সোনালি সৌন্দর্যে সোনালু
- আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
- ১৮ মে ২০১৯, ১২:৫৪, আপডেট: ১৮ মে ২০১৯, ১৫:০১
সোনাঝরা এই ফুলের নাম সোনালু। কিশোরীর কানের দুলের মতো বৈশাখী হাওয়ায় দুলতে থাকে হলুদ-সোনালি রঙের থোকা থোকা ফুল। আবার ফুলের ফাঁকে দেখা যায় লম্বা ফল। হলুদবরণ সৌন্দর্যে মাতোয়ারা করে রাখে চারপাশ।
খরতাপে চলতি পথে পথিকের নজর কাড়বেই। গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে যেসব ফুল ফোটে তার মধ্যে সোনালু উল্লেখযোগ্য। গ্রীষ্ম রাঙানো এ ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি তার নামের বাহার- সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল, বান্দরলাঠি ইত্যাদি।
মানিকগঞ্জে এই ফুল বান্দরলাঠি নামেই বেশি পরিচিত! ইংরেজি নাম- Golden Shower Tree, বৈজ্ঞানিক নাম- Cassia fistula। Caesalpiniaceae পরিবারের সদস্য। আদিনিবাস পূর্ব এশিয়া। তবে হাজার বছর আগেও এ গাছ আমাদের উপমহাদেশে ছিল। মহাকবি ব্যাস-এর ভগবত কিংবা কালিদাস-এর মেঘদূত-এ এই ফুলের গুণ-কীর্তন করা হয়েছে।
উদ্ভিদবিষয়ক একাধিক জার্নাল মারফত জানা যায়, সোনালু গাছ আকারে ছোট। ডালপালা ছড়ানো-ছিটানো। দীর্ঘ মঞ্জুরিদণ্ডে ঝুলে থাকা ফুলগুলোর পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি। সবুজ রঙের একমাত্র গর্ভকেশরটি কাস্তের মতো বাঁকানো। এ গাছের ফল বেশ লম্বা, লাঠির মতো গোল। তাছাড়া এর ফল, ফুল ও পাতা বানরের প্রিয় খাবার। এজন্য এ ফুলের আরেক নাম বান্দরলাঠি। গাঢ় সবুজ রঙের পাতাগুলো যৌগিক, মসৃণ ও ডিম্বাকৃতির। ফুল এক থেকে দেড় ইঞ্চি পর্যন্ত চওড়া হয়।
এ গাছের কাঠ জ্বালানি ছাড়াও অন্যান্য কাজে লাগে। ফলের শাঁস বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে কাজে লাগে। বাত, বমি ও রক্তস্রাব প্রতিরোধে উপকারী। বীজ সহজেই অঙ্কুরিত হয়, যদিও বৃদ্ধি মন্থর। এছাড়াও এ গাছের বাকল, রঙ ও ট্যানিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়।
গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে গ্রামে একসময় অনেক সোনালু গাছ চোখে পড়তো। এছাড়াও হাট, বাজার ও গঞ্জের চারপাশেও দেখা যেত হলুদিয়া সাজের সোনালুর উপস্থিতি। এখন হাতেগোনা কিছু গাছ দেখা যায় পথে প্রান্তরে। দিন দিন কমে আসছে সোনালুর সংখ্যা।
কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করেন, এ গাছের কাঠ খুব একটা দামি নয় বলে কিংবা গাছটি খুব ধীরে বাড়ে বলেই কেউ আর তেমন উৎসাহ নিয়ে সোনালু গাছ রোপণ করেন না। প্রাকৃতিকভাবে যা হয়, তার ওপর ভর করেই হলুদ-সোনালি রঙের সৌন্দর্য বিতরণ করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে সোনালু। এক সারিতে বেশ কয়েকটি গাছে যদি ফুল ফোটে তাহলে সে দৃশ্য বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
সোনালু গাছ সাধারণত যত্ন করে লাগানো হয় না বরং সে নিজেই বেড়ে ওঠে অযত্নে অবহেলায়। নিরবে বেড়ে ওঠে, থাকেও নিষ্প্রাণ নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে। যখন ফুল ফোটে তখন কারো সাধ্য নেই এই গাছকে দৃষ্টি না দিয়ে এড়িয়ে যাবার। বেড়ে ওঠার সময় তেমন দৃষ্টিতে না পড়লেও ফুল ফোটার পর দেখে সবার মন-প্রাণ প্রশান্তিতে ভরে যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা