১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
গণধর্ষণের পর আজান দিয়ে জামায়াতে ইমামতি

তাকমীনা হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি গ্রেফতার

গণধর্ষণের পর আজান দিয়ে জামায়াতে ইমামতি : তাকমীনা হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি গ্রেফতার - নয়া দিগন্ত

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে যশরা ইউনিয়নের পাড়া ভরট গ্রামের চাঞ্চল্যকর তাকমীনাকে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি ও তার এক সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। অপর আরেক সহযোগী আসামি এখনো পলাতক রয়েছেন।

তাকমীনাকে বিয়ের কথা বলে মোবাইলে ডেকে এনে প্রেমিকসহ তিন বন্ধু মিলে পালাক্রমে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এমনকি হত্যার পর লাশ মসজিদের পাশে গাছে ঝুলিয়ে রেখে মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করেন ঘাতকরা।
এ ঘটনায় নিহত তাকমীনার বাবা আঃ মতিন অজ্ঞাতনামা আসামি করে গত মঙ্গলবার গফরগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর জড়িত থাকায় সন্দেহে মাহফুজকে বৃহস্পতিবার রাওনা এলাকায় থেকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। রোববার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ পৌর শহরের অধ্যক্ষ আক্তার হোসেন কিন্ডার গার্ডেন স্কুল-সংলগ্ন একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকমীনার প্রেমিক মাদ্রাসা ছাত্র, পাড়াভরট বায়তুন নূর জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন আশিকুল হককে গ্রেফতার করে।

গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী জানান, গ্রেফতারের পর আশিকুল হক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে প্রেমিকা তাকমীনাকে মোবাইলে ফোন করে ডেকে এনে দুই বন্ধু মাহফুজ ও আরিফকে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের পর প্রেমিকা তাকমীনাকে হত্যা করে তারা লাশ মসজিরে পাশে গাছে ঝুলিয়ে রাখেন। লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখার পর ভোরে ফজরের নামাজের ইমামতি করেন আশিকুল হক। আশিকুলের সহযোগী পুলিশের হাতে গ্রেফতার মাহফুজ শুক্রবার বিকালে ময়মনসিংহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডের ছয় দিনের মধ্যে জড়িত তিনজনের মধ্যে প্রধান আসামিসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপর আসামি আরিফকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

থানা পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে,পার্শ্ববর্তী নান্দাইল উপজেলার তারাপাশা গ্রামের আইনাল হকের ছেলে পাড়াভরট বায়তুন নূর জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন ও স্থানীয় জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কওমি মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র আশিকুল হকের সঙ্গে পাড়াভরট গ্রামের আব্দুল মতিনের মেয়ে তাকমীনা প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রেমের সম্পর্ক কারণে আশিকুলকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল তাকমীনা। তাকমীনাকে বিয়ে করতে রাজি ছিল না আশিকুল।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৩ মার্চ, সোমবার রাত ৩টায় দিকে আশিকুল হক পালিয়ে বিয়ে করার কথা বলে তাকমীনার মোবাইলে ফোন করে বাড়ি থেকে প্রায় ১০০গজ দূরে মসজিরে কাছে ডেকে নেন। সেখানে যাওয়া পর প্রথমেই তাকমীনাকে আশিকুল ধর্ষণ করেন। এসময় পাশে ওঁৎ পেতে থাকা তারই দুই বন্ধু মাহফুজ ও আরিফ জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের পর প্রেমিক আশিকুল ও তার বন্ধুরা মিলে তাকমীনার হাত, পা, মুখ চেপে ধরে মাথায় পাগড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করেন। পরে লাশ টেনে হেঁচড়ে মসজিরে পাশে গাছে ঝুলিয়ে রেখে তারা পালিয়ে যান।

ফজরে নামাজের সময় হলে মাহফুজ মসজিদে আজান দেন এবং আশিকুল নামাজে ইমামতি করেন। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে মুসল্লিরা বের হয়ে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকমীনার লাশ দেখতে পান। মাহফুজ ও আরিফ পাড়াভরট গ্রামের জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কওমি মাদরাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র। এর আগে এঘটনার সাথে জড়িত মাহফুজকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

ঘটনার পর হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী (গফরগাঁও সার্কেল), ময়মনসিংহ সিআইডির ক্রাইমসিন প্রধান মোহাম্মদ ইউসুফ হোসেন এবং গফরগাঁও থানার ওসি অনুকূল সরকারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি বিশেষ টিম মাঠে কাজ করে আসছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement