০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

তিউনিসিয়ায় একতরফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজ

তিউনিসে একতরফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিবাদে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় বিরোধী ও সুশীলসমাজের সদস্যরা প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিচ্ছেন : ইন্টারনেট -


আজ রোববার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। চলতি বছরের জুলাইয়ে এমটাই ঘোষণা করেছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ। বিরোধী সমালোচকরা বলেছেন প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদকে পুনর্নিবাচনের জন্য সব ধরনের কারচুপি সম্পাদনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এ নির্বাচনকে ঘিরে এবং এটি তিউনিসিয়ার গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটতে পারে। আজকের ভোটে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মাত্র দু’জন প্রার্থীকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন হলেন বামপন্থী জাতীয়তাবাদী জুহাইর মাগঝাউই। তাকে সাইদের কট্টর সমর্থক হিসেবেই ধরা হয়। আরেক জন হলেন উদারপন্থী আজিমুন পার্টির কারাবন্দী নেতা আয়াচি জাম্মেল।

গণতান্ত্রিক বিশ্ব তিউনিসিয়ার এ নির্বাচনকে ভালো চোখে দেখছে না। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বলেছে, জাম্মেলের গ্রেফতার ও তিনজন সম্ভাব্য প্রার্থীকে বাদ দেয়ার মধ্য দিয়ে উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে ‘গণতন্ত্রের জায়গাটিকে ক্রমাগত সীমাবদ্ধ’ করে তোলা হচ্ছে। উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়া বছর দশেক আগে আরব বসন্তের মধ্য দিয়ে সংবাদপত্রের হেডলাইনে উঠে আসে। সে সময় আরব বসন্তের প্রবল ধাক্কায় স্বৈরশাসক বেন আলির জামানা শেষ হয়েছিল। কিন্তু তার পর পরিস্থিতির অনেক বদল হয়েছে। আবার স্বৈরশাসকের আগমন হচ্ছে।

দেশটাকে থাকা কঠিন রাজনৈতিক সঙ্কট ও নানা বিতর্কের মধ্যে আগামী ৬ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদের অধীনেই গুটিকয়েক প্রার্থী নিয়ে আরো একটি নির্বাচন হচ্ছে। এ কায়েস কার্যত আরব বসন্ত উত্তর আরেক স্বৈরশাসক হতে চলেছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সেই ধারায় এ নির্বাচনে কায়েস সাইদ আবার প্রার্থী হয়েছেন এবং তার শাসনকাল প্রলম্বিত করতে চাইছেন। মিসর ও তিউনিসিয়ায় আরব বসন্তের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

এর আগে ২০১৯ সালে কায়েস সাইদ প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ২০২১ সালে তিনি একচেটিয়াভাবে দেশের সার্বিক ক্ষমতা দখল করেন। ২০২১ সালে পুলিশি বর্বরতা, অর্থনৈতিক সঙ্কট ও কোভিড ১৯-এর প্রভাবে দেশের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে। সেই বছরই জুলাইয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিশাম মেসিসি সরকারকে বরখাস্ত করে স্বঘোষিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। এরপর তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। সেই পার্লামেন্টের স্পিকার ছিলেন আননাহদা পার্টির নেতা রশিদ ঘানুচি। রাজনৈতিক নেতাদের ধরপাকড় ও বিচার বিভাগকে কোনঠাসা করে অবস্থান শক্ত করেন।

রশিদ ঘানুচিসহ অনেকেই এখনো জেলে আছেন। এরপর তিনি ডিক্রি জারি করে দেশ শাসন অব্যাহত রাখেন। আননাহদাসহ বিভিন্ন দল রাস্তায় জনসমাবেশ ও আন্দোলন করলেও তাতে তিনি কান দেননি। এরপর বিরোধী মতের তোয়াক্কা না করে তিনি সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট পদকে আরো শক্তিশালী করেন। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়া পার্লামেন্ট নির্বাচন দেন। এতে ভোটের হার ছিল মাত্র ৮ শতাংশ। আর ২০২২ সালে তিনি একটি নতুন সংবিধান রচনা করেন। সংবিধানটি গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হলেও এটি প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা এবং সংসদকে দুর্বল করে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দেয়।

যার ভয়াবহ প্রভাব পড়ে দেশটির অর্থনীতিতে। তিউনিসিয়ায় বর্তমানে বেকারত্বের হার ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়াও দেশটির ১২ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রায় ৪ মিলিয়ন নাগরিকই দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। তিউনিসিয়ান সাংবাদিকদের ন্যাশনাল ইউনিয়নের মতে, ৬০ জনের বেশি সাংবাদিক, আইনজীবী এবং বিরোধীদলীয় নেতা কারাগারে বন্দী রয়েছেন। বিরোধী দল বলছে, কারাবন্দী রাজনীতিবিদদের মুক্তি না দিলে এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতা দেয়া না হলে সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement