নান্দাইলে সন্তানদের মুখে খাবার তুলতে গিয়ে প্রাণ গেল মায়ের
- নান্দাইল (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা
- ০৩ জুন ২০২০, ২১:২৭, আপডেট: ০৩ জুন ২০২০, ২২:০৮
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বীর বেতাগৈর ইউনিয়নের বাসিন্দা আল আমিনের স্ত্রী শাহিদা। দিন আনা দিন খাওয়া সংসার। এই পরিবারে আবার আছে ৭ সন্তান। করোনার কারণে স্বামী কর্মহীন। তাই সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে গাজীপুর ছুটে গিয়েছিলেন শাহিদা। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে কিছু খাবারও জোগাড় করেছিলেন। আর সেই খাবার নিয়ে ফিরতে গিয়ে অটোতে ওড়না পেঁচিয়ে প্রাণ গেল তার।
জানা যায়, শাহিদার স্বামী আল আমিন দিনমজুর। শাহিদাও অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। করোনা পরিস্থিতিতে স্বামী-স্ত্রী দু’জনই কর্মহীন হয়ে পড়ায় নিদারুণ কষ্টে পড়েন সাত সন্তান নিয়ে। সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও শাহিদার পরিবারের কপালে তা জোটেনি।
সন্তানরা উপোস তাদের আহার যোগানোর কথা চিন্তা করে শাহিদা চলে যান গাজীপুরে। সেখানে শাহিদা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে কিছু টাকা যোগাড় করেন। সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে বাড়ির দিকে রওনা হন। কিন্তু বাড়িতে কিভাবে ফিরবেন? লকডাউনে যানবাহন চলছে না বললেই চলে। কিন্তু ৭ সন্তানের উপোসের কথা মনে আসতেই করে বুকের ভেতরটা ছটফট করে উঠে শাহিদার। আর কিছুই ভাবতে পারেন না। অটোতে করেই রওনা দেন। কিছু দূর যাওয়ার পরই পাল্টাতে হয় অটো। অটোতে করে এভাবেই বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি।
কিন্তু বিধি বাম। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের জৈনবাজারে আসা মাত্রই নিজের গলার ওড়না অটো রিক্সায় পেঁচিয়ে যায়। গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লটিয়ে পড়েন তিনি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেয়া হয় না তার।
সরকারি বেসরকারি কোনো ত্রাণ না পেয়ে দিন কয়েক আগে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল শাহিদা। কিছু উৎসুক লোকজন সে ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশও করেছিল।
টাকার অভাবে স্বামী আল আমিন শাহিদার লাশটি নিজ বাড়িতে নিয়ে আসতে পারেননি। গফরগাঁওয়ে শাহিদার বাবার বাড়িতেই তাকে দাফন করা হয়।
না খেতে পেয়ে শাহিদার এমন মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। তবে শাহিদার এমন মৃত্যুর খবর শুনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুর রহিম সুজন ছুটে আসেন। অনাহারী পরিবারটির মাঝে খাবার পৌঁছে দেন। পরিবারটিকে দেখবালের দ্বায়িত্ব গ্রহণের প্রতিশ্রতিও দেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা