অন্তর্বর্তী সরকার হেরে গেলে দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে : অ্যাটর্নি জেনারেল
- ময়মনসিংহ অফিস
- ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:১৯, আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:২০
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘আমরা এসেছি একটি স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে দিতে। অন্তর্বর্তী সরকার হেরে গেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। গণতন্ত্র শুধু হারাবে না, মানুষ তার মৌলিক অধিকার হারিয়ে ফেলবে। তাদের কন্ঠ রুদ্ধ হবে।’
ময়মনসিংহে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগবিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর সিলভার ক্যাসেল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী কর্মশালায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণির সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রহমান, পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহানুল আলম, বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ ও রেঞ্জ ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমান, জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান।
কর্মশালায় ময়মনসিংহ বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিচারক, আইনজীবী ও সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমরা এসেছি শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধদের রক্তের দায় থেকে দেশের মানুষকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উপহার দিতে। একটি স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে দিতে। যদি আমরা ফেল করি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রই শুধু হারাবে না, মানুষ তার মৌলিক অধিকার হারিয়ে ফেলবে। তাদের কন্ঠ রুদ্ধ হবে। আগামীর বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন এই সরকার নিয়েছেন, আমরা তার স্বপ্নের সারথী হয়ে একসাথে কাজ করবো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যদিয়ে যে বাংলাদেশ পেয়েছি। প্রায় দুই হাজার তরতাজা জীবনের রক্তের বিনিময়ে আমাদের যে দায়িত্ব দিয়ে গেছে, সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একটি কন্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করছি। ব্যর্থ হলে আমরা উত্তর পুরুষের ভীরু কাপুরুষের উপমা হয়ে যাবো। আমরা একদিকে শহীদের দায়ভার পরিশোধের দায়িত্ব নিয়েছি, অন্যদিকে আমাদের সামনে ফ্যাসিসদের মোকাবেলা করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে।’
বিচার বিভাগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরো বলেন, ‘গত ১৫ বছরে ৬০ লাখেরও বেশি মানুষকে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় আসামি করা হয়েছে। এসব মামলার বেশিভাগ বাদী পুলিশ। অতীতে জুডিসপ্রিডেন্স লিখতে যেয়ে, রায় দিতে গিয়ে, জামিন দিতে গিয়ে যে তথ্য ফলো করতেন, সেটা হলো এফআরআই’য়ে নাম নাই সুতরাং জামিন দেয়া যায় না। অথচ নন-বেলিবল মামলায় জামিন দিয়েছেন। আপনাদের কাছে নিবেদন, আপনারা জুডিসপ্রিডেন্স রচনা করুন। যারা ফ্যাসিস্ট, যারা ৩৬ জুলাইয়ে মানুষের রক্ত ঝরিয়েছে, পাখির মতো গুলি করে মানুষ মেরেছে, তাদের গুলি করার প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য আমাদের এখনো জোগাড় করতে সময় লাগছে। জুলাই বিপ্লবের মামলাগুলো একটু ভিন্নভাবে জুডিসপ্রিডেন্স রাখার সুযোগ নিন।’
তিনি বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ধরে কারা ফ্যাসিজমের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কারা ফ্যাসিজমকে লালন-পালন করেছেন এবং এখনো পরোক্ষভাবে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের কাছে বিনয়ের সাথে অনুরোধ করছি, আপনারা এই জায়গায় নতুন করে জুডিসপ্রিডেন্স রচনা করুন।’
অ্যাটর্নি জেনারেল পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে একজন আসামিকে ফরোয়ার্ড করার সময় তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করুন। এফআরআই’য়ে নাম না থাকতে পারে, কিন্তু তাকে কি কারণে গ্রেফতার করলেন, সেটার পেছনের কারনটা কি, সে কিভাবে অপরাধে অংশগ্রহণ করেছে, এ কথাগুলো থাকলে বিচার বিভাগে জুডিসপ্রিডেন্সে অনেক সহজ হবে।’
তিনি পাবলিক প্রসিকিউটরদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের ঈমানী দায়িত্ব, প্রসিকিউশন যে মেটিরিয়ালস দেবেন সেগুলো সুন্দরভাবে আদালতে উপস্থাপন করুন। আপনাদের গাফিলতি আর দুর্নীতি মনিটর করা হচ্ছে। আমাকেও মনিটর করা হয়। ফ্যাসিজমকে আমরা বিচারের মুখোমুখি করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘দিল্লীতে বসে কিভাবে অপরাধে উস্কানী দেয়া হচ্ছে। এখন উনাকে আসামি করলে যদি বলা হয়, আমিতো দিল্লীতে ছিলাম। তিনি অবশ্যই দিল্লীতে ছিলেন। ইউটিউর এখন অপরাধের সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। ডিজিটাল ফরেনসিক করলে এসমস্ত ডিজটাল এভিড্যান্স হিসেবে আসতে পারে। তাই আপনারা জুডিসপ্রিডেন্স লেখার ক্ষেত্রে, জুডিসপ্রিডেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে, জুডিসপ্রিডেন্সের উৎস তৈরী করতে সমস্ত ঘটনাপ্রবাহকে সামনে নিয়ে আসেন। সেখানেই একজন আইনের ব্যক্তিদের বিজ্ঞতার পরিচয়। সেখানেই লার্নেড ল’ইয়ার হয়, সেখানেই বিজ্ঞ বিচারক হয়।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা