২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত

-

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বাড়ানোর খড়গ ঝুলছে। ইতোমধ্যে পিডিবির পাইকারিতে ২৩ দশমিক ২৭ ও পিজিসিবির বিদ্যুতের সঞ্চালন ব্যয় ৫০ দশমিক ৭৭ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি শেষ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটারি কমিশন (বিআরসি)। আর পাইকারি মূল্য ও সঞ্চালন ব্যয় বাড়লে সবগুলো বিতরণ কোম্পানির গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর আবদার করেছে। তাদের প্রস্তাবের ওপরও গণশুনানি শেষ করেছে বিইআরসি। এখন শুধু ঘোষণা বাকি রয়েছে। এমনি পরিস্থিতি আগামী ১ জানুয়ারি থেকে বিদ্যুতের দাম যে বাড়ছে তা অনেকটাই নিশ্চিত করে বলা যায়। বিদ্যুতের দাম বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্যে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে কথা বলছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সাবেক সহসভাপতি ও পরিচালক, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন ও ইন্টারন্যাশনাল এপারেলস ফেডারেশনের পরিচালক এবং ফতুল্লা গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফজলে শামীম এহসান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নয়া দিগন্তের প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম।
নয়া দিগন্ত : বিদ্যুতের দাম বাড়লে শিল্পে কী ধরনের প্রভাব পড়বে?
ফজলে শামীম এহসান : গত ৪০ বছরের মধ্যে দেশের রফতানি খাতের এখন বেহাল দশা। চার মাস ধরে একটানা রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হচ্ছে। রফতানি খাত বিশেষ করে তৈরী পোশাক খাতের অবস্থা খুবই নাজুক। এ খাতের কোনো প্রকার চাপ নেয়ার সক্ষমতা নেই। তাই এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এটা হলে প্রতিযোগী দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় আমরা আরো পিছিয়ে পড়বো।
নয়া দিগন্ত : নিট ওয়্যারের বর্তমান কী অবস্থা?
ফজলে শামীম এহসান : বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। গত অক্টোবর মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় নিট ওয়্যারের প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৮ শতাংশ। শুধু নিট ওয়্যার নয়, সামগ্রিক খাতেই এখন দুরবস্থা।
নয়া দিগন্ত : রফতানিমুখী শিল্পে এ মন্দার কারণ কী?
ফজলে শামীম এহসান : মূলত কয়েকটি কারণে এ শিল্পে অনেকটা অচলাবস্থা চলছে। প্রথম কারণ হলো আমাদের তৈরী পোশাক পণ্যের প্রধান বাজার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ইউভুক্ত দেশগুলোয় কিছু মন্দাভাব কাজ করছে। তাদের মন্দার কারণে বিশ্ববাজারে পোশাকের দাম কমে গেছে। দ্বিতীয় কারণ হলো বিশ্ববাজারে এ শ্লথগতির কারণে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো তাদের সক্ষমতা বাড়িয়েছে। কিন্তু আমরা বাড়াতে পারেনি। আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো তাদের স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটিয়েছে। শুধু ভারতে গত এক বছরে প্রতি ডলারে সে দেশের রুপি ৬৪ থেকে ৭২ রুপিতে নামিয়ে এনেছে। অর্থাৎ এক বছরে তাদের স্থানীয় মুদ্রা সাড়ে ১২ শতাংশ অবমূল্যায়ন করেছে। ভিয়েতনাম ৬ শতাংশ অবমূল্যায়ন করেছে। আর পাকিস্তান তাদের স্থানীয় মুদ্রা ডলারের বিপরীতে অবমূল্যায়ন করেছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। কিন্তু সে তুলনায় আমাদের টাকা তেমন অবমূল্যায়ন করা হয়নি। ব্যাংকে যেটুকু কমানো হচ্ছে তা কাগুজে কলমে। এর বাইরে রয়েছে ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ। এর ফলে আমরা প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে পড়ছি।
নয়া দিগন্ত : অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংক থেকে উদ্যোক্তা চলতি মূলধনও চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছে না। এর কারণ কী?
ফজলে শামীম এহসান : বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ অভিযোগ সত্য। ব্যবসায়ীরা অনেক ব্যাংক থেকেই চাহিদা অনুযায়ী চলতি মূলধন পাচ্ছেন না। আবার যাও পাচ্ছেন, তা নানা সার্ভিস চার্জের আড়ালে তহবিল ব্যয় বেড়ে চলছে। আমরা অনেক আশা করেছিলাম ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসবে। স্বয়ং সরকার প্রধানও এ ঘোষণা দিয়েছিলেন দেড় বছর আগে। কিন্তু দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হলেও এক অঙ্কের সুদহার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। উচ্চ সুদের কারণে ব্যবসা ব্যয় বেড়ে চলছে। এতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। ফলে মূল্যের প্রতিযোগিতায় আমারা আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো থেকে পিছিয়ে পড়েছি।
নয়া দিগন্ত : আপনার সেক্টরে সর্বশেষ অবস্থা কী?
ফজলে শামীম এহসান : আমি আগেই বলেছি শুধু নিট ওয়্যার নয়, সামগ্রিক সেক্টরেই এখন খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। আমি আমার সেক্টরের অবস্থা সম্পর্কে যদি এক কথায় বলতে হয়, তা হলে বলব গত এক বছরে ৮১টি চালু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে লোকসানের কারণে। বর্তমানে প্রায় ৯০০ কারখানা চালু রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগেই অবস্থা খুব একটা ভালো নেই।
নয়া দিগন্ত : বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী?
ফজলে শামীম এহসান : বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের একটাই উপায়Ñ আর তা হলো আমাদের কথা ও কাজের মিল থাকতে হবে। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে ব্যবসা সহজীকরণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা প্রতি ঘাটে ঘাটে পোহাতে হচ্ছে। ব্যাংক ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে। চলমান অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য নীতিগত সহায়তা দিতে হবে। ব্যবসা সম্প্রসারণে যত বাধা আছে তা দূরীভূত করতে হবে। বর্তমান সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছু প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে। এ ছাড়া বর্তমান অবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।
নয়া দিগন্ত : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ফজলে শামীম এহসান : আপনাকেও ধন্যবাদ।


আরো সংবাদ



premium cement