সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালামসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে জমি দখল ও লুটপাটের মামলা
- জামালপুর প্রতিনিধি
- ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:৫৪

সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ এবং তার চার ভাই ও ভাতিজাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে জমি দখল ও লুটপাটের অভিযোগে জামালপুর আদালতে মামলা হয়েছে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অধীনে বকশীগঞ্জ আমলি আদালতে সিদ্দিকুর রহমান নামে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য মামলাটি দায়ের করেন।
বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার আদেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিচারক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদি সিদ্দিকুর রহমান ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মামলার প্রধান আসামি আবুল কালাম আজাদ জামালপুর-১ (বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ছয়বারের এমপি ছিলেন। এছাড়া তিনি পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী ছিলেন।
আবুল কালাম আজাদ ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন- তার ছোট ভাই গোলাম মোস্তফা, নজরুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন এবং ভাতিজা রেজাউল করিম। এছাড়া অজ্ঞাত আরো ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে ওই মামলায়।
মামলার আর্জিতে বাদি উল্লেখ করেছেন, আসামিরা সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ ও ভূমি দখলকারী। ইতোপূর্বে ১ নম্বর আসামি আবুল কালাম আজাদের ছত্রছায়ায় ক্ষমতায় ভূমি দখলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজী কার্যকলাপ পরিচালনা করেছে।
২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আবুল কালাম আজাদের হুকুমে ও কুপরামর্শে আসামিরা দা, লাঠি, ফালা, হেমার, লোহার খস্তা, কুড়াল, খুর, চাকু ও হাতুড়ি ইত্যাদি মারাত্মক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাদির বসতবাড়িতে ঢুকে নবনির্মিত ৫২ ফুট দৈর্ঘ্যের কক্ষ বিশিষ্ট হাফ বিল্ডিং ঘর ভেঙে নিয়ে যায়। এতে বাধা দিলে বাদি সিদ্দিকুর রহমানসহ মামলায় মানীত সাক্ষীদের খুন করে লাশ গুম করার হুমকি দেয় আসামিরা। এরপর আসামিরা একে অপরের সহযোগিতায় বাদির বিল্ডিং ঘরটি ভেঙে ৮ লাখ টাকার ক্ষতি করে। এ ছাড়া ধান-গম ভাঙার হলারসহ যাবতীয় সরঞ্জামাদি, আলমারিতে থাকা ৬ লাখ টাকা মূল্যের ৪ ভরি ওজনের স্বর্ণের অলংকার, জমিতে রোপণ করা ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ৩৬টি মূল্যবান কাঠের গাছ এবং ৩০ শতাংশ জমির পাকা ধান চুরি করে নেয় আসামিরা।
এসব বিষয়ে বকশীগঞ্জ থানায় বারবার ফোন করার চেষ্টা করলে তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই ২ নম্বর আসামি গোলাম মোস্তফা ভুক্তভোগী সিদ্দিকুর রহমানের মোবাইল ফোন হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে। ৩ নম্বর আসামি তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের ভাতিজা রেজাউল করিম বাবু থানায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে খুর দিয়ে সিদ্দিকুর রহমানের পেট ফেড়ে ভুরি নামিয়ে ফেলার হুমকি দেয়। এছাড়া এসব বিষয়ে কোনোরূপ আইনের আশ্রয় গ্রহণ করলে বাদি সিদ্দিকুর রহমানকে যেখানে পাবে সেখানেই খুন জখম করবে এবং মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয় আসামিরা।
পরবর্তী সময়ে ভুক্তভোগী সিদ্দিকুর রহমান থানায় মামলা করতে গেলে আসামিরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মামলাটি থানায় নিতে দেয়নি।
মামলার বাদি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘জমি দখলসহ লুটপাটের ঘটনায় সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদসহ তার চার ভাই এবং এক ভাতিজার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। আবুল কালাম আজাদ আমার বাবার চাচাতো ভাই। তিনি ১৯৯৭ সালে এমপি পদে থাকাকালীন ৪১ শতাংশ কৃষি জমি আমার কাছে বিক্রি করেন। পরে একাধিকবার জমি বেদখল করেন। এনিয়ে আদালতে মামলা করলে এমপির আবুল কালাম আজাদ ২০০৯ সালে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে পুলিশ দিয়ে আমাকে গ্রেফতার করে। আমি তিন মাস জেলে খেটে জামিনে মুক্তি পাই। এরপর আবুল কালাম আজাদ তার আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে একে একে পাঁচটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে পুলিশ দিয়ে আমাকে গ্রেফতার করিয়ে কারাগারে রাখে। এসব ঘটনা এলাকাবাসী জানেন।
বাদিপক্ষের আইনজীবী মো: আশরাফুল হক আলাল বলেন, ‘শুনানি শেষে মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বকশীগঞ্জ থানার ওসিকে আদেশ দিয়েছেন বিচারক।’