১৪ বছরেও হত্যাকাণ্ডের বিচার পায়নি এসআই গৌতম রায়ের পবিবার
- গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা
- ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০০
কিছু কিছু হত্যাকাণ্ড মানুষকে কাঁদায়, মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেয়। তেমনি একটি হত্যাকাণ্ড তৎকালীন ঢাকার বংশাল থানার কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) গৌতম রায়ের হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলেও হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর পরেও বিচার পায়নি তার পরিবার। আদৌ বিচার পাবে কি-না তা নিয়ে সংশয় স্বজনদের।
শুক্রবার রাজধানী ঢাকার বংশাল থানায় অপারেশন অফিসার এসআই গৌতম রায়-এর ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও নেত্রকোনার পূর্বধলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক ও ভোরের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন।
গৌতম রায় উপজেলার শ্যামগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পরোলোকগত ইন্দ্র ভূষণ রায় ও বকুল রানীর ছেলে। তিনি ঢাকার বংশাল থানায় চাকরি করতেন। সেখানে অপারেশন অফিসার (এসআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১০ সালের এই দিনে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে রাতে ওয়ারীর বাসায় ফেরার পথে সুত্রাপুর থানার লাল মোহন সাহা স্ট্রিট এলাকায় একদল চিহ্নিত সন্ত্রাসী অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তাকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠ বিচার ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তার পরিবার।
গৌতম রায় জীবিত অবস্থায় অনেক মামলার তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করে পুরস্কারও পেয়েছেন বেশ কয়েকবার। ওই মানুষটিকে দায়িত্বরত অবস্থায় হত্যা করে পালিয়ে গেছে খুনিরা, অথচ ১৪ বছর পরেও পুলিশ তার হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত আসামিদের খুঁজে বের করতে পারেনি।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে রাতে ওয়ারীর বাসায় ফেরার সময় সুত্রাপুর থানার লাল মোহন সাহা স্ট্রিট এলাকায় একদল চিহ্নিত সন্ত্রাসী অঅত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তাকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে রাতেই তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, পুলিশের ভারপ্রাপ্ত আইজিপি নব-বিক্রম ত্রিপুরা, র্যাবের ডিজি হাসান মাহমুদ খন্দকারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে ছুটে যান এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আশ্বাস দেন।
হত্যাকাণ্ডের পর এ ব্যাপারে সুত্রাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এরপর র্যাব পুলিশের মধ্যে আসামি ধরা নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে মামলাটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ দিকে, দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা তুলে ধরে নিহত পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের প্রশ্ন মোট ৪৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মাত্র দুইজনের সাক্ষ্যগ্রহণ নিতেই ১০ বছর লেগে গেল, বাকী সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিতে কত বছর সময় লাগবে? তাছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় খুনি কারা বা খুনিদের শাস্তিই বা কিভাবে নিশ্চিত হবে তা নিয়েই আশ্বস্ত হতে পারছে না তার পরিবার। এছাড়া প্রকৃত আসামিদের আড়াল করতেই কি এ দীর্ঘসূত্রিতা প্রশ্ন গৌতম রায়ের পরিবারের?
ঘটনার একমাস পর তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার দাবি করেছিলেন হত্যকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তল দু’টি উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্ত সিআইডির ল্যাবে করা আলামত পরীক্ষার জন্য যে দু’টি অস্ত্র ও গুলি (তিনটি) ও গুলির খোসা (তিনটি) পাটিয়েছেন সেগুলোর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এইসব গুলি ও দু’টি অস্ত্র (উদ্ধার করা) থেকে ছোড়া হয়নি।
গৌতম রায়ের ছোট ভাই সাংবাদিক তিলক রায় জানান, ‘আমার দাদার হত্যাকাণ্ডটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যে পিস্তল দিয়ে আমার দাদাকে হত্যা করা হয়েছে ওই পিস্তল পুলিশ আজও উদ্ধার করতে পারেনি। দু’জন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী থাকার পরেও আসল অপরাধীচক্রকে পুলিশ চিহ্নিত করতে পারেনি। বরং পুলিশ প্রকৃত আসামিদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। তাই আমরা বারবার অভিযোগপত্র নিয়ে আপত্তি তুলেছিলাম। যেহেতু আমাদেরকে মামলার বাদী হতে দেয়নি পুলিশ, সেহেতু পত্রিকার মাধ্যমে এ আপত্তি দিয়েছিলাম।’
মূলত, তার এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে মিছিল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু বিচার না পেয়ে এলাকাবাসী ও তার পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এসআই গৌতম রায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার গ্রামের বাড়ি শ্যামগঞ্জে গীতা পাঠ, নাম কীর্তন ও প্রসাদ বিতরনের আয়োজন করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা