কৃষিগুচ্ছে থাকতে চান না বাকৃবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
- মো: লিখন ইসলাম, বাকৃবি
- ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২১:০৩
কৃষিগুচ্ছে থাকতে চান না বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বাকৃবির ডিন কাউন্সিলে গুচ্ছ থেকে বের হয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন, বাকৃবি ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো: গোলাম রাব্বানী।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্যোগে ২০১৯ সালে কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে গুচ্ছ পদ্ধতির যাত্রা শুরু হয়। পরীক্ষার্থীদের সুবিধা দিতে গুচ্ছ পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়েছিল, তবুও এতে সুবিধার চেয়ে বিতর্ক এবং সমালোচনা বেশি হয়েছে। পাঁচটি ভর্তি পরীক্ষার অভিজ্ঞতার আলোকে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসার পক্ষে মতামত দিয়েছেন বাকৃবির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা হলেও আশার মুখ দেখেনি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে বাকৃবির স্বকীয়তা রক্ষায় আগের মতো আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার দাবি জোরালো হয়েছে।
বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো: আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে নই। আমাদের অবশ্যই কৃষিগুচ্ছ থেকে বের হয়ে আসা উচিত। এই পদ্ধতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব মানদণ্ড ও স্বকীয়তা বজায় রাখতে বাধা সৃষ্টি করছে। আমরা আমাদের মান অনুযায়ী মেধাবী শিক্ষার্থী বাছাই করতে চাই, যা গুচ্ছ পদ্ধতিতে সম্ভব হচ্ছে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. পারভেজ আনোয়ার এ বিষয়ে বলেন, ‘বাকৃবির ভর্তি পরীক্ষা আলাদা হওয়া উচিত। শুরু থেকেই আমাদের ভর্তি পরীক্ষা স্বচ্ছ ও অনন্য ছিল। আমরা শুধুমাত্র সরকারি মুক্তিযোদ্ধা ও উপজাতি কোটাই মেনে চলেছি, অন্য কোনো কোটা কখনো মানিনি। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় আমাদের মান বজায় রাখা কঠিন, ফলে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নিলে মেধার সর্বোচ্চ মূল্যায়ন সম্ভব হবে।’
বাকৃবির মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: গোলজার হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকা উচিত। কারণ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ভিন্ন। তিনি বলেন, এক মেধাতালিকায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাছাইয়ের পদ্ধতি আমি সমর্থন করি না। গুচ্ছ পদ্ধতির ফলে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি ভর্তি হচ্ছে, ফলে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান কমে যাচ্ছে এবং ভালো শিক্ষার্থীরা মান হারাচ্ছে।’
উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো: বকুল আলী বলেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তার রঙ হারাচ্ছে। একক ভর্তি পরীক্ষায় কখনো কোনো ভুল বা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অন্য কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বার বার। এক সময় শীর্ষস্থানীয় মেধাবীরা বাকৃবিতে ভর্তি হতে পারত কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতিতে কম জিপিএধারীরাও ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে, যা বাকৃবির স্বকীয়তা নষ্ট করছে।’
ভেটেরিনারি অনুষদের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী মো: ওমর ফারুক বলেন, ‘গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতির কারণে সেশনজট তৈরি হচ্ছে। গুচ্ছ পরীক্ষা সবার শেষে হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়ছে। শুধুমাত্র যাতায়াতের সুবিধার কথা বিবেচনা করে গুচ্ছ পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হলেও তেমন ফলপ্রসূ হয়নি।’
কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া জাহান খুকি মনে করেন, ‘গুচ্ছে নিজস্ব প্রশ্ন কাঠামোতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া যাচ্ছে না বলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের যাচাইয়ের সুযোগ কমে আসছে। গুচ্ছে কারিগরি ত্রুটির কারণে শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে।’
বাকৃবি ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো: গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমাদের ডিন কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আমরা কৃষিগুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আসব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয় এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করছে। আমরা আগে থেকেই আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা করতাম, যা আমাদের জন্য সুবিধাজনক ছিল। গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যে আমাদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।