রেমিট্যান্সে ইসলামী ব্যাংকগুলোর অবদান
- লাবিদ ইসলাম
- ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
বেশির ভাগ সূচক যখন নি¤œগামী, তখন রেমিট্যান্সের সূচক আশির্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে অর্থনীতিতে। বলা চলে সূচক ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে এমন খাতের মধ্যে রেমিট্যান্স প্রথম অবস্থানে রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ২৫ শতাংশ। যেখানে আলোচ্য সময়ে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক প্রায় ৬ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে রফতানি আয়ের পরেই রয়েছে রেমিট্যান্স। তবে প্রকৃত পক্ষে বলা যায় রেমিট্যান্সই প্রধান উৎস। রফতানি আয়ের বিপরীতে আমদানি করতে হয়। কিন্তু রেমিট্যান্স হলো নিট বৈদেশিক মুদ্রা, যার বিপরীতে কোনো ব্যয় নেই।
বাংলাদেশী শ্রমিকের বেশি ভাগই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ করে। এ কারণে এসব দেশ থেকেই বৈদেশিক আয় দেশে বেশি আসে। বলা চলে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ রেমিট্যান্সই আসে এ মধ্যপ্রাচ্যের আটটি দেশ থেকে। মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমশক্তির কাছ থেকে বরাবরই রেমিট্যান্স আহরণে প্রধান ভূমিকা রাখে দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো। কিন্তিু রেমিট্যান্স আহরণে হঠাৎ করেই হোঁচট খাচ্ছে ইসলামী ব্যাংকগুলো। একটি পরিসংখ্যান টানলেই সহজেই বোঝা যাবে। গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই- সেপ্টেম্বর) ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরণ হয়েছিল মোট রেমিট্যান্সের ৩৮ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে নেমেছে ৩১ দশমিক ১ শতাংশ। আর গত বছরের প্রথম তিন মাসে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে ৬১ দশমিক ৯৭ শতাংশ, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ৬৮ দশমিক ৯ শতাংশে। অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংকগুলোর কমলেও বেড়েছে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর। সূত্র বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন মাস ভিত্তিক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, প্রায় সবগুলো ইসলামী ব্যাংকেরই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে আগের বছরের তুলনায়। তবে বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের (আইবিবিএল) রেমিট্যান্স বেড়েছে আলোচ্য ত্রৈমাসিকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আইবিবিএলের রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে .৬৫ দশমিক ৮১ শতাংশ, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫৬ শতাংশ। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহ আলোচ্য সময়ে কমে ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশে নেমেছে। অনুরূপভাবে আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে ২৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ থেকে ২২ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমেছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কমে ২ দশমিক ৬২ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশে নেমেছে। তবে সামান্য বেড়েছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকের। এর মধ্যে শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংকের শূন্য দশমিক ৮৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ১ দশমিক ৮৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তেমনিভাবে এক্সিম ব্যাংকের ১ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১ দশমিক ৪৩ শতাংশে, ইউনিয়ন ব্যাংকের শূন্য দশমিক ৮৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১ দশমিক ১৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আর ইসলামী ব্যাংকিং শাখাগুলোতে শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ থেকে কমে শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশে নেমেছে। তবে ইসলামী ব্যাংকিং উইনডোগুলোতে শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ থেকে সামান্য বেড়ে শূন্য দশমিক ১২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে রেমিট্যান্স বাড়ার পেছনে নানা কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন ২ শতাংশ নগদ সহায়তা। যারাই দেশে রেমিট্যার্নস পাঠাবে তাদের মূল অর্থের অতিরিক্ত ২ শতাংশ নগদ স হায়তা দেয়া হবে-এমন নির্দেশনা আসার পর থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে গেছে। তবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রকৃতপক্ষে শ্রমিক আসার চেয়ে যাওয়ার হার কমে গেছে। অর্থাৎ যে হারে শ্রমিক ফিরে আসছে ওই হারে শ্রমিক যাচ্ছে না। ফলে ইসলামী ব্যাংকগুলোতে সামগ্রিকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। আমাদের রেমিট্যান্সের প্রধান বাজার হলো মধ্যপ্রাচ্য। কিন্তু গত পাঁচ বছর যাবত মধ্যপ্রাচ্য থেকে যে হারে শ্রমিক ফিরে এসেছে সেই হারে যায়নি। আমরা মালয়েশিয়াতেও কাক্সিক্ষত হারে শ্রমিক পাঠাতে পারিনি। এর বিপরীতে নতুন কোনো বড় শ্রমবাজারও সৃষ্টি হয়নি। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি কোনো রকম সচল রাখতে একমাত্র ভরসা রেমিট্যান্স। এ রেমিট্যান্স প্রবাহও ঠিক রাখার জন্য নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। এতে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন, পরিবর্ধন ছাড়াও বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং মনস্তাত্ত্বিক সমৃদ্ধি ঘটাতে হবে। ব্যবস্থা নিতে হবে বিদেশে পাড়ি জমানো মনবসম্পদের স্বাস্থ্য, ভাষা ও মনোভাব ইতিবাচক স্থিতি সৃজনে। ভারত, চীনের মতো বিশেষ ইকোনোমিক জোন সৃষ্টি করে প্রবাসী বাংলাদেশ নাগরিকদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি সঙ্কীর্ণতার অনেক ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। কঠিন ও অসম্মানজনক শর্তে বৈদেশিক সাহায্য নেয়ার পরিবর্তে সমসুবিধা না হলেও অনিবাসীনাগরিকদের বিনিয়োগের সহায়ক পরিবেশে এবং বাড়তি কিছু সুবিধা নিশ্চিত করার মানসিকতা খুবই জরুরি। বড় মাপের রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিইপি মর্যাদা এবং অন্যান্য স্বীকৃতমূলক দৃশ্যমান সুবিধা প্রদান করতে হবে। তা হলে রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি অব্যাহত থাকবে।