গ্রাহকসেবায় নতুনত্ব আনছে সাউথ বাংলা ব্যাংক
- আশরাফুল ইসলাম
- ২৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক ‘সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক লিমিটেড’ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে ব্যাপকভাবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ব্যাংকটির কার্যক্রমের সপ্তম বছরের মধ্যে সারা দেশে ৭৪টি শাখা, যা চলতি বছর শেষে ৮৩টিতে পৌঁছবে। একই সাথে ব্যাংকিং বুথ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গ্রাহকের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। আর্থিক খাতের নানান সঙ্কটের মধ্যেও ব্যাংকটি তার সাফল্য জয়যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। ব্যাংকের সব ধরনের আর্থিক সূচকেও ধারাবাহিক অগ্রগতি লক্ষ করা যায়। আর এই সফলতার পেছনে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো: গোলাম ফারুক-এর মেধাবী নেতৃত্বের অবদান সর্বজনবিদিত। এ ব্যাংকে যোগদানের আগে তিনি রাষ্ট্রীয় খাতের জনতা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন।
নয়া দিগন্ত : খেলাপি ঋণ কমানোর ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
মো: গোলাম ফারুক : এসবিএসি ব্যাংক গ্রাহকদের সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেছে। আমাদের আর্থিক সূচকগুলোর ধারাবাহিক অগ্রগতি রয়েছে, যা টেকসই উন্নয়নের মাপকাঠি। এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে ব্যাংকারদের আরো দায়িত্ববান ও যতেœর সাথে ব্যাংকিং করতে হবে। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশেষ করে খেলাপি ঋণ কমিয়ে ও ভালো গ্রাহক নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যাংকের সুদহার কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নামিয়ে আনতে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি আধুনিক ও যুগোপযোগী ইনোভেটিভ আইডিয়া জেনারেট করে নতুন প্রোডাক্ট চালু করেছি।
নয়া দিগন্ত : অর্থনীতিতে ব্যাংকগুলোর অবদান কী?
মো: গোলাম ফারুক : বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নে ব্যাংক খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ব্যাংকিং সেক্টরের মোট ঋণের বড় অংশই শিল্প খাতে বিতরণ করা হয়। ফলে বাংলাদেশের শিল্পের বিকাশে ব্যাংকিং সেক্টরের অবদান অপরিসীম। এ ছাড়া, শিল্পের পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, আমদানি-রফতানি ব্যবসার প্রসার, এসএমই খাতের উন্নয়ন, কৃষি খাতের উন্নয়ন, মহিলা উদ্যোক্তা ঋণ এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যাংকগুলো ব্যাপক অবদান রাখছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত রফতানির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৬৩৭ কোটি মার্কিন ডলার এবং আমদানির পরিমাণ ৬ হাজার ৬৬ কোটি ডলার। এ ছাড়া, রেমিট্যান্স প্রবাহের মাধ্যম হিসেবে ব্যাংকিং সেক্টরের অবদান অনস্বীকার্য। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার।
নয়া দিগন্ত : ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?
মো: গোলাম ফারুক : বর্তমানে ব্যাংকিং সেক্টরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে খেলাপি ঋণ আদায়। খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সরকার কর্তৃক অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩-এর আওতায় পরিচালিত মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ের স্বার্থে হাইকোর্টে পৃথক বেঞ্চ স্থাপন করতে হবে। ঋণ মঞ্জুরির আগে ঋণগ্রহীতার পূর্ববর্তী ইতিহাস ও অর্থনৈতিক অবস্থা এবং ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। এ ছাড়া, ব্যাংকিং সেক্টরকে আরো বেশি কার্যকর করতে ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। প্রতিটি ব্যাংকে নতুন নতুন ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রোডাক্ট চালু করতে হবে।
নয়া দিগন্ত : নয়-ছয় সুদহার আদৌ বাস্তবায়ন সম্ভব কি না?
মো: গোলাম ফারুক : এটি সত্য যে, সবক্ষেত্রে সুদের হার এখনো সিঙ্গেল ডিজিটে আনা সম্ভব হয়নি। আমি মনে করি, সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে আরো কিছু সময় প্রয়োজন। মার্চ-২০১৯ ভিত্তিক ব্যাংকিং সেক্টরের শ্রেণীকৃত ঋণের হার ১১.৮৭ শতাংশ, যা অনেক বেশি। শ্রেণীকৃত ঋণের উচ্চহার সিঙ্গেল ডিজিট সুদের হারের অন্যতম প্রধান বাধা। ফলে ব্যাংকগুলোকে উচ্চ শ্রেণীকৃত ঋণের ক্ষতি পুষিয়ে আশানুরূপ মুনাফা করার জন্য ঋণের ওপর উচ্চ সুদের হার ধার্য করতে হচ্ছে। অধিকন্তু বর্তমানের মুদ্রাস্ফীতি ৫ শতাংশের ওপরে। অর্থনীতিতে সঞ্চয়ের সুদের হার মুদ্রাস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হয়। এ ছাড়া, বিভিন্ন ব্যাংকে সরকারের রক্ষিত ডিপোজিটের সুদের হার ৬ শতাংশ নিশ্চিত করতে হবে এবং শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ যেকোনো মূল্যে কমিয়ে আনতে হবে। এভাবেই সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনা সম্ভব হতে পারে।
নয়া দিগন্ত : বিকল্প ব্যাংকিং কিভাবে করছেন?
মো: গোলাম ফারুক : আর্থিক অন্তর্ভুক্তকরণে এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন (এফআই) বুথ বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকের সেবা পৌঁছে দিতে ব্যাংকগুলো বুথ খুলে সেবা প্রদান করছে। এতে ব্যাপক জনসাধারণকে ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে। আমরা আমাদের ব্যাংকে চলতি বছরে ১৭টি এফআই বুথ খুলতে যাচ্ছি, যার মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাংকিংসেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম হব।
নয়া দিগন্ত : আপনার ব্যাংকের কার্যক্রম সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
মো: গোলাম ফারুক : ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে আমরা এ খাতকে প্রাধান্য দিয়ে ঋণ বিতরণ করে যাচ্ছি। আমরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের নতুন উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ বিতরণ করে থাকি। জুন ২০১৯ ভিত্তিক আমাদের ব্যাংকে এসএমই ঋণের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৬৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৮.৯০ শতাংশ। সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে পুনঃঅর্থায়ন চালু করেছে। কিন্তু ওই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে পুনঃঅর্থায়নের পরিমাণ বাড়াতে হবে।