ময়মনসিংহে আজহারীর মাহফিল ভোরেই কানায় কানায় পূর্ণ ময়দান
- মো: সাজ্জাতুল ইসলাম, ময়মনসিংহ
- ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:১২, আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৭
জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারী ময়মনসিংহ তাফসিল কুরআন মাহফিলে আজ শনিবার ভোরেই জনতার ঢল নেমেছে। চোখ যতদূর যায়, শুধু মানুষ আর মানুষ। জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক ড. মিজানুর রহমান আজহারীর বয়ান শোনার জন্য ভোর থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দলে দলে মাহফিল ময়দানে জমাতে শুরু করেন। আজ ভোর ৭টায় মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠের গোটা মাহফিল এলাকা।
মাহফিলকে ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আয়োজক কমিটি ও প্রশাসন। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের অসংখ্য বিশেষ টিম মাহফিলের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া র্যাব, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে তৎপর রয়েছেন।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি সফিকুল ইসলাম খান বলেন, এত বিশাল জমায়েতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। এজন্য পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীও কাজ করছেন।
জানা গেছে, তাফসির মাহফিলে মিজানুর রহমান আজহারীর পাশাপাশি আরো জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তারা আলোচনা করবেন।
মাহফিল কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, আজহারীর উপস্থিতি এই মাহফিলের প্রতি মানুষের আগ্রহ আরো বাড়িয়েছে।
মাহফিল কমিটি জানায়, আজহারী সাহেব আজ দুপুরের আগেই হেলিকপ্টারে ময়মনসিংহ পৌঁছাবেন এবং বাদ জোহর বয়ান করবেন। দীর্ঘ বিরতির পর তার এমন উপস্থিতি নিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে লাখো মানুষের আগমন প্রমাণ করে ইসলামী আলোচনায় আজহারীর জনপ্রিয়তা কতটা গভীর।
আজ শনিবার ভোরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দলে দলে মাহফিলের ময়দানে আসছেন। অনেকে ময়মনসিংহ বিভাগ ছাড়াও বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে এসেছেন। কেউ একা, কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, কেউ বন্ধুদের নিয়ে, আবার কেউ পরিচিতজনদের সাথে করে নিয়ে এসেছেন।
নেত্রকোণা থেকে এসেছেন আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমার পছন্দের হুজুর মিজানুর রহমান আজহারী। তার অসংখ্য ওয়াজ ইউটিউবে শুনেছি। সকালে এলে মঞ্চের কাছাকাছি স্থানে জায়গা পাওয়া সম্ভব না। তাই এবার সরাসরি দেখতে বিকেলেই চলে এসেছি।’
জামালপুর সদর থেকে এসেছেন মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মধুর কণ্ঠে বয়ান করেন আজহারী হুজুর। তাকে সরাসরি দেখে বয়ান কখনো শুনতে পারিনি। খুব ইচ্ছে তাকে সরাসরি দেখে বয়ান শোনার। সম্প্রতি ঢাকার নবাবগঞ্জে হুজুর বয়ান করবে জানতে পেরে সেখানেই যেতে চেয়েছিলাম। তবে আগের দিন বাসায় একটি সমস্যা তৈরি হওয়ায় যেতে পারিনি। হুজুরকে দেখে বয়ান শোনার ইচ্ছে ময়মনসিংহে আর মিস করতে চাই না। তাই রাতে মাঠে চলে এসেছি।’
আয়োজকরা জানিয়েছেন, মাহফিল উপলক্ষে ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখের অধিক মানুষের সমাগম ঘটতে পারে। ২২টি এলইডির মাধ্যমে বয়ান প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের জন্য রয়েছে জেনারেটর। পাশাপাশি ফ্রি ওয়াইফাই, স্যানিটেশন, পর্যাপ্ত সুপেয় পানি, চার শতাধিক অজুখানার ব্যবস্থা, ইন্টারনেট সচল রাখার জন্য বাংলালিংক টাওয়ার, রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল, সমাগম কেন্দ্র করে রয়েছে তিনটি মেডিক্যাল ক্যাম্প।
উল্লেখ্য, আল ইসলাম ট্রাস্টের আয়োজনে অনুষ্ঠিতব্য তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে সভাপতিত্ব করবেন শায়কুল হাদিস হাফেজ মাওলানা নুরুল ইসলাম।
এবার মাহফিলে বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিতির কারণে এদিন শহরে যানবাহন চলাচলেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকবে। শম্ভুগঞ্জ ব্রিজের আগেই বড় যানবাহনকে আটকে দেয়া হবে। এছাড়া নগরীর মাসকান্দা, আকুয়া বাইপাস ও রহমতপুর বাইপাসে আটকে দেয়া হবে বড় যানবাহন।
তবে শহরের অবস্থা অনুযায়ী ইজিবাইক (অটো) চলাচল করবে। এদিন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ময়মনসিংহে। সেক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের জন্য শহরে চলাচলে কোনো বাধা থাকবে না। তবে মূল শহরে যানজটের আশঙ্কায় সবাইকে বাইপাস ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক কামরুল হাসান মিলন জানান, ড. মিজানুর রহমান আজহারী একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি। তাকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পছন্দ করেন। বয়ান শুনতে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। এরই মধ্যে দেখতে পাচ্ছি মানুষের ঢল নেমেছে। ওয়াজ শুরুর আগ পর্যন্ত সময়ে নিশ্চয়ই সমাগম আরো বহুগুণ বাড়বে। আয়োজনের সব ধরনের প্রস্তুতি শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলেই শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মিজানুর রহমান আজহারী বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ। যেহেতু লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত থাকবেন, সেহেতু মানুষের কিছু অসুবিধা হতে পারে। আশা করছি, ইসলামের স্বার্থে নগরবাসী এই অসুবিধা মেনে নেবেন।’
আল ইসলাম ট্রাস্টের সদস্য মাহবুব রশিদ ফরাজি বলেন, ‘মাহফিলে যেন মানুষ আসে, সেজন্য যথেষ্ট প্রচার চালানো হয়েছে। এটি ময়মনসিংহের বিভাগীয় মাহফিল। তবে অনেকে বিভাগের বাইরে থেকেও আসছেন।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম জানান, মাহফিলে কোনো অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার আশঙ্কা নেই। তবুও অগণিত মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।