বিশাল অঙ্কের জরিমানার মুখে ফেসবুক
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১১ জুলাই ২০১৮, ১০:১২, আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮, ১১:২৪
ব্রিটেনের তথ্য অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা ফেসবুককে পাঁচ লাখ পাউন্ড জরিমানার পরিকল্পনা করছে। ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির জের ধরে এই জরিমানার কথা ভাবছে ব্রিটেনের তথ্য কমিশনারের অফিস।
ব্রিটেনে এটাই হবে এ ধরণের সবচেয়ে বড় অঙ্কের জরিমানা। তবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এ জরিমানার অঙ্ক কমানোর চেষ্টা করবে কিনা সে বিষয়ে এখনো কিছু বলেনি।
ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল রাজনৈতিক দলের ব্যবহার জন্য তারা অনৈতিকভাবে কোটি-কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করেছিল।
ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং ইউরোপিয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসার বিষয়ে গণভোটের ফলাফল প্রভাবিত হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
তথ্য অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থাটি আরো জানিয়েছে আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি বিলুপ্ত হওয়া ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার সহযোগী সংস্থা এসসিএল ইলেকশনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার কথাও ভাবছে।
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য কিভাবে হুমকির মুখে পড়তে পারে সে সংক্রান্ত কোনো ব্যাখ্যা ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যবহারকারীদের কাছে ব্যাখ্যা করেনি।
এর পাশাপাশি সংস্থাটি ব্রিটেনের ১১টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি দিয়েছে যাতে তারা তাদের তথ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে এবং সেটি ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তা নিরীক্ষা করে।
ব্রিটেনে ব্রেক্সিট প্রশ্নে গণভোটের সময় রাজনৈতিক প্রচারণায় জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষটি নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে।
এ তদন্ত শুরুর ১৬ মাস পরে ব্রিটেনের তথ্য কমিশনারের অফিস থেকে ফেসবুককে জরিমানার উদ্যোগ এসেছে।
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের যেসব ব্যক্তিগত তথ্য ছিল সেগুলো যাতে তারা মুছে ফেলে সেটি ফেসবুক নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এতে ফেসবুকের নিয়ম-নীতির লঙ্ঘন হয়েছে বলে মনে তথ্য কমিশনারের অফিস।
তবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা জানিয়েছিল, ফেসবুকের কাছ থেকে তথ্য মুছে ফেলার অনুরোধ পাওয়ার পর তারা সব তথ্য মুছে ফেলেছে।
কিন্তু তথ্য কমিশনার অফিস বলছে, সেসব তথ্য যে অন্যদের দেয়া হয়েছে সে সংক্রান্ত প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে।
তীব্র বিতর্কের মুখে গত মে মাসে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
এর আগে গত এপ্রিল মাসে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চ-কক্ষে বিচার ও বাণিজ্য বিষয়ক যৌথ কমিটির ৪৪ জন সিনেটরের মুখোমুখি হন মার্ক জাকারবার্গ।
অভিযোগ রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণা দলের সাথে যুক্ত যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা প্রায় পাঁচ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করেছে।
যদিও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ পরে মোট আট কোটি ৭০ লাভ গ্রাহকের তথ্য চুরির খবর নিশ্চিত করে।
আরো পড়ুন : গেমের নেশাকে ‘মানসিক রোগ’ বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
কম্পিউটারে গেম খেলার প্রতি নেশাকে এই প্রথম একটি মানসিক রোগ হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
১১তম ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজেস বা আইসিডি-তে এটিকে ‘গেমিং ডিজঅর্ডার’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ সংক্রান্ত খসড়া দলিলে এই গেমিং আসক্তিকে বর্ণনা করা হয়েছে এমন এক ধরণের আচরণ হিসেবে, যা জীবনের আর সব কিছুর আকর্ষণ থেকে একজনকে দূরে সরিয়ে নেয়।
বিশ্বের কিছু দেশে গেমিং আসক্তিকে ইতোমধ্যে একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যসহ কিছু দেশে তো ইতোমধ্যে এর চিকিৎসার জন্য প্রাইভেট এডিকশন ক্লিনিক পর্যন্ত রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯২ সালে সর্বশেষ ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজেস বা আইসিডি তৈরি করেছিল। নতুন গাইডলাইনটি প্রকাশিত হবে এ বছরই।
এই গাইডে বিভিন্ন রোগের কোড, লক্ষণ এবং উপসর্গ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকে। চিকিৎসক এবং গবেষকরা এটির সঙ্গে মিলিয়ে রোগ নির্ণয়ের করার চেষ্টা করেন।
গেমিং আসক্তিকে কখন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করা হবে, তার বিস্তারিত থাকছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই গাইডলাইনে।
এতে বলা হয়েছে, ১২ মাস সময় ধরে অস্বাভাবিক গেমিং আসক্তি বা আচরণ দেখা গেলে তা নির্ণয়ের পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে যদি অস্বাভাবিক আচরণের মাত্র অনেক বেশি তীব্র হয়, তখন ১২ মাস নয়, তার আগেই ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
যেসব লক্ষণের কথা এতে উল্লেখ করা হয়েছে:
• গেমিং নিয়ে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা (বিশেষ করে কত ঘন ঘন, কতটা তীব্র এবং কত দীর্ঘ সময় ধরে গেমিং করছে, সে বিষয়ে)
• গেমিং-কেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া
• নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও গেমিং অব্যাহত রাখা বা আরও বেশি গেমিং করা
লন্ডনের নাইটিংগেল হাসপাতালের টেকনোলজি এডিকশন স্পেশালিস্ট ড. রিচার্ড গ্রাহাম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।
‘এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর ফলে আরও বিশেষায়িত চিকিৎসার সুযোগ তৈরি হবে। এতে করে এ ধরণের গেমিং আসক্তিকে লোকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নেবে।’
তবে যারা গেমিং আসক্তিকে একটি মানসিক ব্যাধি হিসেবে দেখার বিপক্ষে, তাদের প্রতিও তিনি সহানুভূতিশীল।
তিনি স্বীকার করছেন যে অনেক বাবা-মা এ নিয়ে বিভ্রান্ত হতে পারেন। কেবল গেমিং এ উৎসাহী বলে সন্তানদের তারা ‘অসুস্থ’ বলে ভাবতে পারেন।
ড. রিচার্ড গ্রাহাম জানান, বছরে তিনি ডিজিটাল আসক্তির প্রায় ৫০টির মতো কেস দেখেন। এই আসক্তির কারণে এদের ঘুম, খাওয়া-দাওয়া, সামাজিক মেলা-মেশা এবং শিক্ষার ওপর কি প্রভাব পড়ে, সেটার ওপর ভিত্তি করে আসক্তির সমস্যার মাত্রা বোঝার চেষ্টা করা হয়।
রোগী দেখার সময় একটা জিনিসকেই তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। এই গেমিং আসক্তি ‘নিউরোলজিক্যাল সিস্টেম’কে কতটা প্রভাবিত করছে। এটি চিন্তার ক্ষমতা বা নিবিষ্ট থাকার ক্ষমতার ওপর কি প্রভাব ফেলছে।
বিশ্বের অনেক দেশই গেমিং এর আসক্তি নিয়ে চিন্তিত। দক্ষিণ কোরিয়ায় তো সরকার এমন আইন করেছে যাতে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুরা মধ্যরাত হতে ভোর ছটা পর্যন্ত অনলাইন গেম খেলতেই না পারে।
জাপানে কেউ যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ের বেশি গেম খেলে তাকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। চীনে সেখানকার সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান টেনসেন্ট শিশুরা কতক্ষণ গেম খেলতে পারে তার সময় বেঁধে দিয়েছে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হচ্ছে, শিশুরা যদিও প্রচুর সময় স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে কাটায়, কিন্তু তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে এই ডিজিটাল জগতকে ভালোই খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়েদের তুলনায় ছেলেরাই ভিডিও গেম খেলায় বেশি সময় দেয়।
গবেষণক কিলিয়ান মুলান বলেন, ‘মানুষের ধারণা শিশুরা দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা স্ক্রীনের সামনে বসে থাকছে, আর কিছু করছে না। আসলে তা নয়। আমাদের গবেষণায় আমরা দেখছি, তারা প্রযুক্তিকে নানা কাজে ব্যবহার করছে। এমনকি স্কুলের হোমওয়ার্ক করার জন্যও তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।’
‘আমরা বড়রা যেভাবে করি, অনেকটা সেভাবে শিশুরাও আসলে তাদের ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারটা সারাদিন ধরেই অন্য অনেক কিছুর ফাঁকে ফাঁকে করছে, একবারে নয়।’
সূত্র: বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা