ভালুকায় বিষপানে কলেজছাত্রীর মৃত্যু
- আসাদুজ্জামান, ভালুকা (ময়মনসিংহ)
- ১০ জুন ২০২৪, ১৭:৩৭
ময়মনসিংহের ভালুকায় কাবিনের দুই সপ্তাহ পর ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করায় এবং তা না দিলে বিয়েতে ছেলের অস্বীকৃতির কারণে জাহেদা খাতুন (১৮) নামে এক কলেজছাত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (১০ জুন) ভোরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় জাহেদা খাতুন মারা যান। এর আগে ঘটনাটি ঘটে উপজেলার উপজেলার পাচগাঁও গ্রামে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পাচগাঁও গ্রামের জয়নাল আবেদীনের মেয়ে মল্লিকবাড়ি শহীদ নাজিম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী জাহেদা খাতুনের সাথে পাশের বহুলী গ্রামের শাহাব উদ্দিনের ছেলে গোলাম কিবরিয়ার প্রথমে মোবাইলে যোগাযোগ হয় এবং গত তিন-চার বছর ধরে তাদের প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। গত দুই সপ্তাহ আগে এলাকার লোকজন মল্লিকবাড়ি ব্রিজের ওপর থেকে কিবরিয়া ও জাহেদাকে এক সাথে পেয়ে ধরে নিয়ে যায় মল্লিকবাড়ি বাজারে। পরে পাঁচগাও এলাকার ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম ও মল্লিকবাড়ি ইউপি সদস্য শামছুল হকের উপস্থিতিতে দুপক্ষের লোকজনের সম্মতিতে স্থানীয় কাজী আবুল হোসেনের মাধ্যমে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকার কাবিনা হয়। কিন্তু কাবিনের দুই সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই কিবরিয়া মোবাইলে জাহেদা খাতুনের কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন এবং বলা হয়, ওই টাকা না দিলে বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।
বিষয়টি জাহেদা তার বড় ভাই জিকু মিয়াসহ পরিবারের সদস্যদের জানানোর পর হতদরিদ্র পরিবার এতো টাকা দিতে পারবেনা বলে অস্বীকৃতি জানায়। এনিয়ে জাহেদা দুইদিন খুবই মন খারাপ অবস্থায় থাকার পর রোববার (৯ জুন) সন্ধ্যায় জাহেদা খাতুন মোবাইলে কিবরিয়াকে ফোন দিয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করছে বলে জানায়।
এ সময় কিবরিয়া বুঝতে পেরে ফোন কেটে দিয়ে সে জাহেদার বড় ভাই জিকু মিয়াকে ফোনে জানায়, জাহেদা বিষপান করছে, আপনারা খোঁজ নেন। পরে জিকু দৌড়ে জাহেদার ঘরে গিয়ে দেখেন, সে বিষপান করে মেঝেতে পড়ে ছটফট করছে। এ সময় পরিবারের লোকজন জাহেদাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ভালুকা সরকারি হাসপাতাল ও পরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর সোমবার (১০ জুন) ভোরে জাহেদা খাতুন মারা যান।
জাহেদার বড় ভাই জিকু মিয়া জানান, তাদের পরিবারটি খুবই অস্বচ্ছল। তার এক মাত্র বোনের কাবিন হওয়ার পর ছেলে তাদের কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে এবং টাকা না দিলে সে বিয়ে করবে না বলে তার বোনকে জানায়। কিন্তু এতো টাকা তাদের পরিবারের পক্ষে কোনো মতেই সম্ভব নয়। কাবিন হলেও টাকার জন্য তার বিয়ে হবে না, বিষযটি তার বোন মেনে নিতে পারছিল না। তাই ছেলের সাথে মোবাইলে কথা বলতে বলেতে সে বিষপান করে এবং হাসপাতালে নেয়ার পর তার একমাত্র বোনটি মারা যায়। তারা এ ব্যাপারে মামলা করবেন বলে জানান।
মেয়ের বাবা জয়নাল আবেদীন জানান, যৌতুকের বিষয়টি তার মেয়ের কাছ থেকে জানতে পারেন। পরে তিনি ছেলেকে বলেছিলেন, মেয়েকে বিয়ে করে তার বাড়িতে তুলে নেয়ার পর টাকা দিবেন।
কাজি আবুল হোসেন জানান, দুই সপ্তাহ আগে মেম্বারদের উপস্থিতে দুপক্ষের লোকদের সম্মতিতে তার অফিসে ওই ছেলে মেয়ের তিন লাখ ৫০ হাজার টাকার কাবিন হয়। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না।
মল্লিকবাড়ি ইউপি সদস্য শামছুল হক জানান, তাদের উপস্থিতেই দুই পরিবারের লোকজনের সম্মতিতে কাবিন হয়। ছেলে বলেছিল, বিয়ে করে পরে মেয়েকে তুলে নিবে। কিন্তু যৌতুকের কারণে মেয়ের বিষপানে মারা যাওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, জাহেদা তার প্রতিবেশী। তার চাচা মোতালেব মিয়া একজন গ্রাম পুলিশের সদস্য। বিষপানে আত্মহাত্যার বিষয়টি তিনি ওই মেয়ের চাচার কাছ থেকে মোবাইলে শুনেছেন। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। বিয়ের আগেই মেয়ে পক্ষের কাছে ছেলের এতো টাকা যৌতুক দাবি করা উচিত হয়নি। তিনি ছেলের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি জানান।
ভালুকা মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ শাহ কামাল আকন্দ জানান, লিখিত অভিযোগ দেয়ার জন্য নিহতের পরিবারকে বলা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা