যেভাবে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখবেন
- ডয়চে ভেলে
- ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:৫০
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ফেসবুক। ফেসবুক এখন জীবনের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। আপনার একটু অসতর্কতার কারণে ফেসবুক আইডি হ্যাক বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যার ফলাফল হয় ক্ষেত্র বিশেষে খুবই ভয়াবহ। ইন্টারনেটে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা ওয়েবসাইট উইকিহাউ ডটকম ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার কয়েকটি উপায় জানিয়েছে। নয়া দিগন্তের পাঠকদের জন্য সেসব উপায় এখানে তুলে ধরা হলো:
ফেসবুকে লগ ইন: ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড টাইপ করুন। তবে কখনোই ‘কিপ মি লগড ইন' বক্স চেক করবেন না। এটা করলে আপনার অ্যাকাউন্ট বেহাত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। শুধু নিজের কম্পিউটারেই এই বক্সে হাত দেওয়া যেতে পারে।
পাসওয়ার্ড কাউকে বলা যাবে না: অনেক সময় অন্য ফেসবুক ব্যবহারকারীর সঙ্গে নিজের পাসওয়ার্ড শেয়ার করেন অ্যাকাউন্টধারীরা, যা থেকে অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটে। কোনো বন্ধুর সঙ্গে পাসওয়ার্ড শেয়ার করলে তিনি আপনার অ্যাকাউন্টে ঢুকে উলটোপালটা কিছু করতে পারেন। আর এতেই আপনি গুরুতর সমস্যায় পড়ে যেতে পারেন।
পাবলিক প্লেসে লগ ইন নয়: ঘুরতে বেরিয়ে বন্ধুদের মনে হতে পারে আস্থা করার মতো এবং আপনি পাবলিক প্লেসে যথাযথ নিরাপত্তা পদক্ষেপ ছাড়াই ফেসবুকে লগ ইন করলেন। এটাও আপনাকে গুরুতর সমস্যায় ফেলতে পারে।
# সাইবার ক্যাফে বা কোনো বন্ধুর কম্পিউটারে ফেইসবুক লগ ইনের সময় কখনো ‘কিপ মি লগড ইন' বা ‘সেভ পাসওয়ার্ড’-এ ক্লিক করা যাবে না।
# আপনার বন্ধুরা ফেসবুক ডিক্রিপটর সফটওয়্যার ইনস্টল করে থাকতে পারে, যা আপনার ফেসবুক লগ ইনের সব তথ্য স্টোর করবে। তাই এই সফটওয়্যারের বিষয়ে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ আপনার বন্ধুরা এবং সাইবার ক্যাফে কখনো আপনাকে তা জানাবে না।
# সব সময় এমন একটি পাসওয়ার্ড রাখতে হবে, যেটা কেউ ধারণা করতে না পারে। পাসওয়ার্ড অনেক বড়ও হতে পারে।
# তবে সহজ কিন্তু বড় একটা পাসওয়ার্ড দিলেই আপনার অ্যাকাউন্ট নিরাপদ হবে না। অন্যের অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিতে হ্যাকাররা ‘ডিকশনারি অ্যাটাক' নামে একটি কৌশল অবলম্বন করে যেখানে ইংরেজি বর্ণমালা দিয়ে তৈরি করা যায় এমন সব শব্দই ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের আক্রমণ থেকে অ্যাকাউন্ট রক্ষায় সব সময়ই সংখ্যা, প্রতীক যেমন !@#%^°& ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।
# পাসওয়ার্ডমিটার-এর মতো ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার পাসওয়ার্ড কতো শক্তিশালী তা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
# দুই থেকে তিন মাস পর পর আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। তাহলে কেউ আপনার পাসওয়ার্ড জানলেও একটা সময় পর আর ফেসবুকে ঢুকতে পারবে না।
# এই ভুলগুলোই বেশিরভাগ মানুষ করে থাকে। এ থেকে আপনাকে সাবধান থাকতে হবে। পাসওয়ার্ড, পাসওয়ার্ড ১২৩, নিজের নাম, বন্ধু-বান্ধবী-স্ত্রীর নাম, নিজের ডাক নাম এগুলোই অনেকে পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করেন। এখানে গুরুত্বপূর্ণ যে আপনার পরিচিত বা বন্ধুদের কেউ আপনার পাসওয়ার্ড পেতে চাইলে প্রথমেই এগুলো দিয়ে চেষ্টা করবে।
# একাধিক সাইটের জন্য একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা যাবে না। যেমন ফেসবুক, টুইটার ও গুগল অ্যাকাউন্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড রাখতে হবে। একই পাসওয়ার্ড হলে কেউ আপনার যে কোনো একটি অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারলে সেই পাসওয়ার্ড দিয়ে অন্যগুলোতেও ঢুকতে পারবে।
থার্ড পার্টি অ্যাপ নিয়ে সাবধান: আপনার ডিভাইস বা ফেইসবুকের ছাড়া অন্য কারও তৈরি অ্যাপ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশ ঠিক হবে না। এটা করলে ওই অ্যাপগুলো আপনার হয়ে যে কোনো পোস্ট আপলোডে সক্ষম হবে, যা নিরাপদ ফেসবুকের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এমন থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার করবেন যেটা ফেসবুক স্বীকৃত।
প্রাইভেসি সেটিংস: প্রাইভেসি সেটিংস নিতান্তই নিজের হাতে রাখতে হবে এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ৷ এর ধাপগুলো নীচে তুলে ধরা হলো –
# সেটিংসে যান, সবার উপরে ‘সিকিউর ব্রাউজিং' অপশন পাবেন৷ এই অপশনে ঢুকতে হবে এবং ‘ব্রাউজ ফেসবুক অন অ্যা সিকিউর কানেকশন (এইচটিটিপিএস) হোয়েন পসিবল' বক্স চেক করবেন। এটাও আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিরাপদ করবে।
# সেটিংসে যান, দ্বিতীয় অপশনে আপনি ‘লগইন নোটিফিকেশনস' পাবেন। এই অপশনে গিয়ে সেখানে যেসব বক্স পাওয়া যাবে সেগুলো চেক করতে হবে। এটার লাভ হলো, কোনো সময় আপনি অন্য কারো কম্পিউটার থেকে ফেসবুকে ঢুকলে সঙ্গে সঙ্গে আপনি একটা বার্তা পাবেন যে কেউ আপনার অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। এতে ব্রাউজার নেম, কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমও জানিয়ে দেয় এবং তা প্রয়োজনে আপনার অসুন্ধান সহজ করে দেবে।
# সেটিংসের তৃতীয় অপশন সিকিউরিটিতে যান। এখানে ‘লগইন অ্যাপ্রোভালস' অপশন পাবেন। ‘এডিটে' ক্লিক করুন এবং ‘রিকয়ার অ্যা সিকিউরিটি কোড টু অ্যাকসেস মাই অ্যাকাউন্ট ফ্রম আননোন ব্রাউজারস' বক্স চেক করুন। ‘লগইন অ্যাপ্রোভালস ইজ অ্যান এক্সট্রা লেয়ার অফ সিকিউরিটি দ্যাট ইউজেস ইওর ফোন টু প্রটেক্ট ইওর অ্যাকাউন্ট' লেখা একটি পপ আপ বক্স আসবে। ‘গেট স্টারটেড' লেখায় ক্লিক করুন। এর ফলে অপরিচিত কোনো ব্রাউজার থেকে আপনার ফেইসবুকে লগইনের চেষ্টা হলে ফেসবুক থেকে আপনার মোবাইলে একটি মেসেজ আসবে। বলাবাহুল্য, ফেসবুক মাঝেমাঝে এসব সেটিংসে ভাষাগত পরিবর্তন আনে। তবে, মূল বিষয়গুলো একই থাকে৷।
# আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হচ্ছে ‘টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন’। এই অপশন চালু করলে অপরিচিত ব্রাউজার থেকে লগ-ইন করার সময় পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি একটি কোড ব্যবহার করতে হবে আপনার, যা মোবাইল এসএমএস বা ফেসবুক অ্যাপের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যাবে। ফেসবুকে অনাকাঙ্খিত লগ-ইন রোধে এই পন্থা বেশ কার্যকর।
# সেটিংসে ‘ট্রাস্টেড কনট্রাক্টস'-এ যান। এতে ফেসবুকে আপনার ট্রাস্টেড কনটাক্টস তৈরি হবে, যা আপনি পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে বা কেউ আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করলে তা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে। খুব বেশি নয়, অন্তত তিনজনকে ট্রাস্টেড কনটাক্টসে রাখুন।
# সেটিংসে প্রাইভেসিতে যান। ‘হু ক্যান সি মাই স্টাফস' লেখা দেখতে পাবেন। এই অপশন এডিট করে ‘ফ্রেন্ডস অব ফ্রেন্ডস' থেকে ‘ফ্রেন্ডস (অনলি)' করুন। এটা না করলে আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ডদের ফ্রেন্ডরাও আপনার ‘স্টাফস' দেখতে পাবে। তাদের মধ্যে কেউ হ্যাকারও হতে পারে।
# ফটো/ভিডিও বা অন্য কোনো কিছু শেয়ার করার সময় আপনি ‘ফ্রেন্ডস' অপশনেও ক্লিক করতে পারেন। এতে আপনি যা শেয়ার করছেন তা শুধু আপনার বন্ধু তালিকায় যারা আছেন তারাই দেখতে পাবেন।
# সেটিংস পেইজে ‘টাইমলাইন অ্যান্ড ট্যাগিং'- এ ক্লিক করুন এবং ‘ফ্রেন্ডস টু ফ্রেন্ডস' থেকে ‘ফ্রেন্ডস (অনলি)' অপশনে চলে যান। এতে আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বাড়বে।
‘সেটিংস> জেনারেল> ডাউনলোড অ্যা কপি' – এই পদ্ধতিতে আপনার ফেইসবুক ডেটা ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করতে পারেন, যাতে হ্যাকারের কবলে ডেটা হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি মুক্ত থাকা যায়।
সেলিব্রেটি হলে ফেসবুক পেইজ খুলুন – যাদের কাছে ভক্তদের অনেক মেইল/মেসেজ আসে বা হুমকি দিয়ে বার্তা দেওয়া হয়, তাদের জন্য এটাই উত্তম পন্থা।
শুধু পরিচিতদেরই বন্ধু তালিকায় রাখুন – ‘পিপল ইউ মে নো'হিসেবে যারা আসে তাদের সবাইকে ফ্রেন্ড হিসেবে অ্যাড করবেন না। সাধারণত কিশোর-কিশোরীরা এটা করে থাকেন। এভাবে ফ্রেন্ড করা হলে তাদের মধ্যে হ্যাকারও আপনার বন্ধু তালিকায় চলে আসতে পারে।
নিয়মিত বন্ধু তালিকা চেক করবেন। হ্যাকাররা আপনার কোনো বন্ধুর নাম-ছবি ব্যবহার করে ভুয়া প্রোফাইল খুলতে পারে। কোনো হ্যাকারকে বন্ধু তালিকায় ঢুকতে দেওয়ার অর্থ তাকে আপনার ব্যক্তিগত কনটাক্ট ও তথ্যে প্রবেশাধিকার দেওয়া। শুধু বাস্তব জীবনে পরিচিতদেরই বন্ধু তালিকায় রেখে এই ঝুঁকি এড়িয়ে চলুন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা