পুঁজিবাজারে বিদায়ী সপ্তাহে শীর্ষ দশের হালচাল
- আবু রাইয়ান
- ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর দরের উত্থান-পতন দিনে পার করে একটি সপ্তাহ। কোনো কোনোটির মূল্য পতন হয়। আবার কোনো কোনো কোম্পানির মূল্যের উত্থান হয়। কোনো কোনো কোম্পানির লেনদেন বেশি হয়। আবার কোনো কোনো কোম্পানির লেনদেন তুলনামূলক কম হয়। পুঁজিবাজার নিয়ে সাত দিনের শীর্ষ দশের পর্যালোচনা থাকবে আমাদের মুক্তবাজারে। ১৫ দিন অন্তে প্রতি সোমবার পাঠকদের জন্য থাকবে এ আয়োজন।
সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষে ছিল যারা : বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে লাফার্জ হোলসিম। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ৪ কোটি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৮টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে; যার বাজারমূল্য ১৮৮ কোটি ৫৫ লাখ ৭ হাজার টাকা। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া যায়। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এডিএন টেলিকম। কোম্পানিটির ১ কোটি ৩৫ লাখ ১৪ হাজার ৯৯৩টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে; যার বাজারমূল্য ৫৭ কোটি ৪৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। স্কয়ার ফার্মা তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে। কোম্পানিটির ২৮ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৫টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে; যার বাজারমূল্য ৫৬ কোটি ২১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল। কোম্পানিটির ৮৬ লাখ ৯ হাজার ৯৯৬টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে; যার বাজারমূল্য ৫৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
এসএস স্টিল তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছে। কোম্পানিটির ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬৬২টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে; যার বাজারমূল্য ৫০ কোটি ৫২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। লেনদেনের তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছেÑ বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল, গ্রামীণ ফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, কেপিসিএল ও পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স।
সপ্তাহে দর পতনের শীর্ষে ছিল যারা : সপ্তাহ লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহে টপটেন লুজার বা দর পতনের শীর্ষে রয়েছে বিএসআরএম স্টিল। সপ্তাহে কোম্পানির সর্বচ্চ দর কমেছে ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া যায়। তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটি সর্বশেষ ৩৬ টাকা দরে লেনদেন হয়। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটি সর্বমোট ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা লেনদেন করে; যা গড়ে প্রতিদিন ৪৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। লুজারের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আইসিবি। সপ্তাহে শেয়ারটির সর্বোচ্চ দর কমেছে ১২ দশমিক ৫১ শতাংশ। শেয়ারটি সর্বশেষ ৭৯ টাকা দরে লেনদেন হয়। সপ্তাহজুড়ে শেয়ারটি সর্বমোট ৪ কোটি ৭৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা লেনদেন করে; যা গড়ে প্রতিদিন ৯৪ লাখ ৬৬ হাজার ২০০ টাকা। বিআইএফসি তৃতীয় স্থানে রয়েছে। সপ্তাহে শেয়রটির সর্বোচ্চ দর কমেছে ১২ শতাংশ। শেয়ারটি সর্বশেষ ২ টাকা ৪০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। সপ্তাহজুড়ে শেয়ারটি সর্বমোট ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা লেনদেন করে; যা গড়ে প্রতিদিন ৫৭ হাজার ২০০ টাকা। লুজারের তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছেÑ ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, সিলকো ফার্মা, বিডি ল্যাম্পস, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ ফান্ড, এমআই সিমেন্ট ও জেমিনি সি ফুড।
সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত : বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে প্রকৌশল খাতে। ডিএসইতে মোট লেনদেনের ১৬.৯ শতাংশ লেনদেন হয়েছে এই খাতে। সূত্র জানায়, বস্ত্র খাতে ১২.৮ শতাংশ লেনদেন করে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ওষুধ-রসায়ন খাতে ১০.৭ শতাংশ লেনদেন করে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তালিকায় থাকা অন্য খাতগুলোর মধ্যে সিমেন্ট খাতে ৯.৯ শতাংশ, সাধারণ বীমা খাতে ৭.২ শতাংশ, বিবিধ খাতে ৬.৩ শতাংশ, জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতে ৫.৯ শতাংশ, ব্যাংক খাতে ৫.৮ শতাংশ, খাদ্য খাতে ৫.৩ শতাংশ, টেলিকম খাতে ৪.৩ শতাংশ, আইটি খাতে ২.৪ শতাংশ, আর্থিক খাতে ২.৩ শতাংশ, জীবন বীমা খাতে ১.৯ শতাংশ, সিরামিক খাতে ১.৫ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ১.৪ শতাংশ, সেবা-আবাসন খাতে ১.৩ শতাংশ, পাট খাতে ১.৩ শতাংশ, ভ্রমণ-অবকাশ খাতে ১.১ শতাংশ, ট্যানারি খাতে ১.১ শতাংশ ও কাগজ খাতে দশমিক ৬ শতাংশ লেনদেন হয়েছে।
সপ্তাহজুড়ে ৬৬ শতাংশ বহুজাতিকের দর বেড়েছে : বিদায়ী সপ্তাহে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর দাপট ছিল ঈর্ষণীয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৮টি বা ৬৬ শতাংশ কোম্পানির দর বেড়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের। কোম্পানিটির ১২.৩ শতাংশ দর বেড়েছে। লেনদেনের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আলোচ্য সপ্তাহে লাফার্জহোলসিম সর্বশেষ ৫০ টাকা ৩০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। গ্লাক্সেস্মিথক্লাইনের ৪.৭ শতাংশ দর বেড়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। আলোচ্য সপ্তাহে কোম্পানিটি সর্বশেষ এক হাজার ৭৩০ টাকা ৮০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। বিএটিবিসি ৪ শতাংশ দর বেড়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে। গত সপ্তাহে কোম্পানিটি সর্বশেষ এক হাজার ৭৩ টাকা ৪০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাটা সু’র ২.৫ শতাংশ, বার্জার পেইন্টসের ১.৫ শতাংশ, লিন্ডে বিডির দশমিক ৪ শতাংশ, ম্যারিকোর ২.৬ শতাংশ ও রেকিট বেনকিজারের ২.৪ শতাংশ দর বেড়েছে। অন্য দিকে দর কমার তালিকায় রয়েছে গ্রামীণফোন, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, আরএকে সিরামিক ও সিঙ্গারবিডি।
সাপ্তাহিক রিটার্নে দর কমেছে ১১ খাতে : সমাপ্ত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সাপ্তাহিক রিটার্নে দর কমেছে ১১ খাতে। অন্য দিকে দর বেড়েছে ৯ খাতে। সূত্র জানায়, আলোচ্য সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে আর্থিক খাতে। এই খাতে ৭.৪ শতাংশ দর কমেছে। এরপরে টেলিকমিউনিকেশন খাতে ৫.১ শতাংশ দর কমে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। প্রকৌশল খাতে ৩ শতাংশ দর কমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তালিকায় থাকা অন্য খাতগুলোর মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ২.৭ শতাংশ, জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতে ২.৪ শতাংশ, সাধারণ বীমা খাতে ২.২ শতাংশ, ব্যাংক খাতে ১.৮ শতাংশ, সিরামিক খাতে ১.৪ শতাংশ, আইটি খাতে দশমিক ৮ শতাংশ, বস্ত্র খাতে দশমিক ৬ শতাংশ ও ওষুধ খাতে দশমিক ৫ শতাংশ দর কমেছে। এ দিকে দর বেড়েছে ৯ খাতে। সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে পাট খাতে। এই খাতে ৯ শতাংশ দর বেড়েছে। সিমেন্ট খাতে ৭.৩ শতাংশ দর বেড়েছে। এ ছাড়া খাদ্য খাতে ২.৬ শতাংশ, কাগজ খাতে ২.১ শতাংশ, জীবন বীমা খাতে ২ শতাংশ, সেবা-আবাসন খাতে ১.৭ শতংশ, ট্যানারি খাতে দশমিক ৯ শতাংশ, বিবিধ খাতে দশমিক ৬ শতাংশ ও ভ্রমণ-অবকাশ খাতে দশমিক ১ শতাংশ দর বেড়েছে।
ডিএসইতে পিই রেশিও কিছুটা কমেছে : দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন কমেছে। সাথে সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) কমেছে। আগের সপ্তাহের চেয়ে পিই রেশিও কমেছে দশমিক ১৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। সূত্রমতে, আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে পিই রেশিও অবস্থান করছে ১৩ দশমিক ৮১ পয়েন্টে। এর আগের সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১৩ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট। খাতভিত্তিক হিসেবে পিই রেশিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংক খাতের পিই রেশিও অবস্থান করছে ৬ দশমিক ৯০ পয়েন্টে, সিমেন্ট খাতে ৩২ দশমিক ২০ পয়েন্ট, সিরামিক খাতে ২৪ দশমিক ৩০ পয়েন্ট, প্রকৌশল খাতে ১৩ দশমিক ৭০ পয়েন্ট, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ২৬ দশমিক ৩০ পয়েন্ট, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ১৩ দশমিক ৫০ পয়েন্ট, সাধারণ বীমা খাতে ১৪ দশমিক ৮০ পয়েন্ট, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ২১ দশমিক ৬০ পয়েন্ট, বিবিধ খাতে ২২ দশমিক ৩০ পয়েন্ট, আর্থিক খাতে ৬৫ পয়েন্ট, পেপার থও প্রিন্টিং খাতে ২০২ পয়েন্টে, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ১৫ দশমিক ৬০ পয়েন্টে, সেবা ও আবাসন খাতে ১৩ দশমিক ৬০ পয়েন্ট, ট্যানারি খাতে ২২ দশমিক ৫০ পয়েন্ট, টেলিকমিনেকেশন খাতে ১০ দশমিক ৪০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।