ঈশ্বরগঞ্জের নিখোঁজ সেলিমকে মিল্টন সমাদ্দারের প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ধার, কিডনি নেয়ার অভিযোগ
- ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা
- ১১ মে ২০২৪, ১৬:১১
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে মানসিক ভারসাম্যহীন নিখোঁজ সেলিম মিয়াকে মিল্টন সমাদ্দারের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তার কিডনি কেটে নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে।
সেলিম মিয়া উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের বৃপাচাশী গ্রামের দরিদ্র হাসিম উদ্দিনের ছেলে।
শনিবার (১১ মে) পরিবারের লোকজন জানায়, প্রায় ছয় মাস আগে মানসিক ভারসাম্যহীন সেলিম নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের পর অনেক খুঁজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে হতাশা হয়ে পড়েন পরিবারের লোকজন। এরই মাঝে ঢাকার মিল্টন সমাদ্দারের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়। এর মাঝে সেলিমের পরিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিল্টন সমাদ্দারের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে তার ছবি দেখতে পায়।
তারপর গত মঙ্গলবার সেলিমের মা রাবিয়া, চাচাতো ভাই গ্রামপুলিশ আব্দুর রশিদ সেলিমের সন্ধানে ঢাকা চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে গিয়ে তাকে শনাক্ত করেন। পরে থানা পুলিশের সহায়তায় সেলিমকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সেখান থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় একটি ভাঙাচোরা ঘরে শুয়ে আছেন সেলিম। পাশেই বসা মা রাবিয়া খাতুন, বাবা হাসিম উদ্দিন, চাচাতো ভাই আব্দুর রশিদ। এসময় কথা হয় মা রাবিয়া খাতুনের সাথে। তিনি কান্না করে বলেন, ‘আমার ছেলের কিডনি নিয়ে গেছে ওই আশ্রয়দাতারা।’
এসময় সেলিমের কাপড় উঁচিয়ে পেটে অস্ত্রোপাচারের ক্ষতচিহ্ন দেখান তার মা।
সেলিমের কিডনি নিয়ে যাওয়া হয়েছে এমন সন্দেহে তার পরিবার শনিবার বিকেলে ঈশ্বরগঞ্জের ইমিউন নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায় আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর জন্য। তবে সেলিমের পেটে বেশি ব্যথা থাকায় আল্ট্রাসনোগ্রাম করা সম্ভব হয়নি। এমন অবস্থায় পরে আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হবে বলে জানায় তার পরিবার।
এদিকে, মিল্টন সমাদ্দারের প্রতিষ্ঠান সেলিমের কিডনি খুলে নিয়েছে- এমন কথা এলাকায় ছড়িয়ে গেলে সেলিমের বাড়িতে ভিড় জমান সাধারণ মানুষ। এমন খবর পেয়ে শুক্রবার বিকেলে সেলিমের বাড়িতে যায় ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, এমন একটি খবর পেয়ে বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। সেইসাথে পরিবারের লোকজনকে তার চিকিৎসা ও কিছু পরীক্ষা করার জন্য বলে দেয়া হয়েছে। পরীক্ষার পর বোঝা যাবে ঘটনাটা কি। তারপর অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, দুস্থ, অসহায় ব্যক্তিদের আশ্রয় ও সাহায্যের মতো মানবিক কাজের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত ও আলোচিত ব্যক্তি মিল্টন সমাদ্দার।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে এসব কাজের আড়ালে তার নানা অন্যায়-অনিয়মের অভিযোগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এরপর ১ মে এই মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
তার বিরুদ্ধে ডেথ সার্টিফিকেট জালিয়াতি, মানবপাচার, আশ্রয় দেয়া অসহায়, দুস্থ ব্যক্তিদের মৃত্যুর পর তাদের কিডনি বিক্রি, জমি দখলসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
মিল্টন সমাদ্দারের বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে।
২০০৯ সালে রাঙ্গামাটির চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টান হাসপাতাল থেকে নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের পরিচয়ে তুলে ধরেন তিনি।
ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় মিল্টন সমাদ্দার নিজের পরিচয় সম্পর্কে তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এসব প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার, চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার ফাউন্ডেশন ও মিল্টন হোম কেয়ার প্রাইভেট লিমিটেড।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা