নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে বাঁধা
- এস এম মোজতাহীদ প্লাবন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
- ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৩৪, আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৩৮
প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পার হলেও শেষ হয়নি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর। উদ্যোগ নেয়া হলেও বাঁধার মুখে পরতে হয়েছে বারবারই। স্থানীয় কিছু বাসিন্দা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের বাঁধায় এবার আটকে যায় বহুল প্রতীক্ষিত এই সীমানা প্রাচীর।
জানা যায়, এর আগে ২০২২ সালের মার্চ মাসে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেন তৎকালীন ভিসি ড. সৌমিত্র শেখর দে। দুই কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনি প্রায় ১৫০০ মিটার দীর্ঘ সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। যা এক বছরের মধ্যে শেষ হবার কথা থাকলেও এখনো অসমাপ্তই রয়ে গেছে ২০২২ সালে কাজ শুরু করা সীমানা প্রাচীরটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অংশে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শেষ হলেও গত জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্থানীয়রা নতুন বিজ্ঞান ভবন, বঙ্গমাতা হল সংলগ্ন দেয়াল, বটতলা ও চুরুলিয়া মঞ্চসহ বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলেন। এ ছাড়া জঙ্গলবাড়ি, নিমাইসিটি ও চারুদ্বীপ সংলগ্ন এলাকার সীমানা প্রাচীরের কাজ নিয়ে শুরু হয় সংকট।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বেষ্টনীর অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করার কথা জানায়। সেই সাথে ১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য প্রধান দু’টি গেট ব্যবহার করার অনুরোধ করা হয়।
তবে এবারও বাঁধার সম্মুখীন হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত তারিখ পার হলেও সম্পন্ন হয়নি সীমানা প্রাচীরের অসম্পন্ন কাজ। একদল স্থানীয় বাসিন্দা ভিসি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলমের সাথে দেখা করে মৌখিকভাবে আবেদন জানায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ভিসি তাদের বিকল্প রাস্তা নির্মাণের জন্য ১৫ দিন সময় দেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ শিক্ষক কর্মকর্তা ভিসি বরাবর লিখিত আবেদন জানান। ভিসি তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরো ১৫ দিন অর্থাৎ আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেন। সেই সাথে তাদেরকে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলে বিকল্প রাস্তা তৈরির কথা বলা হয়।
২৩ শিক্ষক-কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সেক্রেটারি ড. সোহেল রানা, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ড. নজরুল ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের সঞ্জয় মুখার্জি, নৃবিজ্ঞান বিভাগের আসিফ ইকবাল আরিফ, নাজমুল ইসলাম (কেয়ারটেকার, এইচআরএম), নাজমুল হুদা (ডেপুটি রেজিস্টার), স্বপন কুমার শীল (উপ-প্রদান প্রকৌশলী), আমিনুল হক (সহকারী রেজিস্টার, কলা অনুষদ), জহিরুল ইসলাম (কেয়ারটেকার, ফিন্যান্স), আবু বকর সিদ্দিক (অফিস সহকারী, মার্কেটিং), মোজাম্মেল হক (ইলেকট্রিশিয়ান, প্রকৌশল বিভাগ), আব্দুল হাই (পাম্প অপারেটর, প্রকৌশল বিভাগ), তাইজুদ্দিন (কেয়ারটেকার, মার্কেটিং) মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন (ইইই বিভাগ), জুনায়েদ কবির (সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, অর্থ ও হিসাব), আসাদুজ্জামান আসাদ (নির্বাহী প্রকৌশলী, বিদ্যুৎ), কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কেয়ারটেকার কামরুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম ও শামসুজ্জামান, প্রকৌশল দপ্তরের এসএম আতিকুল ইসলাম, ভিসি দপ্তর সেকশন অফিসার তানভীর হাসান, ইইই বিভাগের মৃত আবুল হোসেন ও রেজিস্টার দপ্তরের গার্ড আব্দুর রাজ্জাক।
তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রাচীর নির্মাণ হলে তাদের চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। ক্যান্টনমেন্টেও একাধিক রাস্তা বা পকেট গেট থাকে উল্লেখ করে মেস মালিক আব্দুল হান্নান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার আগেই এখানে রাস্তা ছিলো। হঠাৎ করে তা বন্ধ করে দিলে আমাদের সমস্যা হবে। অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্যান্টনমেন্টেও একাধিক রাস্তা খোলা রাখা হয়।”
এ বিষয়ে সাবেক শিক্ষক নেতা ড. সোহেল রানা বলেন, "এ বিষয়ে আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছেন? আমি তো প্রশাসনের কেউ না। আর চারুদ্বীপের মেস বা বাসায় তো আমাদেরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তারা থাকেন। তাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা বলেছি। কারণ আমাদের তো বিকল্প রাস্তা নাই।"
সীমানা প্রাচীর নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, "৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তারিখ বাড়ানো আছে। তারপরই দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় প্রধান ফটকগুলো ছাড়া বাকিগুলো বন্ধ করা হবে।"
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "শিক্ষক কর্মকর্তা ও স্থানীয় লোকজনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সীমানা প্রাচীর সম্পন্নের তারিখ বাড়ানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বেষ্টনীর (সীমানা প্রাচীর) অসমাপ্ত কাজ ৩১ ডিসেম্বর শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু স্থানীয় লোকদের মৌখিক আবেদন এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিকল্প রাস্তা করতে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এক মাস সময় বাড়ানো হয়েছে।"
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা