চাপে পড়ে যাচ্ছে রফতানিমুখী খাত
- আশরাফুল ইসলাম
- ১৬ মার্চ ২০২০, ০০:০০
বর্তমানে বিশ্বের ১৩৬ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। নতুন করে ১৩ দেশে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৫১৯ জন। মারা গেছে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অনেক দেশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে। কারণ বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় কমছে ভোগ ব্যয়। মানুষের চলাচল সীমিত হওয়ায় ইউরোপের অনেক দেশে বিক্রি কমে গেছে। অনেক শহরে গার্মেন্টস পণ্যের স্টোর সাময়িক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের রফতানিতে। ইতোমধ্যে ক্রয় আদেশ দেয়া বেশ কিছু চালান আপাতত না পাঠানোর অনুরোধ করেছেন ক্রেতারা। আবার কেউ কেউ পুরো ক্রয়াদেশের পণ্য এখনই না পাঠানো কিংবা পোশাক বানানোর প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। এতে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের মতো তৈরী পোশাক খাত নির্ভর রফতানি আয়ে সবচেয়ে বেকায়দা পড়ে যাচ্ছে এর প্রভাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রফতানির প্রধান খাত তৈরী পোশাক ও টেক্সটাইল খাত নয়া দিগন্তের সাথে কথা বলেছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সাবেক সহসভাপতি ও পরিচালক ফজলে শামীম এহসান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নয়া দিগন্তের প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে আমদানি রফতানিতে করোনাভাইরাসের কোনো প্রভাব পড়েছে কী না?
ফজলে শামীম এহসান : করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাত। প্রথমে কাঁচামাল সরবরাহে কিছুটা অসুবিধা ছিল, এ সুযোগে দেশী সরবরাহকারীরা অযৌক্তিক হারে দাম বাড়িয়েছে। আর সেই সাথে চাহিদার কারণ দেখিয়ে নিট ওয়্যার শিল্পের প্রধান কাঁচামাল সুতার দাম প্রায় ১৫-২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতেই আমাদের পণ্যের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।
প্রশ্ন : বিদেশী ক্রেতাদের এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া কী?
ফজলে শামীম এহসান : দেখুন বিশ্বব্যাপীই এর বিস্তৃতি হচ্ছে। আমরা নতুন করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি পশ্চিমা বিশ্বে করোনার বিস্তৃতির কারণে। আমাদের পণ্যের বড় বাজার হলো ইউরোপ। ইউরোপে বিস্তৃতির কারণে এখন বিভিন্ন ক্রেতারা আমাদের উৎপাদন বন্ধ রাখতে বলছে। সেই সাথে তারা নতুন কোনো ক্রয় আদেশ দিচ্ছে না।
প্রশ্ন : এ পর্যন্ত কোনো দেশ বা ক্রেতা কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল করেছেন কী না?
ফজলে শামীম এহসান : বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তার কাছ থেকে তাদের ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ বাতিলের খবর শোনা যাচ্ছে। এমনকি তাদের নিজেরই গত ১ সপ্তাহে ইতালি ও গ্রিসের ক্রেতার নতুন ক্রয়াদেশ দেয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করেছে, এমন কি ইউরোপের অন্য ক্রেতারাও কোনো সদুত্তর দিচ্ছে না।
প্রশ্ন : এ পরিস্থিতিতে আপনাদের সার্বিক অবস্থা কী?
ফজলে শামীম এহসান : আমাদের সামনে বড় উদ্যোগের কারণ হলো ঈদ। প্রতি বছর ঈদের সামনে নানা ধরনের ব্যয় বেড়ে যায়। বিশেষ করে শ্রমিকদের বাড়তি বেতন ও বোনাস দিতে হয়। কিন্তু বর্তমানে যে হারে কাজ কমে যাচ্ছে এটা অব্যাহত থাকলে সব উদ্যোক্তাই বেকায়দায় পড়ে যাবেন। বাড়তি বেতনভাতা তো দূরের কথা, নিয়মিত বেতনভাতাই পরিশোধ করা কষ্টদায়ক হবে। ঈদকে সামনে রেখে সব মালিকই এখন দিশেহারা। কাজ না থাকলে আমরা শ্রমিকের পাওনাদি পরিশোধ করব কোথা থেকে।
প্রশ্ন : ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। ঋণ নিয়ে অনেকেই পরিশোধ করছেন না। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ আরো বেড়ে যাবে কী না?
ফজলে শামীম এহসান : বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ব্যাংকের ঋণ সময় মতো পরিশোধ করতে পারেন না। দু-একজন তো ব্যতিক্রম থাকবেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে অতি ব্যাংকনির্ভর উদ্যোক্তা সবচেয়ে বেকায়দায় পড়ে যাবেন। এমনিতেই অনেকেই ব্যবসায় মার খাওয়ার কারণে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এর ওপর করোনার প্রভাবে সব ব্যবসায়ীই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করাই দায় হয়ে পড়বে। এতে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
প্রশ্ন : বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনাদের করণীয় কী?
ফাজলে শামীম এহসান : এমনিতেই বিগত মাসগুলোতে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর কাছে আমরা সক্ষমতা হারিয়েছি, এখন কোরোনার কারণে ভারত আবারো তাদের মুদ্রা অবমূল্যায়ন করেছে, এটা আমাদের জন্য অশনি বার্তা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলকে এখনই ভাবতে হবে। এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্ব পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের উদ্ধারে করণীয় নিয়ে নীতিনির্ধারণী মহলকেই ভাবতে হবে। অন্যথায় পথে বসে যাবেন উদ্যোক্তারা। এ শিল্পের সাথে লাখ লাখ কর্মক্ষম শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। এমতাবস্থায় সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না।