জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, দেশটির জনগণ গণতন্ত্র নিয়ে গভীর উদ্বেগের কথা বলেছেন।
সাবেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল মানতে অস্বীকার করায়, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর পণ্ড করতে ইউএস ক্যাপিটলে তার সমর্থকরা যে সহিংস প্রয়াস করেছিলেন সে স্মৃতি আবারো জনমনে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। তাই এবারের নির্বাচনের ফলাফল কোনো প্রার্থী অস্বীকার করলে পরিণামে কী কী ঘটতে পারে তা ভেবেই যত উদ্বেগ মার্কিনিদের। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, প্রতি ১০ জন নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে চারজনই নভেম্বরের নির্বাচনের পর ফলাফল পাল্টে দেয়ার সহিংস প্রচেষ্টা নিয়ে ‘গভীর’ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একইসংখ্যক মানুষ আইনি প্রচেষ্টার মাধ্যমে এমনটা করা হতে পারে বলেও উদ্বিগ্ন।
এ দিকে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন ভোটার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, স্থানীয় বা অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে নির্বাচনী কর্মকর্তারা চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ আটকানোর প্রচেষ্টা করতে পারেন।
তুলনামূলকভাবে খুব কম ভোটারই রয়েছেন যারা এমন কিছু হবে বলে মনে করেন না। তাদের সংখ্যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা তারও কম। চার বছর আগের নির্বাচনে জালিয়াতি করে তাকে হারানো হয়েছে বলে মিথ্যা অভিযোগ করে চলেছেন ট্রাম্প। এবারো তিনি দাবি করেছেন, কেবল নির্বাচনে কারচুপি হলেই তার পরাজয় হবে। ট্রাম্পের এমন মন্তব্যকে একটি কৌশল হিসেবে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত নির্বাচনেও এমন কৌশল ব্যবহার করেছিলেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement