২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বাতাসভরা হালকা কংক্রিট কমাবে কার্বন নির্গমন

বাতাসভরা হালকা কংক্রিট কমাবে কার্বন নির্গমন - ছবি : সংগৃহীত

কংক্রিট ছাড়া বড় নির্মাণ প্রকল্প অকল্পনীয়। অথচ উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রয়োগ পর্যন্ত কংক্রিটের কার্বন ফুটপ্রিন্ট অত্যন্ত বেশি। সেই ক্ষতির মাত্রা কমাতে বিজ্ঞানীরা এক ঢিলে দুই পাখি মারার উদ্যোগ নিচ্ছেন।

তথাকথিত ‘এক্সপ্যান্ডেড ক্লে' নামের ক্ষুদ্র বাতাসভরা মাটির গোলক মেশালে কংক্রিটের ওজন কমে যায়। এই উপাদান হয়তো কংক্রিটের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে পারবে। কাচের ক্ষুদ্র গোলক দিয়েও সেটা সম্ভব।

মেটিরিয়াল্স বিজ্ঞানী হিসেবে কার্ল-ক্রিস্টিয়ান টিনেল বলেন, ‘দুই উপাদানের মূল বৈশিষ্ট্য হলো অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে শক্ত অবয়বের মধ্যে বাতাস ভরা হয়। যত বেশি বাতাসের সুষম বণ্টন ঘটবে, উপাদানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও তত ভালো হবে।'

ওই উপাদান দিয়ে তৈরি তথাকথিত ‘ইনফ্রা লাইটওয়েট কংক্রিট'-এর মধ্যে এত বাতাস থাকে যে সেটি পানির উপরেও ভাসতে পারে।

জার্মান সেনাবাহিনীর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিস্টিয়ান টিনেল ও তার টিম ‘ইনফ্রা লাইটওয়েট কংক্রিট'-এর গঠন নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন। প্রথমে ‘এক্সপ্যান্ডেড ক্লে', তারপর পানি ও সবশেষে সিমেন্ট যোগ করতে হয়। প্রচলিত কংক্রিটের প্রায় এক-চতুর্থাংশ ওজনের এই কাঠামো কিন্তু নির্মাণের সাইটে ব্যবহার করা কঠিন। তা সত্ত্বেও টিম যথেষ্ট সন্তুষ্ট।

মেটিরিয়াল্স বিজ্ঞানী হিসেবে ন্যান্সি বয়েন্টার মনে করিয়ে দেন, ‘কংক্রিট কিন্তু ঢালতেও পারা চাই। সুন্দর চকোলেট মুসের মতো গঠন হতে হবে।'

ওই কংক্রিট দিয়ে দেয়াল তৈরি করা যায়। যার মধ্যে বাতাসের কারণে ইনসুলেশনের মাত্রাও খুব ভালো হয়। এমন দেয়ালের বাড়তি ইনসুলেশনের প্রয়োজন হয় না। ফলে স্টাইরোফোম ব্যবহার করতে হয় না। ‘ইনফ্রা লাইটওয়েট কংক্রিট' অন্যভাবেও জলবায়ুকে সাহায্য করে।

কার্ল-ক্রিস্টিয়ান টিনেল বলেন, ‘ছিদ্র থাকায় আমি বাতাস থেকে সিওটু অথবা সার্বিকভাবে সিওটুসহ বাতাস ঢুকিয়ে দিতে পারি। ওই বাতাস কংক্রিটের মধ্যে ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইডের সংস্পর্শে এলে সিওটু আটকা পড়ে। ফলে উৎপাদনের সময় যে সিওটু নির্গমন হয়, এভাবে তার কিছু অংশ সাশ্রয় করা যায়।'

ছিদ্রের মাধ্যমে ‘ইনফ্রা লাইটওয়েট কংক্রিট' মূলত গ্রিনহাউস গ্যাস শুষে নেয়। কংক্রিটের মিশ্রণ তৈরির রাসায়নিক প্রক্রিয়ার সময় যে ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড সৃষ্টি হয় এবং কংক্রিটের মধ্যে থেকে যায়। সেটি বাতাস থেকে সিওটু শুষে নেয় এবং কয়েক বছর পর আবার চুনাপাথরে পরিণত হয়।

তা সত্ত্বেও কংক্রিট স্থিতিশীল থাকে। স্ক্যানিং ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে বিজ্ঞানীদের টিম লক্ষ্য করেছে যে কংক্রিটের মধ্যে সূঁচালো অংশ সৃষ্টি হয়। যেগুলি একে অপরের সাথে আটকে গিয়ে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।

ন্যান্সি বয়েন্টার বলেন, ‘কীভাবে মাইক্রোস্ট্রাকচারের বিকাশ ঘটে, আমরা তা পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি কঠিন পদার্থ হিসেবে। যেভাবে সূঁচালো অংশগুলি সৃষ্টি হয়, তা কংক্রিটের শক্ত গঠন নিশ্চিত করে। একইসাথে কাঠামোর মধ্যে ছিদ্রও লক্ষ্য করছি। প্রচলিত কংক্রিটের তুলনায় অনেক বেশি ছিদ্র ও বাতাস তার মধ্যে রয়েছে।'

কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রচলিত কংক্রিটের তুলনায় হালকা এই সংস্করণ কতটা মজবুত?
এক পরীক্ষায় তা দেখা যাচ্ছে। প্রচলিত কংক্রিটের এক ব্লকের উপর চাপ সৃষ্টি করে দেখা গেল যে ৬০ টন চাপের মুখে সেটি ভেঙে যায়। তারপর মাত্র নয় টন ওজনের চাপেই হালকা কংক্রিট ভেঙে গেল।

টিনেল বলেন, ‘ভবনের এমন গঠন আজকালকার ইটের গাঁথনির তুলনায় অনেক বেশি মজবুত। আমাদের কংক্রিটের মানও যথেষ্ট বেশি। যা এখানে বিকৃতির সীমার ক্ষেত্রে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এমন কংক্রিট দিয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় নির্মাণ করা যায়। এ ক্ষেত্রে আমাদের ট্র্যাকিংয়ের বড় সুবিধা রয়েছে। নমুনাটি পুরোপুরি ভেঙে গেলেও প্রায় অর্ধেক ধারণ ক্ষমতা রয়েছে।'

ক্রিস্টিয়ান টিনেলের মতে, স্বাভাবিক পদ্ধতিতে ভবন নির্মাণের জন্য এমন মাত্রার মজবুত গঠন যথেষ্ট। তবে সেটি দিয়ে সেতু অথবা বহুতল ভবন নির্মাণের পরামর্শ দিচ্ছেন না তিনি।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement