গফরগাঁওয়ে দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ে যাওয়া বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত
- গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা
- ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:৩৪
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে সদ্য অতিবাহিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একদিন আগে রাতে দুবৃর্ত্তের আগুনে পুড়ে যায় ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত উপজেলার ৮৩ নম্বর পড়শীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ।
এ বিদ্যালয়টি প্রতিবারই নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর নির্বাচনকে বানচাল করার উদ্দেশ্যেই দুর্বৃত্তরা ওই ভোট কেন্দ্রে আগুন লাগিয়ে বিদ্যালয়ের চারটি কক্ষের সবকিছুই আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এতে বিদ্যালয়ের সেমিপাকা ভবনটির ভেতরে-বাইরে ক্ষতগ্রিস্ত হয়েছে।
তবে বিদ্যালয়টিতে কোনো মতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও পাঠদানের ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠেনি। ফলে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তাদের বিদ্যালয়ে এলেও পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বরং পুড়ে যাওয়া বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ দেখে ভীতসন্ত্রস্ত শিক্ষার্থীরা। তাই বিদ্যালয়ে আসতে অনীহা প্রকাশ করছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে উপজেলার ৮৩ নম্বর পড়শীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, আগুনের তীব্রতায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় বিদ্যালয়ের টিনের চাল ও দেয়াল পুড়ে যাওয়ায় খসে পড়ছে প্লাস্টার। শ্রেণিকক্ষের ভেতরে থাকা
শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ, টেবিল-চেয়ার, কাগজপত্র পোড়াভষ্ম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এখনো। পুড়ে গেছে চারটি কক্ষের সকল পাখা। এছাড়াও পুড়ে যাওয়া চারটি কক্ষের সর্বত্র পোড়া উৎকট গন্ধ রয়েছে।
শিক্ষকেরা অভিভাবকদের বুঝিয়েও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে পারছেন না ফলে কমেছে উপস্থিতি। খুদে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে গিয়ে পোড়া ভবন দেখেও ভয় পাচ্ছে।
বিদ্যালয় পুরাতন ভবনের একটি কক্ষে তৃতীয় শ্রেণি, চতুর্থ শ্রেণি ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গাদাগাদী করে বসে পাঠদান করানো হচ্ছে। অপর একটি কক্ষে প্রাক প্রাাথমিক, প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে।
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আদরিন বলে, ম্যাডামরা বাড়িতে গিয়া আমাদের আনছে। আমাদের বসার বেঞ্চ, বিদ্যালয়ের টিনের চাল সব আগুনে পোড়া, এখানে বইসা ক্লাস করতে ভয় লাগে।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুঁই বলে, ক্লাস করমু কই! বেঞ্চ নাই, রুমের মধ্যে গেলেই ভয় লাগে ও পোড়া গন্ধ আসে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লুৎফা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ে ১০৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আগুনের ঘটনায় এখন অর্ধেক উপস্থিতি কমে গিয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের পরামর্শে আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর অনুরোধ করে যাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মিজানুর রহমান (ভারপ্রাপ্ত) জানান, এখনো পুরো ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাছাড়া শিশুদের মধ্যে এমন ভীতির সৃষ্টি হয়েছে যে ওরা বিদ্যালয়ে আসতে ভয় পাচ্ছে। এখন পাশের একটি পরিত্যক্ত ভবনে ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঘটনার এবং নির্বাচনের পর থেকে অনেক চেষ্টা করেও ১০৮ জনের মধ্যে ৪০-৪৫ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে আনা যাচ্ছে না। আগুনের ঘটনা শিশুদের মধ্যে তীব্র ভীতির সৃষ্টি করেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো: সাইফুল মালেক বলেন, জেলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এ জন্য আমরা বরাদ্দ চেয়েছি, আশা করছি দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ক্ষয়ক্ষতির এই তালিকা ইউএনওর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ৫ জানুয়ারি ভোররাতে পড়শীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের সংস্কার ও বেঞ্চ সরবরাহ করে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা