২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

রোগীকে মারধর করলো চিকিৎসক

রোগীকে মারধর করলো চিকিৎসক - নয়া দিগন্ত

তুচ্ছ ঘটনায় তরুন মিয়া (২১) নামে এক রোগীকে বেধড়ক মারধর করলো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দন্ত বিভাগে আবাসিক চিকিৎসক একেএম আনিসুর রহমান বাবলু। হাসপাতালের ৮নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ওই রোগী সোমবার বিকাল ৩টার দিকে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের এ অভিযোগ করেন। আহত তরুন মিয়ার বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের মরিচারচর গ্রামে। সে ঈশ্বরগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তরুন মিয়া (২৩) অভিয্গো করে বলেন, দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে পরে দন্ত বিভাগের চিকিৎসকের কক্ষে অপেক্ষমান থাকার অপরাধে দন্ত বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক একেএম আনিসুর রহমান বাবলু তার কক্ষের দরজা বন্ধ করে তাকে বেধড়ক মারধর এবং টেবিলে আঘাত করে তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। পরে আনসার ও পুলিশ সদস্যরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালের ৮নং ওয়ার্ডে ভর্তি করে। তার মাথায় দুটি সেলাই লেগেছে বলেও জানান তিনি।

বদমেজাজী এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তরুন মিয়া অভিযোগ করেন, সোমবার ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ওই চিকিৎসক লাইনের ১৫/২০ জন রোগী দেখে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসহনীয় ব্যথায় অবশেষে ওই চিকিৎসকের কক্ষে চেয়ারে বসে অপেক্ষা করতে থাকি। বেলা ১২টার দিকে ডা. বাবলু আসেন এবং আমি ভিতরে কেন, জানতে চান। এনিয়ে বাকবিতন্ডা হয় এবং আমার সাথে সে দূর্ব্যবহার শুরু করে। একপর্যায়ে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। বিষয়টি উপ-পরিচালককে জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। তরুন ওই চিকিৎসকের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

আহত তরুনের চাচাতো ভাই মহিদুল ইসলাম জানান, হাসপাতাল ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যদের টেলিফোন পেয়ে হাসপাতালে ছুটে এসে তরুনকে উদ্ধার করি। তিনি অভিযোগ করেন, কোনো রকম অপরাধ ছাড়াই একজন চিকিৎসক এভাবে রোগীদের গাঁয়ে হাত তুলতে পারে, এটা অকল্পনীয়। তিনি ওই চিকিৎসকের বিচার দাবি করেন। তিনি বচলেন, বিষয়টি নিয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. একেএম আনিসুর রহমান বাবলু জানান, ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত। তিনি বলেন, ‘সকল রোগী লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, অথচ ওই রোগী কক্ষের ভিতরে বসে আছে। এনিয়ে ওই রোগীর কাছে জানতে চাইলে সে প্রথমে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং আমার সাথে দূর্ব্যবহার শুরু করে। একপর্যায়ে আমাকে ধাক্কা দেয়। এতে আমার শার্ট-প্যান্ট ছিঁড়ে যায় এবং টেবিলের কোনায় লেগে আমার আঙ্গুল কেটে যায়। এসময় ওই রোগীও আঘাতপ্রাপ্ত হয়। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষনিকভাবে উপ-পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন। ডা. বাবলু অভিযোগ করেন, ওই রোগী হাসপাতালের এটেনডেন্ট মর্জিনার সাথে দূর্ব্যবহার করে কক্ষে ঢুকে পড়ে।

দন্ত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মনোয়ারুল ইসলাম জানান, কর্মচারীদের মাধ্যমে ঘটনার খবর শুনে তিনি ভবনের তিনতলা অফিস থেকে নীচে ওই চিকিৎসকের কক্ষে যান। এসময় ডা. বাবলু ঘটনাটি তাকে জানান। তিনি বলেন, ঘটনাটি আসলেই অনাকাঙ্খিত। এমনটি হওয়া কাম্য নয় জানিয়ে বিভাগীয় প্রধান বলেন, হাতাহাতির একপর্যায়ে ওই রোগী পাকা মেঁঝেতে পড়ে গেলে তার মাথা ফেটে যায়। এমনটি জানিয়েছেন ডা. বাবলু।

এব্যাপারে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. লক্ষী নারায়ণ মজুমদার জানান, মাথায় ব্যান্ডেজ করা তরুন নামে এক রোগী সোমবার বেলা ১টার দিকে তাকে দন্ত বিভাগের চিকিৎসক ডা. বাবলু কর্তৃক মারধরের বিষয়টি অবহিত করেছেন। পরে তাকে শান্তনা দিয়ে পাঠিয়ে দেন। ওই চিকিৎসকের বিচার সম্পর্কে তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement