১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশনে বন্যার্তদের গবাদিপশুসহ আশ্রয়

‘আমরা ত্রাণ চাই না গো-খাদ্য চাই’

বাড়িঘরে বন্যার পানি উঠায় গবাদিপশুসহ রেলস্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন দেওয়ানগঞ্জের মানুষ - ছবি : নয়া দিগন্ত

‘আংগোরে সায্য দেওয়া নাগবোনা, আমরা সায্য চাইনা, আংগোরে গরু মোষের ঘাস, খ্যাড় দিবেন, গরু মোষ মরবার ধরছে। ঘাস খ্যাড় পাই কই? গরু গুল্যা মরবার ধরছে। না খাবার পায়া গায়ের পালানের দুধ বন্ধ হবার ধরছে।’

কথাগুলো বলেছেন দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী ইউনিয়নের গুজিমারী রেললাইনের বাসিন্দা কৃষক মো: আলম শেখ। বর্তমানে বাড়িতে বন্যার পানি উঠায় দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশনে গবাদিপশু ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।

এ সময় তার মতো করে বলেন তারা মিয়া, মো: খোরশেদ আলী, শরিফা বেগম, মোগর আলীসহ অন্যান্য রেলস্টেশনে আশ্রিত কৃষকরা।

এবার বন্যা শুরুর প্রথমদিকে উপজেলার চুকাইবাড়ী ইউনিয়নের গুজিমারী গুচ্ছগ্রাম, গুজিমারী আশ্রয়কেন্দ্র, গুজিমারী রেললাইনে বসবাসকারী বাসিন্দা ও হলকার চর গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়ি-ঘরে পানি উঠে। এ সময় তারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য গবাদিপশু ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসে উঠেন রেলওয়ে হাইস্কুল, রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আত্মীয়-স্বজনের বাসা-বাড়িতে। সেখানে স্থানাভাব দেখা দেয়ায় দুই শতাধিক কৃষক পরিবার গবাদিপশু, মালামালসহ এসে উঠেন দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন প্লাটফরমে। সেখানে তারা গত পাঁচ দিন ধরে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে অতিকষ্টে জীবনযাপন করছেন।

রেল স্টেশনে বসবাসকারী খোকন মিয়া, মেহেরুন নেছা, সাহেব আলী, সুরুজ্জামান, কমলা, কুলসুম, খুকি, নিলুফাসহ অনেকেই জানান, ‘বাড়িঘরে পানি উঠায় তারারা পাঁচ দিন ধরে রেলস্টেশনে গবাদিপশুসহ আশ্রয় নিয়েছি। চুকাইবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মো: সেলিম খানসহ মেম্বার সাহেব মাঝে মাঝে খোঁজ নিচ্ছেন। এখানে আমরা অনেক কষ্টে আছি। পানি কখন কমবে তা জানি না। রাতে গৃহকর্তা পানিতে নিমজ্জিত বাড়ি-ঘরের মালামাল পাহারা দিতে যায়, আমরা যারা গৃহিণী তারা গবাদিপশুসহ থাকি স্টেশনে। সবচেয়ে বড় বিপদ আমাদের গবাদিপশুর খাদ্য নিয়ে। এছাড়া দিন-রাত যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন আসা-যাওয়া করে। এ সময় উচ্চ শব্দে হুইসেল ও লোক সমাগমে আমাদের ঘুম হয় না। গবাদি পশু ও শিশুরা চমকে উঠে। কোথাও গো-খাদ্য পাওয়া যাচ্ছে না। গরু, মোষ, ছাগল, ভেড়া শুকিয়ে যাচ্ছে। আর ক’দিন এভাবে থাকলে এদের বাঁচিয়ে রাখা অসম্ভব হবে।’

উল্লেখ্য, দেওয়ানগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হচ্ছে।

পানিমাপক আ: মান্নান নয়া দিগন্তকে জানান, আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যার পানিতে পৌরসভাসহ উপজেলার আট ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ফসলাদির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেক রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। যোগাযোগে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement