২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

এই অসুখের সাথে আপস করেই চলতে হবে : আলিফ আলাউদ্দিন

আলিফ আলাউদ্দিন - ছবি : সংগৃহীত

আলিফ আলাউদ্দিন। নতুন প্রজন্মের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পীর নাম। দেশের সবচেয়ে বড় সঙ্গীত পরিবারে জন্ম তার। সুরস্রষ্টা আলাউদ্দিন আলী এবং নজরুল সঙ্গীতশিল্পী সালমা সুলতানার মেয়ে তিনি। ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে হঠাৎ করেই তার কিডনি রোগের কথা জানতে পারে দেশবাসী। আলিফ নাকি এই খবর জানতেন আরো ১০ বছর আগে থেকেই। দুটি কিডনি ৮০ শতাংশই অকেজো। তারপরও থেমে নেই তার সঙ্গীতচর্চা। এ বিষয়ে নয়া দিগন্তের কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাতকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন : সব মিলিয়ে আপনি এখন কেমন আছেন?
আলিফ আলাউদ্দিন : আমার কিডনির অবস্থা আগের মতোই আছে। কিডনি ফাংশনের শেষ ধাপে আছি। যতদিন এভাবে থাকা যায়। তারপর সময় হলে ট্রান্সপ্লান্টে (প্রতিস্থাপন) যাবো। মাঝে কোভিড হওয়াতে একটু ভয় কাজ করছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে বড় কোনো অসুবিধা দেখা দেয়নি।

আপনার কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি চলছিল গত বছর থেকে। এখন সেই উদ্যোগ কোন পর্যায়ে আছে?
-এই কিডনি যতদিন চলে সেটাই আমার এক্সট্রা লাইফ। যখন সময় হবে তখন চিকিৎসক জানাবেন।

শারীরিকভাবে কোন সমস্যা গুলো বেশি জটিল আকার ধারণ করেছে?
-খুব দুর্বল লাগে, মাথা ব্যাথা থাকে। প্রতিদিন ২২ থেকে ২৬ টা ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু মানসিকভাবে আমি খুব শক্ত থাকতে চেষ্টা করি তাই অনেকে বুঝতে পারে না আমার কোনো অসুখ আছে।

চিকিৎসার জন্য আপনি কি কারো হেল্প চান?
-না, প্রয়োজন হলে জানানো।

দেশের অন্য যারা এই সমস্যায় আছেন তাদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কি?
-আমি পিকেডি (পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজে) আক্রান্ত। এই অসুখের তেমন কোনো চিকিৎসা আজ অবদি বের হয়নি। এটা জিনগতভাবে হয় এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম। আমার মাও এই অসুখ নিয়ে ভোগেছেন, কিডনি প্রতিস্থাপন করে ২০ বছর বেঁচে ছিলেন। আসলে শক্ত মনোবল দরকার এই অসুখ মোকাবেলা করার জন্য। আর প্রচুর পানি খাওয়ার অভ্যাসটা ছোট বেলা থেকেই করে ফেলতে হবে; তার মানে এই না যে তাতে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তাতে ইনফেকশান (সংক্রমণ) কম হবে। সুতরাং যাদের পিকেডি তাদের এই অসুখের সাথে আপোস করেই চলতে হবে। নিজের মন রাখতে হবে।

এই অবস্থায় গানের চর্চা কি করা সম্ভব হচ্ছে?
-হ্যা, অবশ্যই হচ্ছে। তবে মহামারীর জন্য আর করোনা হওয়াতে একটু মুচরে গিয়েছিলাম। এখন নিজেকে আবার গানে ব্যাস্ত করবার প্রক্রিয়ায় আছি।

নতুন কোনো কাজের খবর আছে কি না?
-বেশ কিছু গানের কাজ অর্ধেক শেষ হয়ে আছে সেগুলো সম্পন্ন করতে হবে। আমার মার (সালমান সুলতানা) গাওয়া বাবার (আলাউদ্দিন আলী) সুরে কিছু গান রিমেক করতে চাই।

পারিবারিকভাবে আপনারা সংগীত ঐতিহ্যের মানুষ। এ বিষয়টি আপনার ক্যারিয়ারে কতটুকু প্রভাব ফেলেছে?
-প্রভাব তো ফেলেছেই। আমি বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশাল সঙ্গীত পরিবারের মেয়ে। আমার কাছ থেকে তাই সবার এক্সপেকটেশান (প্রত্যাশা) টাও বেশি। কিন্তু আমার শারিরীক অসুস্থতার কারণে অনেক কাজ ছাড় দিতে হয়েছে। সেটা নিয়ে আমি অবশ্য মন খারাপ করি না। যতো ভালোবাসা পাচ্ছি বা পেয়েছি তা আমার কাছে অনেক।

এই মুহূর্তে পরিবার থেকে মানসিকভাবে কেমন সাপোর্ট পাচ্ছেন?
-১১০% সাপোর্ট পাচ্ছি। আমাদের পরিবারের সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে আর আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে তাই তারা সব রকম সাপোর্টই দেয়ার চেষ্টা করে।

পরিবার এবং ক্যারিয়ার নিয়ে সামনের পরিকল্পনা কি?
-আমি আগে সুস্থ হতে চাই। শরীর অসুস্থ বলেই অনেক কাজ শেষ হচ্ছে না কারণ ফোকাস করতে পারছি না। তারপরো বাসায় প্রতিদিনই গানের চর্চা চলে। এখন আমার মেয়ে ও যোগ দিয়েছে আমার আর আমার হাজবেন্ডের সাথে। সেও অনেক ইন্সট্রুমেন্ট বাজিয়ে গান গায়। ট্রান্সপ্লান্ট (প্রতিস্থাপন) এর পর কাজ অবশ্যই আরো বাড়িয়ে দিব যদি সুস্থ থাকি ইনশা আল্লাহ। তবে এখন আগে সুস্থভাবে বাঁচতে চাই। আমার ছোট্ট মেয়েটার জন্য। নিজের পরিবারের জন্য।

 


আরো সংবাদ



premium cement