পলিথিন ব্যবহার কেন বন্ধ করবেন?
- বিবিসি
- ০৬ জুন ২০১৮, ০৮:২৮
বাংলাদেশে একটা সময় ছিল যখন বাজারে গেলে মানুষজন হাতে করে একটা চটের ব্যাগ নিয়ে যেতেন।
কিন্তু আশির দশকে প্রথম বাজারে পলিথিনের ব্যবহার শুরু হয়।
এর পর থেকে বাজারে যে ধরনের দোকানেই যান না কেন বিনে পয়সায় পলিথিনের ব্যাগ দেয়া শুরু হল।
সহজে সকল দোকানে বিনে পয়সায় চাইলেই পলিথিনের ব্যাগ পাওয়া যায়।
পশ্চিমা বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে অনেক পরের দিকে পলিথিন ব্যবহার শুরু করেছে।
কিন্তু তা এতটাই বড় বিপর্যয় ডেকে আনে যে, ব্যবহার শুরুর ১৫ থেকে ২০ বছরের মাথায় ২০০২ সালের জানুয়ারি থেকে এর উৎপাদন, পরিবহন, মজুদ ও ব্যবহারকে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়।
শুরুর দিকে বেশ কড়াকড়ি হলেও ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে যায় আইনের প্রয়োগ।
আর এখন বাংলাদেশে এটি যে নিষিদ্ধ তার বোঝারই কোন উপায় নেই।
কিন্তু কেন প্লাস্টিক বর্জন করা উচিত?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক ডঃ হাফিজা খাতুন বলছেন, প্লাস্টিক এমন একটি পদার্থ যার আয়ুষ্কাল হাজার হাজার বছর।
যা মাটিতে গেলে ক্ষয় হয়না বা মাটির সাথে মিশে যায়না।
এটি মাটিতে পানি ও প্রাকৃতিক যে পুষ্টি উপাদান রয়েছ তার চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে। যার ফলে মাটির গুনগত মান হ্রাস পায়।
গাছ তার খাবার পায়না। মাটি ও পানিতে প্লাস্টিক কণা ছড়িয়ে পড়ে। যা হয়ত পানি থেকে মাছের শরীরে যাচ্ছে।
মাটিতে প্লাস্টিকের তৈরি টক্সিক রাসায়নিক পদার্থ গাছে মিশে যাচ্ছে। আর তা শেষমেশ শুধু পশু পাখি নয় মানুষের শরীরেও এসে পৌছায়। প্লাস্টিক মানুষের শরীরে আরো অনেক মরণ ব্যাধির পাশাপাশি ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
যে সুবিধার জন্য আপনি প্লাস্টিক ব্যবহার করেন যেমন ফুটো না হলে এতে পানি ঢোকে না বা বের হয়না।
সেই একই কারণে পলিথিন বা প্লাস্টিকের বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলে দিলে তা নর্দমায় আটকে গিয়ে পানির প্রবাহে বাধা দেয়।
যার ভুক্তভোগি ঢাকা শহরের লক্ষ লক্ষ মানুষ। একটু বৃষ্টি হলেই জমে যায় পানি।
পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আর্থ ডে নেটওয়ার্ক এক প্রতিবেদনে বলছে বিশ্বে প্লাস্টিক দূষণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ১০ নম্বরে।
কেন এটির ব্যবহার ও উৎপাদন বন্ধ করতে পারছে না বাংলাদেশ?
ডঃ হাফিজা খাতুন বলছেন, "আমাদের দেশে ব্যবসায়িক ও আর্থিকভাবে লাভজনক না হলে মানুষ কিছু করে না। শুধু সচেতনতা বা সমাজের কল্যাণের জন্য কিছু হয়না। পলিথিন ব্যাগ সাধারণের জন্য অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক কারণ এটি সস্তা ও সহজে পাওয়া যায়। যখন আর্থিকভাবে লাভজনক বিকল্প আসবে শুধুমাত্র তখনই এর ব্যবহার আমি ছাড়বো"
এটি হয়ত একটি কারণ। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল বিশ্বে যে দেশটি সবচেয়ে আগে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিলো সেটি হল বাংলাদেশ।
কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখা গেলো বিষয়টি মারাত্মকভাবে তার গুরুত্ব হারিয়েছে। ক্রেতা ও বিক্রেতা দু পক্ষের কাছেই।
একজন ক্রেতা বলছেন, "বাজার থেকে ফেরার সময় টপ টপ করে মাছ বা মাংসের রক্ত পড়ছে না। হঠাৎ পথের মধ্যে কাগজের ব্যাগের মতো ছিঁড়ে পড়ে যাচ্ছে না"
পশ্চিমের দেশগুলোতে দোকানে এমন ব্যাগের জন্য পয়সা নেয়া শুরুর পর থেকে অনেকেই সাথে করে ব্যাগ নিয়ে যাওয়া শুরু করেছেন।
বাংলাদেশে সেই অভ্যাস চলে গেছে পলিথিনের কারণে। আইনে করে নিষিদ্ধ করার পর সেই আইনের প্রয়োগ কেন হচ্ছে না?
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী বলছেন, বাংলাদেশে পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে ১৭ টি পণ্যের সংরক্ষণ ও পরিবহন পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
২০০২ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে ৯৩১ টন পলিথিন জব্দ করা হয়েছে। ৫২ টি কারখানা উচ্ছেদ হয়েছে।
মিঃ চৌধুরী বলছেন, "আমাদের একার পক্ষে সারা দেশে এটি থামানোর অভিযান চালানো সম্ভব নয়। তাছাড়া মানুষকে বোঝানো আমাদের জন্য সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা বাজার কমিটির সাথে কাজ করছি যাতে তারা বাজারে এটা বন্ধ করে"
কিন্তু পলিথিনের ব্যাবহার রোধের বিষয়টি দেশব্যাপী যে গুরুত্ব হারিয়েছে সেটি বাজারে গেলে বা রাস্তায় সামান্য একটু হাঁটলেই বোঝা যায়।
বাড়ির দরজা থেকে শুরু করে নদী, নালা, ড্রেন সবখানেই মিশে গিয়ে যেন পৃথিবীর শ্বাসরোধ করে ফেলেছে পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রী।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা