মহিষের সাথে মানুষের বন্ধুত্ব! গবাদি প্রাণির কাণ্ডে অবাক এলাকাবাসী
- খাদেমুল বাবুল, জামালপুর
- ১৬ মার্চ ২০২৪, ১০:১১
জামালপুরের ইসলামপুর সদর ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের কৃষক মজনু মিয়া। কৃষি কাজের পাশাপাশি করেন গবাদিপশুর ব্যবসা। প্রায় ছয় বছর আগে হাট থেকে কিনে আনেন একটি বাচ্চা মহিষ। সন্তানের মতোই লালন পালন করেন এবং আদর করে মহিষটির নাম রাখেন কালু। গবাদিপশু কালুর সাথে কৃষক মজনুর গড়ে উঠে বন্ধুত্ব সম্পর্ক। মানুষ আর মহিষের মধ্যে এমন অনন্য বন্ধনের কথা পুরো এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মুখে মুখে। হাট বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় মজনুর ঘুরে বেড়ায় কালু। কৃষক মজনু বাড়ি থেকে কাজে বের হলেই পিছু ছুটে কালু।
দীর্ঘদিন লালন পালনের পর মহিষটি বিক্রির জন্য হাটে তুলেন মজনু। কিন্তু মজনুর প্রতি মহিষের গভীর ভালোবাসা দেখে কেউ আর মহিষটি কিনতে চান না। সকাল-বিকেল ও সন্ধ্যায় মজনু মিয়ার সাথে গ্রাম জুড়ে ঘুরে বেড়ায় এই কালু। মজনু আর মহিষটির গভীর সর্ম্পক দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে বাড়িতে ও হাট বাজারে জড়ো হচ্ছেন উৎসুক জনতা।
কৃষক মজনু মিয়া বলেন, ‘১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সাড়ে ৬ বছর আগে দু’টি মহিষ কিনছিলাম। দু’টির মধ্যে একটি বিক্রি করে দিয়েছি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। এই মহিষটাও হাটে নিয়ে গেছিলাম বেছবের। আমার পাচে পাচে (পিছে পিছে) যায় এ কারণে হাটের মানুষ কয় এইডা বেচিস না।’
মজনুর স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, ‘মহিষটি খুব ভালো লাগে আমার কাছে। আমার ছেলে-মেয়ের মতোনই। যে কথাই বলি মহিষটা শোনে ও বুঝে। যেভাবে বলি সেইভাবেই চলা ফেরা ও খাওয়া-দাওয়া করে। অনেক মানুষ মহিষটি দেখার জন্য বাড়িতে আসে।’
এলাকাবাসী বলেন, মজনু যখন বাড়ি থেকে বের হয় তখন ডাক দিতে হয় না। মহিষ দেখে ওনি কখন বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। মহিষ ওর পিছে পিচে ছুটতে থাকে। মজনু দৌড় দিলে মহিষও দৌড়ায়। কারো কোনো ক্ষতি করে না। মজনু খাবার দিলে খায়। ঘুরে বেড়ানো সময় আশপাশের ফসলি জমি বা গাছের কোনো ক্ষতিও করে না। বেধে রাখা তো দূরের কথা, বিরক্তও করে না কাউকে। মহিষকে আগলে রেখেছেন এলাকাবাসী। মানুষের ভালোবাসা পেলে বিবেক হীন পশুর মধ্যেও বিবেক উদয় হয়। তাই আমাদের উচিত সকল জীবের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।
শাহাদাৎ হোসেন নামে এক এলাকাবাসী বলেন, ‘আমরা সবাই জানি শুনি ঘোড়া, কুকুর, বিড়াল, ময়না-টিয়ার সাথে মানুষের সম্পর্ক হয়। এগুলো না কি প্রভুবক্ত হয়। এখন দেখছি মজনুর মহিষ কালুও প্রভুবক্ত হয়েছে।’
গঙ্গাপাড়া সেন্টার বাজারের ব্যবসায়ী আকালু সেক বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই মজনুর সাথে মহিষটি বাজারে আসে। আমরা বাজারের সবাই কালুকে আদর করি।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আদর-সোহাগ ও ভালবাসা প্রাণিও বুঝে। মহিষ একটি গবাদিপ্রাণি এই প্রাণি মানুষের অত্যান্ত উপকারী। এক সময় গরু-মহিষ ছাড়া আমাদের দেশে হালচাষ আর যানবাহন বলতে গরু-মহিষের গাড়িই ছিল গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা। কালের পরিক্রমায় সেগুলো বিলুপ্ত প্রায়। ওই মহিষটি হয়তো ভালবাসার কারণে মালিকের বন্ধু হয়ে গেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা