পিএইচডি শিক্ষার্থীর কাছে হেনস্তার শিকার বাকৃবি অধ্যাপক!
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৩ মে ২০২৪, ১৯:৫৪
পিএইচডি ডরমিটরি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার বসুনিয়া এবং পিএইচডি শিক্ষার্থী শুভশ্রী সরকার এবং রেহানা সুলতানা নামের তিন শিক্ষার্থী পিএইচডি ডরমিটরি ভবন সংস্কারের কাজ তদারকি করার সময় আকস্মিকভাবে তদারকি কাজে বাধা দিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করেছেন বলে লিখিত অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পিএইচডি ডরমিটরি ভবন সংস্কারের তদারকি কমিটির সদস্য ও ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলাম।
সোমবার (২৩ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্ট্রার, ছাত্র বিষয়ক বিভাগ, প্রক্টর অফিস এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি বরাবর ওই ঘটনার বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগপত্র প্রেরণ করেন ওই ভুক্তভোগী অধ্যাপক ।
অভিযোগপত্রে অধ্যাপক পূর্বা বলেন, পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া পিএইচডি ডরমিটরি ভবনের সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ চলমান। কাজের তালিকা অনুযায়ী, নতুন করে ভবনটির ২য় তলা নির্মাণ এবং নিচতলা সংস্কার কাজ হওয়ার কথা। ইতোমধ্যেই ২য় তলার কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। পিএইচডি ডরমিটরি ভবনের সংস্কার ও উন্নয়ন কাজের তদারকি কমিটির সদস্য হিসেবে বুধবার (২২মে) বেলা ১১টার দিকে আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে ওই ভবনে যাই। ওই সময় আমার সাথে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ বিভাগ) মোহা: তৌহিদুল ইসলাম ও সিনিয়র-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ বিভাগ) ফারুক আহমেদও ছিলেন। আমাদের কাজ চলাকালীন পিএইচডি শিক্ষার্থী অমিত কুমার বসুনিয়া, শুভশ্রী সরকার এবং রেহানা খাতুন সেখানে উপস্থিত হন। আমাদের দেখেই তারা আক্রমণাত্মকভাবে কথা বলতে শুরু করেন এবং তদারকি কাজে বাধা প্রদান করেন। তারা আমাদেরকে বার বার অভিযুক্ত করে বলতে থাকেন যে, তদারকি কমিটি কাজ শেষ না করার কারণে নিচ তলা থেকে ২য় তলায় তাদের আবাসন স্থানান্তর করা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমি তাদেরকে একাধিকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, শিক্ষার্থীদের আবাসন স্থানান্তরের সাথে তদারকি কমিটির কোনো সম্পর্ক নাই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে শিক্ষার্থীদের ২য় তলায় উঠার অনুমতি দিতে পারেন। শিক্ষার্থীদের সাথে কাজ করবে বিশ্ববিদ্যা্যলয় প্রশাসন। তদারকি কমিটির সাথে শিক্ষার্থীদের কাজের কোনো সংশ্লিষ্টতা নাই।
অভিযোগপত্রে অধ্যাপক পূর্বা আরো বলেন, আমার সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রকৌশলী মোহা: তৌহিদুল ইসলাম দ্রুত কাজ শেষ করার আশ্বাস দিতে থাকেন ওই শিক্ষার্থীদের। ওই সময় অমিত কুমার বসুনিয়া আমাদের উদ্দেশ করে চিৎকার দিয়ে বলেন, ‘এই মিয়া, এইখানে ফাইজলামি করতে আসছেন আপনারা।’ তারা এরকম আপত্তিকর কথাবার্তা চালিয়ে যেতে থাকলে আমরা কর্মস্থল ত্যাগ করে চলে আসতে থাকি। ওই সময় পিএইচডি শিক্ষার্থী রেহানা আমাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন। পরে, বিকেলে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের আলোচনা সভায় আমি গেলে সেখানেও ওই শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হন। সভা শেষ হলে তারা আমার দিকে তেড়ে আসতে থাকেন। এ সময় ওখানে উপস্থিত শিক্ষকেরা তাদের বাধা দেন। আমার কাজে বাধা দিয়ে বার বার আমার সাথে তাদের এমন আক্রমণাত্মক আচরণের যথাযথ বিচার দাবি করছি।
ঘটনার ব্যাপারে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ বিভাগ) মোহা: তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বুধবার আমরা যখন ডরমিটরিতে যাই তখন উপস্থিত পিএইচডি শিক্ষার্থীরা আমাদের সাথে অসম্মানজনক আচরণ করেন। বিশেষ করে অমিত কুমার নামের ছেলেটির আচরণে আমি হতবাক হই। অধ্যাপক পূর্বা এবং আমি একাধিকবার তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা উল্টো আমাদেরকে দোষারোপ করে যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে আমরা কাজ রেখে চলে আসতে বাধ্য হই।
এ বিষয়ে পিএইচডি ডরমিটরি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার বসুনিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগ দেয়া হয়েছে সেগুলোর সবটাই অসত্য ও বানোয়াট। কথাকে জড়িয়ে কথা বলার অভ্যাস যাদের থাকে তারা এ ধরনের কথা বলতে পারেন। অধ্যাপক পূর্বা আমারও শিক্ষক। একজন শিক্ষকের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় এতটুকু আমি জানি। এখানে হয়ত কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
অধ্যাপক পূর্বাকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করার অভিযোগের ব্যাপারে পিএইচডি শিক্ষার্থী রেহানা সুলতানা বলেন, এই ব্যাপারে কথা বলতে আমি বাধ্য নই। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন একজন অধ্যাপক। এই বিষয়টি সম্পর্কে আবার আমাকেই জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমে ওই শিক্ষককে অসম্মান করা হয়। একজন অধ্যাপক যখন অভিযোগ দিয়েছেন তখন তা জেনে বুঝেই দিয়েছেন। আমি যেহেতু উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের একজন শিক্ষকের পিএইচডি ছাত্রী তাই আমার সাথে কথা বলতে হলে ওই বিভাগ বা পিএইচডি ডরমিটরির সুপার অধ্যাপক ড. আবু হাদী নূর আলী খানের মাধ্যমে কথা বলতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো: আজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগপত্রের অনুলিপি হাতে পেয়েছি। ঘটনাটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, ঘটনার বিষয়ে প্রাথমিক দেখাশোনার জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে দায়িত্ব দিয়েছি। প্রক্টর আপাতত বিষয়টি দেখবেন। পরে আলোচনা সাপেক্ষে ঘটনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, বাকৃবির পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া পিএইচডি ডরমিটরি ভবনের সংস্কার ও উন্নয়ন কাজের মোট আর্থিক বরাদ্দ প্রায় ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। কাজের তালিকায় ২য় তলা নির্মাণ ও নিচতলা সংস্কারের নির্দেশনা থাকলেও নিচতলার কোনো কাজ করা হয়নি এবং শুধু ২য় তলা নির্মাণে এত খরচের বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা চলছে শিক্ষক এবং কর্মকর্তা মহলে। এমতাবস্থায় সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়েছে এমনটি জানিয়ে নিচ তলা থেকে ২য় তলায় আবাসন স্থানান্তরের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন পিএইচডিরত শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে নিচতলা এবং ২য় তলার সম্পূর্ণ কাজ বুঝে নিতে অনড় ওই কাজের মনিটরিং কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলাম।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা