২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কটিয়াদীতে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট

কটিয়াদীতে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট - নয়া দিগন্ত

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে প্রতিবছরের মতো এবারো বসেছে দেশের সবচেয়ে বিখ্যাত ৫০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ঢাক-ঢোলের হাট।

হিন্দুদের দুর্গাপূজা উপলক্ষে উপজেলা সদরের পুরাতন বাজার প্রেসক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা অফিসের সামনে এ হাট বসে। এটি ৫০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী হাট।

ইতোমধ্যে ঢাক-ঢোল, সানাই, বাঁশি নিয়ে হাটে আসতে শুরু করেছে দল বেঁধে। দীর্ঘদিনের এই ঐতিহ্যবাহী হাট সম্পর্কে দেশের প্রায় সর্বত্রই সুনাম রয়েছে। পূজার আয়োজকরা ভালো মানের বাদক নিতে ছুটে আসেন এই হাটে।

প্রচলিত আছে, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় সর্বপ্রথম তার প্রাসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন শুরু করেন। উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে ভোগবেতাল গ্রামে ছিল রাজার প্রাসাদ। পূজা উপলক্ষে সুদূর বিক্রমপুর (মুন্সীগঞ্জ) পরগনার বিভিন্ন স্থানে বার্তা পাঠানো হতো। ঢাক-ঢোল ও বাঁশিসহ বাদ্যযন্ত্রীদের আগমনের জন্য।
ওই সময় নৌ-পথে বাদ্যযন্ত্রীরা কটিয়াদী-মঠখোলো সড়কের পাশে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে যাত্রাঘাট নামক স্থানে পূজার দু’দিন আগে এসে পৌঁছাতেন। পরবর্তী সময়ে মসুয়া গ্রামে বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরিকিশোর রায় চৌধুরীর বাড়িতে মহা ধুমধামে পূজা শুরু হয়।

একইসাথে চলে পূজায় বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতা। দিন দিন পূজারী ও আয়োজকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। একপর্যায়ে হাটের স্থান নির্ধারণ নিয়ে আয়োজকদের মাঝে বিরোধ আর দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে অবশেষে যাত্রাঘাট থেকে স্থান পরিবর্তন হয়ে আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী কটিয়াদী পুরাতন বাজার এলাকায় এই হাট চলতে থাকে।

আজ অবধি এই হাটে বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুলসংখ্যক দুর্গাপূজার আয়োজক ও বাদ্যযন্ত্রীদের আগমন ঘটে। নাচসহ বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে বাদ্যযন্ত্রীরা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে থাকে।

সাধারণত একটি ঢাক ১০ থেকে ১২ হাজার, ঢোল সাত-আট হাজার, আর বাঁশি প্রকারভেদে পাঁচ থেকে সাত হাজার, ‘ব্যান্ডপার্টি’ ছোট ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার এবং বড় ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ভাড়া হয়। বাদ্যযন্ত্রীরা পূজামণ্ডপে বাজনা বাজিয়ে দর্শক ও ভক্তদের আকৃষ্ট করে থাকে।

বাংলাদেশের আর কোথাও এ ধরনের বাদ্যযন্ত্রের হাট আছে বলে জানা যায়নি।

কটিয়াদী উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব প্রভাষক ধ্রুব রঞ্জন দাস বলেন, এই ঢাকের হাট আমাদের ঐতিহ্য। হাটে অস্থায়ী মনিটরিং কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement