০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩০, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৫
`

সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার চায় জামায়াত : গোলাম পরওয়ার

সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন মিয়া গোলাম পরওয়ার - ছবি : নয়া দিগন্ত

সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার চায় জামায়াত মন্তব্য করে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘দেশের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো জেঁকে আছে। সংস্কারে সময় লাগবে। সব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার শেষ করতে পারবেন না। নির্বাচনের বিষয়ে সংস্কার শেষ করে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচিত সরকার বাকি সংস্কার কাজ এগিয়ে নেবে। নির্বাচনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্যে এ সরকারকে সময় দেয়া প্রয়োজন তবে তা দীর্ঘ হওয়া উচিত নয়।’

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে ইসলামপুর উপজেলা অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইসলামপুর উপজেলা শাখা আয়োজিত ইউনিট দায়িত্বশীর সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সবদলসহ বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীও নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ চায়। আগামী ২০২৫ সাল বাংলাদেশে যেমন একটি টার্নিং পয়েন্ট তেমনি জামায়াতের জন্যও বছরটি টার্নিং পয়েন্ট।’

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দু’হাজারের অধিক মানুষ শহীদ ও ৩০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। আমরা তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতারা আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করেছেন। তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশকে আমার নতুন রূপে গড়তে চাই। যে কারণে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন। যে নির্বাচনে সাড়ে ১৫ বছর এদেশের ভোটাধিকার বঞ্চিত ভোটাররা তাদের ভোট দিতে পারবেন। ওই পরিমাণ সংস্কার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের একটি রোড ম্যাপ দিবেন এটাই দাবি আমাদের।’

তিনি বলেন, ‘যে শেখ মুজিব সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য কথা বলেছেন সেই শেখ মুজিবের হাত দিয়েই গণতন্ত্র হত্যার কাজ শুরু করা হয়েছে। আর গত সাড়ে ১৫ বছর তার কন্যা শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার গণতন্ত্র হত্যা করে ক্ষমতা থেকে নেমে আসার সিঁড়ি সরিয়ে দিয়েছেন। তিনি তার বোন রেহেনা, ভাগনী টিউলিপ ও ছেলে জয় মিলে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা লগি-বৈঠা দিয়ে সাপের মতো পিটিয়ে জামায়াত-শিবিরের নয়জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। তারা লাশের উপর নৃত্য করেছে।’

সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশ শাসন করেছে। সে কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিবাদী, স্বৈরশাসক ছিল। তারা জনগণের সমস্ত অধিকার, বাকস্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মিডিয়ার স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষাজীবন, ধর্মীয় মূল্যবোধ সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের ভোট দিতে পারেনি, বাংলাদেশের মানুষ আর এ রকম নির্বাচন হতে দিবে না।’

তিনি বলেন, ‘বিগত সরকার তথাকথিত যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বানিয়ে আমাদের নিরপরাধ পাঁচজন শীর্ষ নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য এদেশের আলেমদের গ্রেফতার করে জেল হাজতে নির্যাতন করেছে। হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করে জেলে ভরে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চেয়েছিলেন তিনি। শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় গিয়ে ক্ষমতার সিঁড়ি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। তিনি নিজের হাতে ক্ষমতা থেকে নেমে আসার পথরুদ্ধ করেছিলেন। যে কারণে ক্ষমতা থেকে নেমে আসার রাস্তা বন্ধ হয়েছিল। এজন্য গত ৫ আগস্ট ভারতের মাটিতে গিয়ে পড়েছেন। এখন তিনি ভারতে বসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন।’

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ড. ছামিউল হক ফারুকী, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও জামালপুর জেলা শাখার সাবেক আমির অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ নাজমুল হক সাঈদী, জেলা আমির মাওলানা আব্দুস সাত্তার, সেক্রেটারি আব্দুল আউয়াল, নায়েবে আমির অধ্যাপক খলিলুর রহমান।

এ সময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইসলামপুর উপজেলা শাখা আয়োজিত ইউনিট সম্মেলন সভাপতিত্ব করেন ইসলামপুর উপজেলা জামায়াতের আমির রাশেদুজ্জামান ও উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবু মুছা সঞ্চালনা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement