জামালপুরে জীবিত থেকেও মৃত ৩ নারী!
- খাদেমুল বাবুল, জামালপুর ও ইব্রাহিম হোসাইন, সরিষাবাড়ী
- ০৭ মার্চ ২০২৪, ১৮:৩০
জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের হিরণ্যবাড়ি গ্রামের তিন নারী জীবিত থাকলেও ভোটার তালিকায় তাদের মৃত দেখানো হয়েছে। কাগজ-কলমে মৃত থাকলেও দুনিয়াতেই বসবাস করছেন তারা। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে।
তারা হলেন ওই এলাকার আলমগীর হোসেনের স্ত্রী মোছা. আঞ্জুয়ারা (৩৯), মৃত মেহার আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৬৪) এবং মৃত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী মোছা. জাহানারা (৫২)।
জানা গেছে, সরিষাবাড়ী উপজেলার তথ্য সংগ্রহকারীদের গাফিলতির কারণে তিন নারী ৭-৮ বছর ধরে জীবিত থেকেও ভোটার তালিকাশ তাদের মৃত দেখানো হয়েছে। ফলে বিধবা ও বয়স্ক ভাতাসহ সরকারের নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অসহায় এই তিন নারী । এছাড়া আইডি কার্ডে নাম সংশোধনের জন্য সরকারি অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরে হয়রানীর শিকারও হচ্ছেন তারা।
আঞ্জুয়ারা বেগমের দাবি, গত ৬ বছর ধরে ভোটার তালিকায় তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। এনআইডিতে মৃত হওয়ার ফলে ছেলে-মেয়েদের স্কুলের উপবৃত্তির সুযোগ সুবিধাও পারছেন না। এছাড়াও ভিজিডি, ভিজিএফ, টিসিবিসহ বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছন। মৃত দেখানোর কারণে স্মার্ট এনআইডিও পায়নি তারা।
উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েও এনআইডি ঠিক করাত পারেন তারা। নির্বাচন অফিস তাদের এলাকার তথ্য সংগ্রহকারী শিক্ষক শফিকুল মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেছেন।
মরিয়ম বেগম বলেন,‘আমার স্বামী-সন্তান কেউ নেই। আমার বয়স ৬০ বছরের বেশি। আমি এখন কাজ করতে পারি না। সরকার একটি বিধবা ভাতার কার্ড দিয়েছিল। সেটিও মৃত বলে বন্ধ করে দিয়েছে। গত আট বছর ধরে আমি না কী মারা গেছি! এটাই ভোটার আইডিতে দেখানো।’
রফিকুল ইসলামের স্ত্রী জাহানারা জানান, ভোটার আইডিতে আমাকে মৃত দেখানো হলেও দিব্বি বেঁচে আছি। তারা কীভাবে আমাকে মৃত বানায় আমি বুঝি না। তাদের ওই ভুলের কারণে আজ আমি এই ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে কিছুই করতে পারছি না। যেখানেই কোনো কিছুর জন্য যাই, তারাই বলে আপনার ভোটার আইডিতে আপনি মৃত। এই আইডি দিয়ে কোনো কাজই আপনি করতে পারবেন না। আইডি কার্ড ঠিক করার জন্য শফিকুল মাস্টারের পেছনে অনেক ঘুরেছি। তিনি এই কার্ডটি ঠিক করে দিচ্ছে না।
তথ্য সংগ্রহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম নিজের ভুলের দায় স্বীকার করে বলেন, এটা আমারই ভুল। আমি এ জন্য অপরাধী। আমি এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের কাজ করে দেবো।
সাবেক ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন বলেন, ওই সব নারীদের মৃত দেখিয়ে তাদের সুবিধাভোগী বিধবা ভাতার কার্ড অন্যত্র দিয়ে দেয়া হয়েছে।
ইউপি সদস্য নূরুল ইসলাম বলেন,‘এ ঘটনা যখন ঘটেছে তখন আমি মেম্বার নির্বাচিত হয়নি। এইটা দুর্নীতি করছে সাবেক ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন, আর ভোটার তালিকা তথ্য সংগ্রহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম।’
মহাদান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে এম আনিছুর রহমান জুয়েল বলেন, ভোটার আইডিতে তিনজনকে মৃত দেখালেও তারা এখনো জীবিত। যারা তাদের তথ্য সংগ্রহ করেছে তারাই এই ভুলটি করেছেন ।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তারা আমার কাছে আসলে আমি প্রথমেই তাদের আইডি কার্ডের বিষয়টি সমাধান করবো। তারা যেন দ্রুত নাগরিক সেবা পান এটাই আমার কাম্য।
এছাড়াও অভিযুক্ত তথ্য সংগ্রহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ওই শিক্ষককে আমার স্টাফদের মাধ্যমে ডেকে পাঠিয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা