৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ১৮ রজব ১৪৪৫
`

‘এরা কী মানুষ?’

শহীদ সাইফুল ইসলাম - ছবি - বাসস

ময়মনসিংহের ফুলপুরে ধান বিক্রি করতে গিয়েছিলেন কৃষক সাইফুল ইসলাম। সংসারের অভাবের চাপে কুঁকড়ে যাওয়া জীবনে ছেলে-মেয়ের জন্যে ভালোমন্দ খাবারের যোগাড় সবসময় করতে পারেন না। তাই মেয়ের আবদার মেটাতে, আম কেনার জন্যে বাজারে গিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ের আমা খাওয়ার ইচ্ছে আর পূরণ হলো না। তার বাবা ফিরলেন লাশ হয়ে।

একটি বুলেট লণ্ডভণ্ড করে দিলো সব। চিরদিনের জন্যে পাল্টে গেলো সাইফুলের পরিবারের পুরো চালচিত্র।

ঘটনা গত ২০ জুলাই দুপুরের।

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সাইফুল ইসলাম (৩৫)। তার মৃত্যু কেবল একটি প্রাণের অবসান নয়, এটি একটি পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ এবং তিন নিষ্পাপ শিশুর ভবিষ্যৎ চুরমার করে দেয়া।

শহীদ সাইফুলের বিধবা স্ত্রী রহিমা শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে কান্না করতে করতে বলেন, ‘উনি তো ধান বেচতে গেছিলেন, কেন তারে গুলি করে মারলো? উনি বেঁচে থাকতেই তো দিন চলতো কষ্টে। এখন আমি তিনটা শিশু ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাঁচব কিভাবে?’

সাইফুলের বড় মেয়ে মিম (৬) প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। মেজ ছেলে রামিম (৪) আর ছোট মেয়ে সায়মা (২)। এখনো তারা বুঝতে পারে না যে তাদের বাবা আর কখনো ফিরে আসবে না। প্রতি রাতে ছোট মেয়ে সায়মা বাবার জন্য চিৎকার করে, মাকে জিজ্ঞেস করে, ‘আম্মা, আব্বা কই? কবে আইব?’ এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে রহিমা বোবা হয়ে যান।

সেদিন সাইফুল তার ভাইয়ের সাথে ধান বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। ৭৮ মণ পাঁচ কেজি ধান বিক্রির পর সাইফুল মেয়ের জন্য আম কিনতে ফলের দোকানের দিকে এগিয়ে যান। কিন্তু কয়েক গজ দূর যেতেই গুলির শব্দে বাজার এলোমেলো হয়ে যায়। ছোট ভাই শহীদুল দৌড়ে গিয়ে দেখেন, গুলিবিদ্ধ সাইফুল রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। গুলিটি তার বাম চোখের ভ্রু ভেদ করে ডান কানের নিচ দিয়ে বেরিয়ে গেছে।

পরে দ্রুত চিকিৎসার জন্য সাইফুলকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান। শহীদুলের প্রশ্ন, ‘শুনেছি পুলিশ নাকি হাঁটুর নিচে গুলি করে। তাহলে মাথায় গুলি করল কেন?’ কিন্তু এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই।

সাইফুলের মৃত্যু শুধু তার স্ত্রী আর সন্তানদের নয়, পুরো পরিবারের জন্য এক চরম ধাক্কা!

তৈয়ব আলী ছেলের মৃত্যুর পর থেকে নির্বাক। ঘর থেকে বের হন না, কারো সাথে কথাও বলেন না। আর তার দাদা আফতাব উদ্দিন নাতির লাশ দেখে জ্ঞান হারান। তিন দিনের মধ্যেই তিনি মারা যান। একে একে দুই প্রিয়জনের লাশ কাঁধে নিয়ে দাফন করেন কৃষক তৈয়ব আলী।

এদিকে রহিমার জীবনে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। তিনি বলেন, ‘স্বামী নিহত হওয়ার পর থেকে এক দিনও ভালো কিছু বাচ্চাদের মুখে তুলে দিতে পারিনি। আজও শুধু ডাল-ভাত খেয়েছে।’

রহিমার প্রশ্ন, ‘একটা মায়ের বুক খালি করার জন্য কেউ কী এভাবে মানুষকে গুলি করে মারে? এরা কী মানুষ, না জানোয়ার?’

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement