২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পুঁজিবাজারে প্রয়োজন ভালো মানের কোম্পানি

-

প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের তুলনায় এই বাজারে বিনিয়োগ করে বেশি মুনাফা তুলে নেয়া যায়। এ জন্য বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ রয়েছে বাংলাদেশের বাজারের প্রতি। এ ছাড়া মধ্যবিত্তের বড় অংশেরই রয়েছে এ বাজারের প্রতি আগ্রহ। চীনা কনসোর্টিয়ামও এ জন্য আগ্রহী হয়েছে। এ জন্য সম্ভাবনাময় দেশের পুঁজিবাজার। এই সম্ভাবনাকে টেকসই করতে প্রয়োজন নীতিনির্ধারণী কিছু সংস্কার। শুধু প্রণোদনা দিলেই এ বাজারকে দাঁড় করানো সম্ভব নয়। প্রয়োজন ভালো কোম্পানির শেয়ার বৃদ্ধি ও নিয়মিত তারল্য জোগানোর ব্যবস্থা করা।
২০১০ সালের ধসের পর বাজার উন্নয়নে একাধিক পরিকল্পনা নেয় সরকার। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদে স্বল্পসুদে ঋণ। এ জন্য বিশেষ তহবিল গঠন ও তার মেয়াদ বাড়িয়েছে। ডিএসইকে ঢেলে সাজিয়েছে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) কোটা নির্ধারণও করেছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নীতিনির্ধারণী বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। এসব উদ্যোগে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকে দেশের পুঁজিবাজার। সময়ের ব্যবধানে ভালো কিছু কোম্পানিও তালিকাভুক্ত হয়।
কিন্তু ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকেই দুঃসময় বাসা বাঁধে দেশের পুঁজিবাজারে। দীর্ঘমেয়াদি পতনের মুখে পড়ে বাজার, যা এখনো চলছে। এতে প্রতিনিয়ত রক্ত ঝড়ছে দেশের বিনিয়োগকারীদের। ছয় মাস ধরেই দেশের দু’টি পুঁজিবাজারে প্রধান নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাঁকা রয়েছে। এটি নিয়ে কারো গরজ দেখা যাচ্ছে না। দেশের দুই বাজারই চলছে এক প্রকার অভিভাবক ছাড়া। অথচ বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারদর, ডিএসইর মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) সব কিছু অনুকূলে থাকার পরও থামছে না বিরামহীন পতন। গত জুন ক্লোজিংয়ে বিভিন্ন কোম্পানির লভ্যাংশ ও বাজেটে বিভিন্ন প্রণোদনার ঘোষণা ছিল। তারপরও বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এর পেছনের কারণ অনেক বোদ্ধা বিনিয়োগকারীও বের করতে পারছেন না।
অবশ্য ডিএসইসহ কিছু বিশ্লেষকের মতে, বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব রয়েছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়। এখনো ভুলে ভরা তথ্য দিয়ে কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে। গত দশ বছরে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এখনো। এমনকি কমিশন গঠন করে তদন্ত করার দাবি উঠেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, যাদের এটা দেখার কথা তারা দেখছেন না। এভাবে সুশাসনের ঘাটতির গর্তটা আকারে বড় হচ্ছে।
তাদের মতামত হচ্ছে, পুঁজিবাজারে শেয়ারদর হ্রাস-বৃদ্ধি পাবে এটা সাধারণ বিষয়। কিন্তু এটা দীর্ঘমেয়াদি থাকলে অবশ্যই তা ভাবার বিষয়। এ ছাড়া বিশেষ কোনো কারণ ব্যতীত একদিন যদি এক শতাংশের বেশি সূচকের পতন হয়, তবে তা ভয়ের কারণ বটে। এর পেছনের কারণটি সংশ্লিষ্ট সংস্থাকেই খুঁজে বের করতে হবে। বাইরের কেউ এসে বের করে দেবে না।
বাজার উন্নয়নে এক হাজার কোটি টাকার তহবিল চেয়েছে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের যুক্তি হচ্ছে, এই বাজারে তারল্য সঙ্কট রয়েছে। তহবিল দিয়ে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি করা হবে। এতে শেয়ারের দর বৃদ্ধি পাবে। বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। এভাবে সব সূচকই ইতিবাচক ধারায় ফিরবে।
কিন্তু বিশ্লেষকরা জানান, এটি করলে দেশের পুঁজিবাজার কৃত্রিম বাজারে পরিণত হবে। শুধু শেয়ারের দর বাড়ানো মানেই বাজারের উন্নয়ন নয়। এক সময় দেখা যাবে, এই অর্থও ফুরিয়ে যাবে। কিছু বিনিয়োগকারী বর্ধিত দামে শেয়ার বিক্রি করে চলে যাবে। তখন আবার পতনের দিকে যাবে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন সূচক। এটি হতে কয়েক বছর সময় নেবে, সময়ের এই ব্যবধানে অনেকেই মনে করবে কিছু দিন হলেও তো বাজার ভালো ছিল।
এই সমাধান বাজারকে টেকসই করবে না। সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজারকে টেকসই করতে হলে প্রয়োজন ধারাবাহিক তারল্য প্রবেশ করানো। ভালো শেয়ারের সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে এই বাজারেও নিয়মিত নতুন বিনিয়োগকারী প্রবেশ করবে। তদের মাধ্যমেই তারল্য যোগ হবে পুঁজিবাজারে। এটি তখনই সম্ভব যখন বাজারে নিয়মিত ভালো কোম্পানির প্রবেশ ঘটবে।
বর্তমানে দেশের বহুজাতিক, রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি বড় মূলধনী প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় না। এর পেছনে তাদের যুক্তি হচ্ছে, বাজারে সুশাসনের অভাব রয়েছে। বাড়তি নজরদারি মেনে নিলেও অহেতুক হয়রানি হওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়। বাড়তি এই পেরেশানি নিতে তারা আগ্রহী নন। এ জন্য চড়া সুদেও ব্যাংক ঋণের প্রতি তারা বেশি আগ্রহী। অথচ পুঁজিবাজারে চাহিদামতো বড় মূলধনও সহজে পাওয়া সম্ভব।
অন্য কারণটি তারা দেখান, বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান খুব বেশি নয়। মাত্র আড়াই শতাংশ। এই আড়াই শতাংশ সুবিধা নিতে তাদের বেশ কয়েক জায়গায় জবাবদিহি করতে হয়। মানতে হয় অনেক নীতিমালা। এটিকে বাড়তি ঝামেলা হিসেবেই দেখছেন তারা।
বিশেষজ্ঞ, বিনিয়োগকারী ও কোম্পানির উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সময়ে জানান, করহারে বড় ব্যবধান হওয়া উচিত। যাতে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তিতে আগ্রহী হয়। কিছুসংখ্যকের মতে, এই হার ১০ শতাংশ ব্যবধান হওয়া উচিত।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির সাথে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ব্যবধান যত বেশি হবে, ততই কোম্পানিগুলো এ বাজারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। এতে শেয়ার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। বাজার বড় হলে এর প্রতিও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজর বৃদ্ধি পাবে।
ভালো কোম্পানি ও শেয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি না করলে পুঁজিবাজারের বিদ্যমান সমস্যা মিটবে না বলেই মনে করছেন বিভিন্ন মহলের বিশ্লেষকরা। তাদের বিশ্বাস, অন্যান্য দেশেও বিভিন্ন সময়ে পুঁজিবাজারে পতন হয়েছে। তারা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে এটি উত্তরণে বাংলাদেশও কিছুটা অনুসরণ করেছে।
কিন্তু ভালো মানের কোম্পানি ও শেয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারেনি। এ জন্য বিভিন্ন সময় নেয়া উদ্যোগের আশানুরূপ ফল মেলেনি। এখন সময় হয়েছে, কার ছাড়ের প্রণোদনা দিয়ে ভালো মানের কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত করা। নইলে এই বাজারের রক্তক্ষরণ চলতেই থাকবে। কারণ, ছোট বাজারে ভালো মানের শেয়ারের সংখ্যা খুবই কম। এ জন্য সাময়িক মুনাফা লাভের টোপ দেয় কারসাজি চক্রের সদস্যরা। এই চক্রের কবলে পড়ে খারাপ মানের কোম্পানির শেয়ারের দর কারণ ছাড়াই বৃদ্ধি পায় বিভিন্ন সময়ে। এতে কেউ লাভবান হলেও আরেক বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্য সরকারের উচিত হবে, প্রথমেই বিভিন্ন সুযোগ দিয়ে ভালো কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি করা। শুধু বিশেষ ব্যবস্থায় তারল্য প্রবেশ করিয়ে বাজারের সূচকের উন্নয়ন করলেও তা টেকসই হবে না। পতনের বৃত্তে ঘুরপাক খাবে নিয়মিত।


আরো সংবাদ



premium cement
পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ফায়ার ফাইটার নয়ন মারা গেছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দর্শনা চেকপোস্টে ভারতীয় মদসহ ভুয়া পুলিশ আটক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রদলের কর্মসূচি ঘোষণা ১১ বছর পর দেশে ফিরলেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা পুনঃতদন্ত করবে কমিশন : চেয়ারম্যান ট্রাকচাপায় ফায়ার ফাইটার নয়ন নিহত : চালক ও হেলপার কারাগারে ‘পরিসংখ্যানগতভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়নি’ সিলেটে ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত গফরগাঁওয়ে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় শিশু নিহত কালীগঞ্জে পুকুরে গোসল করতে নেমে ২ শিশুর মৃত্যু, ১ শিশুকে জীবিত উদ্ধার

সকল